প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৪, ০০:০০
সর্ষের ভেতরে ভূতের বসবাস!
হাইমচরে মেঘনা নদীতে নিষিদ্ধ জালের সয়লাব ॥ ধ্বংস হচ্ছে মৎস্য সম্পদ
হাইমচরের মেঘনা নদীতে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নিধন করছে অসাধু জেলেরা। প্রতিদিন নিধন করা হয় কয়েক কোটি মাছের পোনা। বাঁধা জাল, গচি জাল, চায়না জালসহ নিষিদ্ধ জালগুলো নদীতে ফেলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নিধন করে চরভৈরবী মাছের আড়তে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হয়। এতে ধ্বংস হচ্ছে মৎস্য সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই মেঘনায় এ নিষিদ্ধ জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নিধন করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে মৎস্য পাড়ায় রয়েছে বেশ সমালোচনা।
চরভৈরবী ইউনিয়নের ক’জন জেলে জানান, হাইমচর উপজেলার সবচে’ বড় মাছের আড়ত হচ্ছে চরভৈরবী। এখানের বেশিরভাগ আড়তদার প্রভাবশালী। নজরুল ইসলাম নজু ফকির, হুমায়ুন প্রধানীয়া, বিল্লাল বেপারী, সৈয়দ চকিদার, ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল চোকদারের আড়তে প্রতিদিন ভোর ৬টায় নিষিদ্ধ জালে নিধনকৃত মাছের পোনাগুলো বিক্রি করা হয়। এই আড়তদাররা নীলকমল নৌপুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাদের আয়কৃত টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারার মাধ্যমে নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই ভাগ-বাঁটোয়ারার বিষয়টি সবাই জানে, চায়ের দোকানে পাড়া মহল্লায় আলোচনা হয়। কিন্তু ভয়ে কেউ কিছু বলে না। এ লোকগুলো যদি জানে আমরা আপনাদের তথ্য দিয়েছি তাহলে বাড়ি ঘরে থাকতে দিবে না। আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করবে। তাদের অপকর্মের কথা সবাই জানে, তবে ভয়ে মুখ খুলে না। বলেই কী হবে আর আপনারা লেখলেই কী হবে, মাছের পোনা নিধন কখনোই বন্ধ হবে না। কারণ সরিষার ভেতরে ভূতের বসবাস।
চরভৈরবীর আড়তদার নজু ফকির বলেন, আমার আড়তে গচি জালের মাছ বিক্রি হয়। কিন্তু বাঁধা জাল কিংবা চায়না জালের মাছ বিক্রি হয় না।
ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ জুবায়ের শিমুল জানান, আমাদের চরভৈরবী আড়তে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে নিধনকৃত মাছের পোনা বিক্রির সংবাদ পেয়ে আড়তে গিয়ে সকল আড়তদার ও জেলেদেরকে মাছের পোনা নিধন ও বিক্রির জন্যে নিষেধ করেছি। আমি মাছের পোনা নিধনকারী জেলেদের তালিকা সংগ্রহ করেছি। উপজেলা প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করবে।
নীলকমল নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, গতকাল রাতে নদীতে অভিযান পরিচালনা করেছি। নদীতে জোয়ার থাকায় কোনো গচি জাল পাই নি। বাঁধা জালের নৌকাগুলো আমাদের দেখে পালিয়ে যায়। আমরা এ সকল নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ নিধন বন্ধ করার জন্যে আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহবুবুর রহমান জানান, নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছের পোনা নিধনের সংবাদ পেয়ে নদীতে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু গচি জাল উদ্ধার করে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছি। নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা রক্ষায় আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।