শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে দুষ্কৃতকারীরা পালানোর রাস্তা পাবে না
বিমল চৌধুরী ॥

কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননাকে কেন্দ্র করে দেশের কোনো কোনো স্থানে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার প্রেক্ষিতে ১৯ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের পবিত্র কোরআন শরীফে সকল মানুষের সম্প্রীতির কথা বলা হয়েছে। মদিনা সনদে বলা হয়েছে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে। ধর্মীয় কারণে কোনো একজনের একটি অপরাধের জন্যে পুরো জাতি, সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী তার সাজা ভোগ করবে না। যা পবিত্র হাদিসেও বলা হয়েছে। তাহলে কারা আজ বিভিন্ন স্থানে ধর্মের দোহাই দিয়ে ধর্মের নামে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে? তাদেরকে শনাক্ত করতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে কারা কারা এর সাথে সম্পৃক্ত, কারা আমাদের মাঝে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আমাদের বুঝতে হবে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি। তাঁর লক্ষ্য ছিলো একটি স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে তোলা, যেখানে থাকবে না কোনো সাম্প্রদায়িকতা। থাকবে না জাতিতে জাতিতে ভেদাভেদ, থাকবে না কোনো বর্ণবৈষম্য। সকল ধর্মের মানুষ সমাধিকারের ভিত্তিতে বাস করবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যখন সকল ধর্মের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায়, দেশের উন্নয়নে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছেন, তখনই তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বাধাগ্রস্ত করা হয় দেশের উন্নয়ন ধারাকে। হ্যাঁ বা না ভোটের মাধ্যমে এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। যারা স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি, তারা আজ সকলেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ আজ যখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, অর্থনীতি, প্রযুক্তিসহ বিভিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই তারা এ উন্নয়ন ধারাকে বাধাগ্রস্ত নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। তাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্যেই ধর্মীয় উৎসবকে বেছে নিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আপনারা সকলেই জানেন, ২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচনকে বানচাল করার জন্যে একটি দল বলে বেড়াচ্ছে দেশে গণতন্ত্র নেই, মত প্রকাশের সুযোগ নেই। যদি তাই হয়, তাহলে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে কীভাবে? কীভাবে তারা টক-শোতে অংশ নিচ্ছে। জাতির পিতাকে হত্যা করার পর যারা এদেশের স্বাধীনতাকে মুছে ফেলে দিতে চেয়েছিলো, যারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একের পর এক হত্যা করেছে, মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে হ্যাঁ বা না ভোট করিয়েছে তারাই আজ গণতন্ত্রের কথা বলে! তাদের সম্পর্কে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।

তিনি সকলকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু প্রশাসনের উপর নির্ভর করে বসে থাকলে হবে না, আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। রক্ষা করতে হবে আমাদের ধর্মীয় উপাসনালয়। শনাক্ত করতে হবে দুষ্কৃতকারীদের। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে দুষ্কৃতকারীরা পালানোর রাস্তা পাবে না। তিনি সকল অপশক্তি রোধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার লক্ষ্যে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপ্রধানে সম্প্রীতি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার), জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, সহ-সভাপতি ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ওচমান গনি পাটওয়ারী, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদ, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ কবির আহম্মদ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ রণজিত রায় চৌধুরী পিপি, চাঁদপুর হরিবোলা সমিতির সভাপতি অজয় কুমার ভৌমিক, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, চান্দ্রাবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মোঃ আল-আমিন, দাসাদী কামিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মোঃ মাহিদী হাসান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নাট্য সংগঠক এমআর ইসলাম বাবু।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন সদর উপজেলা পরিষদ মসজিদের খতিব মুফতি মোঃ কেফায়েত উল্লাহ। পবিত্র গীতা পাঠ করেন দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের চীফ রিপোর্টার বিমল চৌধুরী। পবিত্র বাইবেল পাঠ করেন রেভারেন্ড মনিন্দ্র বর্মণ। পবিত্র ত্রিপিটক পাঠ করেন সাব-ইন্সপেক্টর বকুল বড়ুয়া। সম্প্রীতির সমাবেশ সকল ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে মিলনমেলায় রূপ নেয়।

সমাবেশে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর কাউন্সিলরবৃন্দ, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষবৃন্দ, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের পূজা পরিষদ নেতৃবৃন্দ, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়