প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির ওরিয়েন্টেশন, অভিভাবক সমাবেশ ও নবপর্যায়ের ক্লাস উদ্বোধন
যুক্তির শক্তির চেয়ে অস্ত্রের শক্তি ঢের দুর্বল
-----আলহাজ্ব ওচমান গনি পাটওয়ারী
ভাষার জড়তা দূর করতে বিতর্ক শেখার বিকল্প নেই : অভিভাবক বক্তাগণ
বিমল চৌধুরী ॥ ‘যুক্তিতে মুক্তি পাক অবরুদ্ধ তারুণ্য’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির (সিডিএ) ব্যাপক আয়োজনে নবপর্যায়ে প্রশিক্ষণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন ও অভিভাবক সমাবেশ এবং নবপর্যায়ের ক্লাস উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে চাঁদপুর শহরের স্টেডিয়াম রোডস্থ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল প্রাঙ্গণে গতকাল ২৬ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেল ৩টায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওচমান গনি পাটওয়ারী। তিনি বিতর্ক শিক্ষায় চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির ব্যাপকতায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, যদি শৈশবে ফিরে যেতে পারতাম তাহলে বিতর্ক একাডেমিতে ভর্তি হতাম। আজ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণে যে সকল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে আমাদের সময় তা ছিল না। ফলে আমাদের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও আমরা অনেক কিছু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আজ অনেকেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও ভালোভাবে কথা বলতে বা উপস্থাপন করতে পারেন না। এই না পারার কারণ তার অনভ্যাস। আজ চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমি শিক্ষার্থীদের বিতর্ক শিক্ষা প্রদানে যে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তাতে সকল অভিভাবকের এগিয়ে আসা প্রয়োজন তাদের সন্তানদের জন্যে। মনে রাখতে হবে বিতর্ক চর্চার কোন বিকল্প নেই। বিতর্ক কেবল নিজের যুক্তি তুলে ধরতে সহযোগিতা করে না, বিতর্কের মাধ্যমে প্রজন্মকে আমরা পরমতসহিষ্ণু করে গড়ে তুলতে পারি। আজকের পৃথিবীতে পরমতসহিষ্ণুতার বড় অভাব। এ কারণেই পেশী আর অস্ত্রের ঝনঝনানি বেশি। তিনি যুক্তির শক্তির চেয়ে অস্ত্রের শক্তি দুর্বল উল্লেখ করে বলেন, প্রজন্মকে যেমন যুগোপযোগী শিক্ষা ও নৈতিকতায় গড়ে তুলতে হবে, তেমনি তার মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক যুক্তির চর্চাও গড়ে তুলতে হবে। তিনি সন্তানদেরকে পরিপূর্ণ বাঙালি হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে আরো বলেন, এই বাংলা ভাষার জন্যে আমরা রক্ত দিয়েছি। আমাদের সন্তানদেরকে এমন কোনো শিক্ষা দিতে চাই না, যে শিক্ষার দ্বারা সন্তানরা তাদের পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবে। আমরা আমাদের সন্তানদেরকে দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমরা জাতির পিতার কথা ভুলে গেলে চলবে না, জাতির পিতার অনবদ্য অবদানের কথা আমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে। যদি ভুলে যাই তাহলে আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে আখ্যায়িত হবো। তিনি জাতির পিতার হত্যার কথা তুলে ধরে বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কারণে আজও আমরা বিদেশীদের কাছে কলঙ্কিত জাতি হিসেবে পরিচয় বহন করছি। তিনি জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
চাঁদপুর জেলা শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, আমন্ত্রিত অতিথি, শুভানুধ্যায়ী ও প্রশিক্ষকদের ব্যাপক উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির (সিডিএ) সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা রোটারিয়ান কাজী শাহাদাত।
চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির উপাধ্যক্ষ রাসেল হাসানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ নূর খান। অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক ছিলেন একাডেমির অধ্যক্ষ ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া। আরো বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের উপাধ্যক্ষ রেজাউল করিম, আল আমিন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক শাহ আলম ও বিতর্ক একাডেমীর প্রশিক্ষক আবৃত্তিকার সামীম আহমেদ খান।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে উন্মুক্ত আলোচনায় প্রশিক্ষণার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে মুক্তমত প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোঃ হাফিজুর রহমান, ব্যবসায়ী পারভেজ মাহমুদ খান, প্রধান শিক্ষক জুলফুর রহমান, সোহরাব হোসেন, শিক্ষক সামিয়া সুলতানা, সংগীত শিক্ষক অনিতা কর্মকার, শিক্ষার্থী নোভা খান, প্রখর পীযূষ বড়ুয়া প্রমুখ।
অভিভাবক বক্তাগণ বিতর্ক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, ভাষার জড়তা দূর করতে বিতর্ক শেখার বিকল্প নেই। চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমি শিক্ষার্থীদের জন্যে যে মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তার জন্যে আমরা ধন্যবাদ জানাই। তারা সিডিএর সুন্দর আয়োজনের জন্যে কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়ে আরো বলেন, বিতর্ক শিক্ষার মধ্য দিয়ে আমাদের সন্তানরা দেশের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে এবং ভাষার শুদ্ধ রূপ, বাচনভঙ্গি, উপস্থাপনসহ এমন শিক্ষা গ্রহণ করবে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে যোগ্যতা সম্পন্ন আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। বক্তাগণ বিতর্ক একাডেমির সফলতাও কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে সিলেবাস ও নিয়মাবলি নিয়ে আলোচনা করেন বিতর্ক একাডেমির প্রশিক্ষক ও সমন্বয়কারী মোহাম্মদ হানিফ।
অনুষ্ঠানে উৎসবমুখর পরিবেশে একাডেমির অধ্যক্ষ ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া রচিত ‘বিতর্ক সমগ্র’ বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধান অতিথি আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারী।