প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে এবার চাঁদপুর শহরকে যানজট মুক্ত করতে যাচ্ছে চাঁদপুর পৌরসভা। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে কাজও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ‘নিয়মের মধ্যে এনে সকল অনিয়ম দূর করা’ এই ভাবনা থেকে বাস্তবধর্মী ও কার্যকর বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ মাঠে নেমেছে। প্রথমত অবৈধ সকল ইজিবাইক শনাক্তকরণ, এরপর অবৈধ ইজিবাইকের বিরুদ্ধে অভিযান। আর বৈধ-অবৈধ শনাক্তকরণে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এর দ্বারা অবৈধ গাড়ি সহজেই শনাক্ত হয়ে যাবে। এই ডিজিটাল পদ্ধতি যদি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে চাঁদপুর শহরে কয়েক হাজার অবৈধ ইজিবাইক চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। যেগুলো বর্তমানে পুরো শহরটাকে স্তব্ধ করে রেখেছে।
চাঁদপুর শহরে যানজট সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছিলো। অসহনীয় যানজটে শহরবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আর এই যানজটের মূল কারণ হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত অসংখ্য ইজিবাইক শহরে চলাচল করা। পৌরসভা থেকে ইজিবাইকের লাইসেন্স দেয়া আছে ২ হাজার ৮শ’। কিন্তু শহরে ইজিবাইক চলাচল করছে এর তিনগুণেরও বেশি। আর এসব ইজিবাইক চলাচলে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা মানা হয় না। রাস্তার মাঝখানসহ যত্রতত্র গাড়ি রেখে পুরো শহরকে অচল করে রাখা হয়।
এই অসহনীয় যানজট থেকে শহরবাসীকে মুক্তি দিতে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল তাঁর নিজস্ব আইডিয়া থেকে বের করলেন কয়েকটি বাস্তবধর্মী উদ্যোগ। এর একটি হচ্ছে অবৈধ ইজিবাইক শনাক্তকরণে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার। অপরটি হচ্ছে বৈধ গাড়ির লাইসেন্স নাম্বারের জোড়-বিজোড় সংখ্যার গাড়ি শিফটওয়ারি রাস্তায় চলাচল। তিনি ইজিবাইকের জন্যে ডিজিটাল নম্বর প্লেট প্রস্তুত করলেন। এই প্লেটে মোবাইলের ক্যামেরা অন করে ধরলেই শনাক্ত হয়ে যাবে এটা বৈধ কি অবৈধ। বৈধ হলে ক্যামেরায় তখন ভেসে উঠবে যার নামে লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে তার ছবিসহ সব তথ্য। এভাবে শনাক্ত করে করে সকল অবৈধ ইজিবাইক জব্দ করে ফেলা হবে এবং এর চালকসহ মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগামী ২০ অক্টোবর থেকে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ইজিবাইক আটকে অভিযানে নামবে চাঁদপুর পৌরসভা। এর আগে লাইসেন্স নবায়নকৃত সকল ইজিবাইককে ডিজিটাল নম্বর প্লেট গাড়িতে লাগিয়ে ফেলতে হবে। এ সংক্রান্ত বিশেষ ঘোষণার মাইকিংও করা হয় গতকাল চাঁদপুর শহরে। ঘোষণায় বলা হয়-যারা ইজিবাইকের লাইসেন্স নবায়ন করেছেন, তাদেরকে আগামী তিনদিনের মধ্যে নম্বর প্লেট সংগ্রহ করতে হবে। এরপর ইস্যুকৃত নম্বর প্লেট বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর আগামী ২০ অক্টোবর থেকে অবৈধ ইজিবাইক আটক অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং লাইসেন্সবিহীন অবৈধ গাড়ি আটকসহ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যা পূর্বেই ইস্যুকৃত চাঁদপুর পৌরসভার লাইসেন্স শাখা সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার লাইসেন্সকৃত ইজিবাইকের সংখ্যা হচ্ছে ২৮০০। যা পূর্বেই ইস্যুকৃত। বর্তমান মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল লাইসেন্স নবায়নের জন্যে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেন এবং শুধুমাত্র নবায়নকৃত গাড়ির জন্যে ডিজিটাল নম্বর প্লেট দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সে লক্ষ্যে কাজও করা হয়ে গেছে। জানা গেছে, লাইসেন্স নবায়নের সর্বশেষ তারিখ ছিলো ৫ অক্টোবর। সেদিন পর্যন্ত ২৬২৮টি ইজিবাইকের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে। তাই এখন পূর্বে লাইসেন্স ইস্যু করা ২৮০০ লাইসেন্স থেকেও বাদ পড়ে গেলো ১৭২টি। এই ১৭২সহ কয়েক হাজার অবৈধ ইজিবাইক আটকে ২০ অক্টোবর থেকে অভিযানে নামবে পৌর কর্তৃপক্ষ।
এই সার্বিক বিষয়ে কথা হয় চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েলের সাথে। তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিলো নতুন করে একটা ইজিবাইকেরও লাইসেন্স দেয়া হবে না। আমি সে অঙ্গীকার পুরোপুরি রক্ষা করেছি। এখন ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে অবৈধ ইজিবাইক শনাক্ত করে সেগুলো জব্দ করার অভিযান শুরু করবো ২০ অক্টোবর থেকে। অবৈধ গাড়ি শহরে চলাচল যখন বন্ধ হয়ে যাবে, তখন বৈধ গাড়িগুলোকে জোড়-বিজোড় সংখ্যার মধ্যে এনে এগুলো রাস্তায় চলাচলে শিফটওয়ারী করে দেয়া হবে। তখন আর শহরে কোনো যানজট থাকবে না।
তিনি আরো জানান, আমরা আপাতত শহরের কয়েকটি রাস্তায় পৌরসভার মাস্টাররোল থেকে কয়েকজন কর্মী কাজে লাগিয়ে দিয়েছি ওই রাস্তায় যেনো কোনো ধরনের যানজট না থাকে, যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে বা স্ট্যান্ড করে যেনো বিশৃঙ্খলা করা না হয়। ট্রাফিক কাজে সহায়তাকারী এই সংখ্যা পরবর্তীতে আরো বাড়িয়ে পুরো শহরের সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা করা হবে। একই সাথে সড়কের পাশ থেকে সকল ভ্যানগাড়ি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখন আর শহরের প্রধান সড়কের পাশে কোনো ভ্যানগাড়ি দেখা যায় না।