প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ষড়যন্ত্রের শিকার ফরক্কাবাদ হাইস্কুলে নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ
হাসিনা সরকারের পতনের প্রায় বছরখানেক আগে চাঁদপুর সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ফরাক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়া বিধি মোতাবেক সম্পন্ন হলেও এমপিও নিয়ে খুবই বেকাদায় আছেন প্রধান শিক্ষক পদে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত বহরিয়া হাই স্কুল থেকে আগত সিনিয়র শিক্ষক মোঃ ইলিয়াছ। তিনি নানা ষড়যন্ত্রের শিকার বলে অভিযোগ উঠেছে । তিনি এক বছরের অধিক সময় পূর্বে নিয়োগ পেলেও তার এমপিও স্থানান্তর হয়নি এখনো। বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বালিয়া ইউনিয়নে বাড়ি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর। ফরাক্কাবাদ স্কুল ও কলেজে রয়েছে তার আধিপত্য। শক্তিশালী একটি বলয় রয়েছে এ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
নিয়োগকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের তৎকালীন কমিটির সভাপতি এম আর শামীম অবৈধ সভাপতি বলে অভিযোগ তুলে উচ্চ আদালতে মামলা করেন সুজিত রায় নন্দী ও বালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হান্নান মিজির ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত স্কুলের অভিভাবক সদস্য মো. আবু হাসান খান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এম আর শামীম ছিলেন চাঁদপুর সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির ঘনিষ্ঠ জন। যে কারণে দুবার সভাপতি মনোনীত হন শামীম। তবে তাকে সভাপতি হিসেবে মেনে নিতে পারেনি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতা সুজিত রায় নন্দী ও তার গ্রুপের চিহ্নিত লোকজন। পরের বার সভাপতি হয়ে মো. ইলিয়াছকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন শামীম কমিটি।
উচ্চ আদালতে মামলা করা পক্ষের অভিযোগ, সভাপতি যেহেতু অবৈধ, সে কারণে প্রধান শিক্ষক নিয়োগও অবৈধ। মামলাসহ এসব কারণে প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ বহু চেষ্টা- তদ্বির করেও তার এমপিও স্থানান্তর করতে পারেননি। তবে চাঁদপুর শিক্ষা অফিস থেকে তার কাগজপত্র নিয়ম মোতাবেক কুমিল্লা আঞ্চলিক অফিসে প্রেরণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়।
জানা গেছে, সুজিত রায় নন্দীর লোক, বিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক আবু হাসান খানের মামলার কারণে এই বিদ্যালয়ের কমিটির যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত করে উচ্চ আদালত। ফলে মাউশির নিয়মানুসারে মামলা চলাকালীন সময়ে কোনো শিক্ষক অথবা কর্মচারী নিয়োগ দেয়া যাবে না। এমন পরিস্থিতির শিকার হন প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ।
এদিকে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ে যেতে পারছেন না প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ। ৬ আগস্ট থেকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ তালাবদ্ধ করে দেয় বহিরাগত লোকজন।
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি এম আর শামীম বলেন, আমি ঢাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং এফবিসিসিআইয়ের সদস্য। আমি রাজনৈতিক দলের না। আমি বালিয়ার সন্তান। ফরক্কাবাদ হাই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র এবং স্থায়ী দাতা সদস্য। আমি দুবার সভাপতি ছিলাম। আমার সাথে দীপু মনি ও তার ভাইয়ের স্কুলের স্বার্থে সুসম্পর্ক থাকাটাই স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, আমি যেই স্কুলের ছাত্র সেই স্কুলে ভালো শিক্ষার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা ছিল আমার। যারা দীর্ঘদিন স্কুলের লুটপাট-অনিয়মের সাথে জড়িত ছিলো তারা সুবিধা না পেয়ে এবং আধিপত্য বিস্তার করতে না পারায় আমার সভাপতির কাজে নানাভাবে বিঘ্ন ঘটিয়েছে, তারা মামলাও করেছে।
চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসার প্রাণ কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, এই বিদ্যালয়ের বিষয়ে অনেক অভিযোগ। প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পর তার এমপিও করতে দেরি হচ্ছে। কারণ মামলা আছে। প্রধান শিক্ষকের কাগজপত্র সঠিক থাকলে আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠাতে বাধ্য। কাজের জায়গায় আমরা পুরোপুরি স্বচ্ছ।