বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৪, ০০:০০

মায়ের অনুপ্রেরণায় আজ উচ্চশিক্ষিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাইফুল

অনলাইন ডেস্ক
মায়ের অনুপ্রেরণায় আজ উচ্চশিক্ষিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাইফুল

‘আমি চোখে দেখি না। দুই বছর বয়সে অসুস্থ হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারাই। তারপর থেকে আমি মায়ের চোখেই পৃথিবী দেখি। মায়ের সাহায্যে আজ আমি মাস্টার্স শেষ করেছি। আমার এই সফলতার পেছনে আমার মায়ের অবদান বেশি। আমার মা আমাকে সব সময় পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ জুগিয়েছেন। সাহস দিয়ে বন্ধুর মতো সব সময় আমার পাশে আছে মা।’

গণমাধ্যমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করছিলেন সাইফুল ইসলাম (২৬)। তিনি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৮নং দক্ষিণ পাইকপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কড়ইতলী গ্রামের মিয়াজী বাড়ির আবুল কালাম ও মা রাশেদা বেগম দম্পতির সন্তান। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সাইফুল তৃতীয়। তাদের মধ্যে সাইফুলই একমাত্র উচ্চশিক্ষিত। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর থেকে মা আমাকে খাইয়ে দেন, গোসল করিয়ে দেন। বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান। শিক্ষা জীবন শুরু হলে মা আমাকে স্কুলে ভর্তি করান। স্কুল, কলেজ সব জায়গায় আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যান। আমার সবকিছুর পেছনে মায়ের অবদান অনেক বেশি।

সাইফুল বলেন, হঠাৎ করে চোখে সমস্যা হয়েছিল। ভুল চিকিৎসা এবং অসাবধানতার কারণে দুই চোখ নষ্ট হয়ে যায়। মা চিন্তা করতেন আমাকে মাদরাসায় লেখাপড়া করাবেন। কিন্তু প্রতিবন্ধীদের মাদরাসায় পড়ালেখার ব্যবস্থা ছিল না। তাই লক্ষ্মীপুর জেলায় সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় স্কুলে ভর্তি হই। সেখান থেকে আজ এই অবস্থানে এসেছি।

তিনি আরো বলেন, আমার মা-বাবা আগের মতো পরিশ্রম করতে পারেন না। এখন তাদের প্রতি আমার দায়িত্ব পালন করা উচিত। তাই এখন আমার একটি ভালো চাকরি প্রয়োজন। চাকরি পেলে তাদের সহযোগিতা করতে পারবো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে সাইফুল ইসলামের জন্ম। তিনি জন্মের দুই বছর পর ২০০১ সালে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারান। সেই থেকে আর তার চোখের দৃষ্টি ফিরে আসেনি। সাইফুল ২০০৫ সালে ফরিদগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় আনন্দ বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ২০১৫ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় দালাল বাজার এন কে হাই স্কুল থেকে এ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর রাজধানীর মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিকে এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হন। সাইফুল ঢাকা বিভাগ থেকে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পান। ২০২১ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে অনার্স পাস করেন। বর্তমানে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছেন।

সাইফুলের মা রাশেদা বেগম বলেন, আমার অবস্থান থেকে ছেলেকে পড়ালেখা করানোর চেষ্টা করেছি। অন্ধ হওয়ার পর তাকে ধরে ধরে খাইয়ে দিয়েছি। সব কাজে সহযোগিতা করেছি। পড়াশোনা করিয়েছি।

বাবা আবুল কালাম বলেন, আমার সাইফুল তার মায়ের সহযোগিতায় উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে। আমি একজন দিনমজুর। তার মা তাকে সহযোগিতা না করলে সে উচ্চশিক্ষিত হতে পারতো না।

তাদের প্রতিবেশী আবুল বাশার মিজি বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছেলে সাইফুলকে নিয়ে সব ধরনের কষ্ট করেছেন তার মা। তার দুই বছর বয়সে অসুস্থ হয়ে চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তারপর ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত তাকে খাওয়ানো, পরানোসহ যাবতীয় করেন তার মা।

আরেক প্রতিবেশী আলেয়া বেগম বলেন, আমাদের চাচী সাইফুলকে নিয়ে অনেক কষ্ট করেছেন। সাইফুলের চোখ নষ্ট হওয়ার পর তাকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়া থেকে ভাত খাইয়ে দেওয়া সব করেছেন। পড়ালেখার জন্যে মানুষের কাছে ছুটে বেড়াতেন। এখন সাইফুল উচ্চশিক্ষিত।

৮নং দক্ষিণ পাইকপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হোসেন আহম্মদ রাজন বলেন, অন্ধ প্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলামের মাকে অনেক ধন্যবাদ। সে তার অন্ধ ছেলেকে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়ালেখা করিয়েছেন। তিনি অনেক কষ্ট করেছেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে ছেলেটি আজ উচ্চশিক্ষিত। তার প্রতি শ্রদ্ধা রইলো। সাইফুলের পাশে এগিয়ে আসতে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ করছি। আমাদের পরিষদ থেকে সাইফুলকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে চেষ্টা করবো। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়