প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
গল্লাক কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ
৫ আগস্ট থেকে নিরুদ্দেশ ॥ পদত্যাগ দাবি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরাসরি বিরোধিতা করা, আন্দোলন করলে অধ্যক্ষ নিজে বাদী হয়ে ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা করা, ডিসিকে দিয়ে ছাত্রদের হয়রানি করার হুমকি, কলেজে আওয়ামী রাজনীতি ঢুকিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা, কলেজ ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করা, কলেজ ফান্ডের টাকা দিয়ে আওয়ামী রাজনীতির প্রোগ্রাম করা, কলেজের বিভিন্ন পদে নিয়োগ বাণিজ্য, হিন্দু বলে অন্য ধর্মের লোকদের সাথে খারাপ আচরণ করা, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষকদের সাথে অশোভন আচরণ, মান্যগণ্য অভিভাবকদের সাথে মনের মিল না হলে খারাপ আচরণ করা, মুসলিম বিদ্বেষী আচরণ করা, কলেজ মাঠে যুব শ্রেণি আয়োজিত বাৎসরিক মাহফিল বন্ধ করে দেয়া, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলন যেন না হয় তা বন্ধ করতে সকাল ৯টা হতে বিকেল পর্যন্ত কলেজে পুলিশ এনে রাখা, এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা, প্রমাণসহ নারী কেলেঙ্কারি, ছাত্রীদের সাথে শারীরিক ইভটিজিং করাসহ নানা অভিযোগে ফরিদগঞ্জের গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হরিপদ দাসের পদত্যাগ চাইছে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, কলেজের অনেক সহকারী অধ্যাপক ও কর্মচারীরা।
অভিযোগের আলোকে কলেজে গেলে জানা যায়, অধ্যক্ষ হরিপদ দাস গত ৫ আগস্ট থেকেই নিরুদ্দেশ। তাকে মোবাইল করেও পাওয়া যায় না। এখন পর্যন্ত তিনি কলেজে আসেন না এবং কলেজে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাউকে দায়িত্ব পালন করার অনুমতি দেন না। এমনকি তিনি এখন পর্যন্ত কোথায় আছেন তাও জানান না। কোনো শিক্ষকের সাথে মোবাইল ফোনেও কথা বলেন না।
কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মোঃ রাসেল হোসেন, ওমর ফারুক, নাহিদ হোসেন, তাহমিদ হোসেন, মোঃ ফাহিম, আকলিমা আক্তার, আসমা আক্তারসহ আরো অনেকে উপরোল্লিখিত অভিযোগগুলো আরো বিস্তারিত এই প্রতিনিধির কাছে প্রকাশ করেন এবং তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলোর অনেক কিছুরই ভিডিও প্রমাণসহ মোবাইলে রেকর্ড আছে বলে জানান। তারা আরো বলেন, অধ্যক্ষ হরিপদ দাসের পদত্যাগের দাবিতে ইতিপূর্বে আমরা কলেজে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছি এবং আগামী রোববার থেকে তার বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন শুরু হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে তারা জানান।
অভিভাবকদের মধ্যে মোবারক হোসেন কালু, ওমর ফারুক, মামুন ভূঁইয়া, কবির জমাদার, মিজানুর রহমানসহ আরো অনেকে বলেন, উপরের অভিযোগগুলো ছাড়াও হরিপদ দাসের বিরুদ্ধে এমন কিছু ঘটনা আছে, যা উল্লেখ করলে অন্যান্য শিক্ষকের অপমান হবে। তারা বলেন, হরিপদ দাসের নিয়োগটাই ছিল অবৈধ। তিনি শিক্ষক নামের কলঙ্ক! তাকে গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বলতে খুবই লজ্জাবোধ করি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক সহকারী অধ্যাপক বলেন, উনার অধ্যক্ষ পিরিয়ডে আমরা কখনো স্বাধীনভাবে কোনো কথা বলতে পারি নি, মত প্রকাশ করতে পারি নি। অভিযোগগুলোর বিষয়ে আমরা বললে হয়ত অনেকেই বিশ্বাস করবে না। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা যে অভিযোগগুলো উল্লেখ করেছেন, তা কোনোভাবেই ফেলে দেয়ার মতো নয়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আল আমিন জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সময় অত্র কলেজের অধ্যক্ষ হরিপদ দাস ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকাবাসীর সাথে যে আচরণ করেছেন, তাতে তাকে কোনো রকমেই ছাড় দেয়া যায় না। আমাদের অত্র অঞ্চলের স্বনামধন্য এই কলেজটিকে হরিপদ দাস এবং তার ভাগিনা সজীব দত্ত নিজেদের মনমতো পরিচালনা করতে গিয়ে কলেজটির সুনাম নষ্ট করা ছাড়াও এলাকার দুর্নাম করেছেন। ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের অভিযোগগুলো যথার্থ। অধ্যক্ষ হরিপদ দাস ও তার ভাগিনার বিরুদ্ধে উপরের অভিযোগগুলো প্রমাণিত । তাই তারা গত ৫ আগস্ট থেকেই এলাকা থেকে নিরুদ্দেশ। বিষয়গুলো আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে জানিয়েছি।