প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
হাজীগঞ্জে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের টহল অব্যাহত
পুলিশের গুলিতে নিহতদের দাফন সম্পন্ন ॥ ৩ মামলায় আসামী ২ হাজার, আটক ৭ ॥ ফুটেজ দেখে হামলাকারী শনাক্তের চেষ্টা
হাজীগঞ্জে পূজা মণ্ডপে হামলায় নিহত ৪ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা ৩টি মামলায় ২ হাজার জনকে আসামী করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জন ইতিমধ্যে আটক রয়েছে। হামলার সময় বিভিন্ন জনের ধারণ করা মোবাইল ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ হামলাকারী শনাক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
|আরো খবর
গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজ পরবর্তী অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ উপজেলা জুড়ে টহল অব্যাহত রাখে। ১৪৪ ধারা জারি থাকার কারণে এসব বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। হামলায় আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রয়েছে বলে চাঁদপুর কণ্ঠকে জানিয়েছেন হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ হারুনুর রশিদ।
জানা যায়, হাজীগঞ্জে গত বুধবার রাতে যে ৪ জন মারা গেছেন, তাদের লাশ গত বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিহতদের লাশ তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে রান্ধুনীমুড়া গ্রামে নিজ নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় শামীম ও হৃদয়কে। বৃহস্পতিবার রাতে একই গ্রামের অপর নিহত আল আমিনকে তার মামার বাড়ি হাটিলা এলাকায় দাফন করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিহত বাবলুর লাশ তার গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৩টি মামলা দায়ের করেছে। এই মামলাগুলোতে আসামী করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার জনকে। এদের মধ্যে আটক রয়েছে ৭ জন। ২ হাজার আসামীর মধ্যে নামীয় ও অজ্ঞাতনামা আসামী রাখা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবার রাতে দুটি মিছিল একত্র হওয়া, বাজারের একাংশ প্রদক্ষিণ শেষে পূজা মণ্ডপে ও পুলিশকে হামলার সময়ের বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ পুলিশ সংগ্রহ করেছে। এই সকল ফুটেজের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর যাতে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি না হতে পারে সেজন্যে পুলিশসহ অন্য বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্তরা ছিলেন বিশেষ সতর্ক অবস্থানে। এদিন অধিক মুসুল্লির সমাগমে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ছিলো চোখে পড়ার মতো।
নামাজের পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী মাঈনুদ্দিন, পৌর মেয়র আ.স.ম. মাহবুব-উল আলম লিপনসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারাও মাঠে ছিলেন। তারা ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিদের সাথে কথা বলেন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার জানান, উপজেলায় যাতে নতুন করে কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা না ঘটে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয় সেজন্যে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় ও পরামর্শক্রমে দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের পাশাপাশি দু প্লাটুন বিজিবি ও র্যাব সদস্য মোতায়েন রয়েছে। ঘটনার পর থেকে স্বল্প সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং সার্কেল অফিসার (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার)-এর নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশসহ হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ সব জায়গায় তৎপর রয়েছে। জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও কাজ করছেন। এছাড়াও প্রতিটি মন্দিরের নিরাপত্তায় পুলিশ ও আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার দিনের বেলা কুমিল্লা শহরের নানুয়ার দিঘিরপাড়ের একটি দুর্গা পূজার মণ্ডপে হনুমান মূর্তির কোলে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার রাত অনুমানিক ৮টার দিকে হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কের দক্ষিণ দিক থেকে হাজীগঞ্জ বাজারের দিকে একটি মিছিল আসে।
মিছিলটি হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারস্থ শ্রীশ্রী রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়ায় অবস্থিত পূজা মণ্ডপের সামনে আসলে মিছিল থেকে কে বা কারা পূজা মণ্ডপের গেটের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে। এতে ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ মিছিলকারীদের প্রতিরোধের চেষ্টা করলে পুলিশের উপর ইটপাটকেল ছুড়ে মারে মিছিলকারীরা।
এ সময় মিছিলকারীরা পুলিশের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালালে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সৃষ্টি হয় এবং পুলিশ প্রথমে উপরে ও আত্মরক্ষার্থে নিচে গুলি ছোড়ে। এতে ৪ জন নিহত, অপর ৪ জন আহতসহ ১৭ পুলিশ আহত হয়।