প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২১, ০১:৫৪
হাজীগঞ্জের পূজামন্ডপগুলোতে হামলা
ভিডিও ক্লিপ আর ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে তদন্ত এগুচ্ছে
গত ১৩ অক্টোবর হাজীগঞ্জের পূজা মন্ডপগুলোতে হামলা সময়ের বেশ কিছু ভিডিও ক্লিপ পুলিশের হাতে এসেছে। একই সাথে গুজব ছড়ানো বেশ কয়েকটি ফেইজবুক পেজ পুলিশের তদন্তের জন্য তুরুপের তাস হয়ে সামনে এসেছে। মূলত পুলিশ এই সকল ভিডিও ক্লিপ দেখে আসামী সনাক্ত ও আটক করছে। আবার গুজব ছড়ানো,মিছিলের ডাক দেয়া ফেইজবুক পেজগুলো সনাক্ত করা হয়েছে। গুজব ছড়ানো বেশিরভাগ পেজগুলো দেশের বাইরে থেকে চালানো হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। মিছিল ও হামলায় অংশ নেয়া এক মাদ্রাসা শিক্ষককে ভিডিও দেখে আটক করার পর আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে এই শিক্ষক। যাদেরকে ভিডিও ক্লিপে দেখা যাবে তাদেরকে আইনের আনা হবে ও সাধারন কাউকে হয়রানি করা হবে না বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( হাজীগঞ্জ সার্কেল) সোহেল মাহমুদ বিপিএম।
|আরো খবর
জানা যায়, গত ১৩ অক্টোবর ছিলো হিন্দুধর্মালম্বীদের দূর্গা পূজার সপ্তমী। সেদিন কুমিল্লায় হনুমানের পায়ে কোরআন রাখাকে কেন্দ্র করে বিকেলে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার হৃদয় নামের এক যুবকসহ বেশ কয়েকজন তাদের ফেইজবুক পেজে মিছিলের ডাক দেন। সেই পোষ্টের কয়েক ঘন্টা পর সন্ধ্যায় পৌর এলাকার রান্ধুনীমুড়া থেকে একদল কিশোর মিছিল নিয়ে হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারে আসে। সেই মিছিলটি হাজীগঞ্জ বাজারস্থ শ্রী শ্রী রাজা লক্ষী নারায়ন জিউর আখড়ার গেটের সামনে দিয়ে কয়েকবার প্রদক্ষিন করে। মিছিলের শেষ প্রদক্ষিনকালে মন্দিরের গেট অতিক্রম করার সময় মন্দির গেট লক্ষ করে পাথর ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে মিছিলকারীরা। এ সময় মন্দিরের গেটের বাইরে কয়েকজন পুলিশসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ হামলাকারীদের নিবৃত করার ব্যার্থ চেষ্টা চালায়। মিছিলকারীরা মারমুখী হয়ে উঠলে পুলিশ এক পর্যায়ে গুলি চালায়। এই ঘটনার পর পর বাজারের ৪ টি পূজা মন্ডপ ভাংচুর করে মিছিলে অংশগ্রহনকারীরা। এদিকে আখড়ার সামনে মিছিলকারীরা গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন পূজা মন্ডপসহ বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাংচুর করে দুর্বৃত্তরা। এতে করে মোট ১৪ টি মন্দির ভাংচুরের শিকার হয় ও ৬ টি মন্দির বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় বলে পুলিশ দাবী করে।
রাতের বেলা মন্দির ভাংচুরের ঘটনায় ঘটার পর থেকে পুলিশ মিছিলকারীসহ পূজা মন্ডপ ভাংচুরে অংশগ্রহনকারীদের খুঁজতে বিভিন্ন সূত্রের সন্ধানে নামে। মন্দিরে মন্দিরে হামলাকারী ও মিছিলে অংশগ্রহনকারীদের সনাক্ত করতে পুলিশ প্রথম সূত্র পায় ভিডিও ফুটেজের। ভিডিও ফুটেজের মধ্যে বিভিন্ন জনের মোবাইলে ধারন করা মিছিলের ও মিছিল শেষে হামলার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। এ ছাড়া হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নিজস্ব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও পূজা মন্ডপগুলোতে স্থাপনকৃত ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ।
এ ছাড়া ঘটনার দিন বিকেল থেকে যারা নামে বে-নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে গুজব ও উসকানিমূলক পোষ্ট দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে তাদের পরিচিতি বের করার তদন্ত চালাচ্ছে। এ ছাড়া ও ফুটেজের বাইরে ও ফেইজবুক পোষ্টের বাইরে উস্কানিদাতা একটি চক্রকে সনাক্তের কাজ এগিয়ে চলছে বলে পুলিশ জানায়।
সংগৃীত ভিডিও ফুটেজ দেখে এখন পুলিশ আসামী সনাক্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আসামী সনাক্তের সূত্র ধরে পুলিশ সোমবার সকাল পর্যন্ত ৫৪ জনকে আটক করেছে। আবার আটককৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অনেকের নাম প্রকাশ্যে আসছে। আটককৃতদের মধ্যে জেলার শাহরাস্তি উপজেলার ভোলদিঘী ফাজিল মাদ্রাসার আরবী শিক্ষক কামাল উদ্দিন আব্বাসীকে আটক করা হয়। কামাল উদ্দিন আব্বাসী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধি দিয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজনকে ইতিমধ্যে রিমান্ডে এনেছে পুলিশ।পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১৩ হামলায় ঘটনায় ১৪ টি মন্দির ভাংচুরসহ ৫ জন নিহত হয়েছে। পুলিশের দায়ের করা দুটি ও ক্ষতিগ্রস্থদের দায়ের করা ৮ টি মিলিয়ে মোট ১০ টি মামলায় আসামী করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার জনকে। এর মধ্যে সোমবার সকাল পর্যন্ত ৫৪ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের কয়েকজনের রিমান্ড চলছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) সোহেল মাহমুদ বিপিএম জানান, আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদেরেক আইনের আওতায় আনছি। আবার আটককৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নতুন নতুন নাম সামনে চলে আসছে। ফেইজবুক পোষ্ট দেয়াকারীদের বিষয়ে বলেন, ইতিমধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি আইডি সনাক্ত করেছি যেগুলো দেশের বাইরে থেকে প্রচার করা হচ্ছে। ফেইজবুকে অপপ্রচারকারীদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য ১৩ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে হাজীগঞ্জ বাজারে একটি মন্দিরে হামলা করে একদল দুর্বৃত্ত। ওই ঘটনায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করলে হামলাকারীদের সঙ্গে সংর্ঘষ হয়। এতে সবমিলিয়ে ৫ জন মারা গেছে।