মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

কোনো অশুভ শক্তি যেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত না হতে পারে
বিমল চৌধুরী ॥

চাঁদপুর পুরাণবাজার হরিসভা রোডস্থ শ্রীশ্রী লোকনাথ মন্দির ও আশ্রমে লোকনাথ বাবার স্মরণার্থে ২৭তম ঘৃত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। লোকনাথ মন্দির ও আশ্রম কমিটির আয়োজনে গত ৪ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় সকল বয়সের নর-নারী নিজেদের মঙ্গল এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় উপবাস থেকে শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবার সন্তুষ্টি কামনায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে মন্দির প্রাঙ্গণে ঘৃত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন। লোকনাথ ব্রহ্মচারীর পাদ পদ্মে বসে তাকে স্মরণপূর্বক প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের লক্ষ্যে এইদিন বিকেল থেকেই চাঁদপুর জেলা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েকশত ভক্ত মন্দির প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন। সন্ধ্যার স্নিগ্ধ আলো, আঁধারে তারা লোকনাথ বাবার স্মরণার্থে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কার্যক্রম শুরু করেন। ভক্তদের নীরবতা, মন্দিরে পূজারত ব্রাহ্মণের ক্রমাগত আরাধনা, মৃদু সুরে শ্রীমদ্ভাগবত গীতার উচ্চারিত শ্লোক, লোকনাথ বাবার জীবনী প্রকাশসহ প্রজ্জ্বলিত ঘৃত প্রদীপের মৃদু আলো, ধূপদানী আর ধূপবাতির সৃষ্ট ধোঁয়ায় পরিবেশে এক ধর্মীয় অনুভূতির সৃষ্টি হয়। এ সময় ভক্তদের উচ্চারিত লোকনাথ ধ্বনিতে অনুষ্ঠানস্থল মুখরিত হয়ে উঠে।

দীর্ঘ দুই ঘণ্টা একটানা প্রদীপ প্রজ্জ্বলন শেষে জ্বলন্ত প্রদীপ মাটির পাতিলে করে মন্দির সংলগ্ন মেঘনা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। জ্বলন্ত ভাসমান প্রদীপের স্নিগ্ধ আলোয় এ সময় নদীর কুল আলো-আঁধারির অপূর্ব এক সৌন্দর্যে রূপময় হয়ে উঠে। বহু দর্শনার্থী নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে সারি সারি ভাসমান প্রদীপের আলোক সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকেন মনের মাধুর্য মিশিয়ে। নদীতে থাকা জেলে নৌকাগুলোসহ জলযানগুলোও এ সময় থমকে দাঁড়ায় ভাসমান সারিবদ্ধ প্রদীপের আলো দেখে। অনেকেই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন ভাসমান জ্বলন্ত প্রদীপের আলো দৃষ্টির বাহিরে না যাওয়া পর্যন্ত। মন্দির কমিটি আয়োজন করেন উপবাসী ব্রতীদের জন্যে এক সিদ্ধ প্রসাদ ও বোতলজাত জলের। স্বেচ্ছাসেবকগণ শৃঙ্খলার সাথে তাদের দায়িত্ব পালনসহ উপবাসী ব্রতীদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করেন। প্রসাদ থেকে সাধারণ ভক্তগণও বঞ্চিত হন না। সকলের মাঝেই প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

২৭তম ঘৃত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন শ্রী শ্রী লোকনাথ বাবার মন্দির ও আশ্রম কমিটি দুই দিনব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রথমদিন ৩ নভেম্বর শুক্রবার সকালে লোকনাথ বাবার বাল্যভোগ, দুপুরে রাজভোগ, সন্ধ্যায় মিশ্রিভোগ, রাত সাড়ে ৮টায় নর-নারী সমবেত হয়ে পুরাণবাজার অংশে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, গঙ্গা আহ্বান ও অনুষ্ঠানের অধিবাস শেষান্তে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। পরদিন গতকাল ৪ নভেম্বর সকালে বাবার মিশ্রিভোগ, বাবার সিদ্ধভোগ, ষোড়শ পূজা, দুপুরে রাজভোগ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, বিকেলে বাবার শীতলভোগ ও সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবার প্রদীপ দানের মহাপূজা এবং মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠিত হয়।

সান্ধ্যকালীন প্রদীপ প্রজ্বলন স্থলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল। পৌর মেয়র ভক্তদের সাথে কুশল বিনিময় করেন এবং লোকনাথ ব্রহ্মচারীর সন্তুষ্টি কামনায় ভক্তগণ যে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেছেন তার সফলতা কামনা করে বলেন, মানুষের কল্যাণ কামনায় যে প্রার্থনা করা হয় মহান স্রষ্টা তা নিশ্চয়ই পূরণ করেন। কোনো অশুভ শক্তি যেনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত না হতে পারে আপনারা সেজন্যে প্রার্থনা করবেন। আপনাদের প্রার্থনা স্রষ্টা অবশ্যই পূরণ করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। আমরা উন্নয়নশীল বাংলাদেশ চাই। সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র আমাদের কাম্য নয়। তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিজয় কামনা করে আরো বলেন, প্রতি বছরের মত এই বছরও আপনারা উৎসবমুখর পরিবেশে এই আয়োজন করায় আমি সন্তোষ প্রকাশ করছি। সকল ভালো কাজে আমি আপনাদের পাশে রয়েছি। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জাতির পিতা এ দেশটা স্বাধীন করেছেন। সেই স্বাধীনতা যুদ্ধে সকল সম্প্রদায়ের অবদান রয়েছে। তাই আমরা সকলেই সকলের ধর্মীয় উৎসব থেকে শুরু করে সামাজিক সকল কাজে একে অপরের পাশে থাকবো এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবো--এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। তিনি চাঁদপুরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ রাখার জন্যে এবং পৌরসভার উন্নয়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি পরেশ চন্দ্র মালাকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র সাহা, পৌর কাউন্সিলর মালেক শেখ , পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নেপাল চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক সুমন সরকার জয়, পুরাণবাজার লোকনাথ মন্দির ও আশ্রমের সভাপতি প্রমোদ চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক দীপক চন্দ্র রায়, মন্দির কমিটির মানিক সাহা, সুকান্ত সাহা টিটু, শেখর পাল, প্রভাষ চন্দ্র সাহা, মানিক ঘোষ, গোবিন্দ, অনু সাহা, বিনু সাহা, তাপস চন্দ্র দত্ত, তন্ময় বণিক, অরুপ কুমার দাস, রাম চন্দ্র সাহা রামু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়