প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
সত্তরোর্ধ বয়সী বাবাকে অমানুষিক নির্যাতন করল নিজের ঔরসজাত মেয়ে। বৃদ্ধ বাবা বিছানায় প্রস্রাব করেছে। এই অপরাধে বাবাকে অনবরত লাথি, ঘুষি মেরে নিজের পশুত্ব আচরণ প্রকাশ করেছে এক কুলাঙ্গার সন্তান। তাও আবার সে নিজের ঔরসজাত মেয়ে। এমন ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে মডেল থানা পুলিশ মেয়ে ফাতেমা আক্তার শিল্পীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এমন নির্যাতন করার পরও মেয়ের বিরুদ্ধে বাবার কোনো অভিযোগ নেই। সব নির্যাতন সহ্য করে ভুলে গিয়ে মেয়েকে থানা পুলিশ থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছেন বাবা। ‘মেয়েকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। মেয়ের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই’। বাবার ভাষ্য ছিল এমন। বাবা যখন মেয়ের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই বললেন, তখন পুলিশ বাবা এবং মায়ের জিম্মায় মেয়েকে ছেড়ে দিয়েছে। তবে মেয়ের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার রাখা হয়েছে। এ ঘটনা চাঁদপুর শহরের মিশন রোড এলাকার।
চাঁদপুর শহরে নিউ ট্রাক রোড এলাকার মনির হোসেন খান (৭৫) নামে বৃদ্ধ বাবাকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বৃদ্ধ মনির হোসেনের মেয়ে নির্যাতনকারী ফাতেমা আক্তার শিল্পীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। রোববার (৮ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত ফাতেমা আক্তার চাঁদপুর সদর মডেল থানার হেফাজতে ছিলো। পরে বাবা-মাসহ আত্মীয়-স্বজনের জিম্মায় তাকে ছাড়া হয়। এর আগে শনিবার (৭ অক্টোবর) দিবাগত রাতে নিউ ট্রাক রোডস্থ কলমতর খান বাড়ি থেকে চাঁদপুর সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির ও সঙ্গীয় ফোর্স ফাতেমাকে আটক করে।
ফাতেমা আক্তার শিল্পী চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের মাস্টার রোলের একজন কর্মচারী তথা ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট পদে কর্মরত। বৃদ্ধ মনির হোসেন খানের কোনো ছেলে নেই, ৩ মেয়ে।
বৃদ্ধ মনির খানের প্রতিবেশী শাহজাহান খান ও তার স্ত্রী গোলশান আরা বেগম জানান, মনির খানের ঘর থেকে প্রায় সময় বাবা মনির খান ও মেয়ে ফাতেমার উচ্চস্বরে আওয়াজ শোনা যেতো। আবার অনেক সময় মনির খানের কান্নাও শোনা যেতো। সম্প্রতি মেয়ের সাথে পারিবারিক বিষয় নিয়ে বিবাদ হওয়ায় মনির খানকে বিভিন্ন স্থানে বসে থাকতে দেখা যায়। আমরা জানতে পেরেছি, বাবার অপরাধ বিছানায় প্র¯্রাব করেছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি নিরূপায়।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিওতে দেখা গেলো বাবাকে লাথি, ঘুষি মেরে বেদম মারধর করছে মেয়ে। অসহায় বাবা প্রতিবাদের বাসা হারিয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। শনিবার (৭ অক্টোবর) রাতে কয়েকটি অনলাইন প্লাটফরমে বাবাকে মারধরের ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। তারও আগে শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফাতেমা আক্তার তার বাবা মনির খানকে গোসল করাতে নিয়ে মারধর করেন। পাশর্^বর্তী কোনো ব্যক্তি ওই নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করেন। পরে যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এদিকে বৃদ্ধ পিতাকে মারধরের ভিডিওটি চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএমণ্ডএর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি অমানবিক এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশনা প্রদান করেন। এই প্রেক্ষিতে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ ৭ অক্টোবর ফাতেমা আক্তার শিল্পীকে (৪৫) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
অথচ যে পিতাকে নির্যাতনের জন্য পুলিশ তার কন্যাকে আটক করেন সেই পিতাই আবার থানায় এসে সন্তানের উপর কোনো অভিযোগ না রেখে ক্ষমা করে দেন এবং তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্যে পুলিশকে বারংবার অনুরোধ করেন। পিতার অনুরোধে এবং তার চাওয়াকে সম্মান করে পুলিশ মেয়ে ফাতেমা আক্তার শিল্পীর থেকে এই মর্মে অঙ্গিকার নেয় যাতে আগামীতে সে তার পিতার উপর কোনো প্রকার নির্যাতন না করে। পরে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ ফাতেমা আক্তার শিল্পীকে তার বয়োবৃদ্ধ পিতা মনির হোসেন খান (৭৫) ও মাতা রোকেয়া বেগমের জিম্মায় দেয়।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএম এমন অমানবিক ঘটনা যেন আর না ঘটে, পিতা-মাতা যেন তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, সামাজিক অবক্ষয় রোধে সকলকে সচেতন হওয়া এবং এমন বাবাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।
পুলিশ জানায়, চাঁদপুর জেলা পুলিশ সর্বদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং ন্যায় ও মানবিকতার পক্ষে কাজ করতে অঙ্গিকারাবদ্ধ।
চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মাসুদুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমকে জানান, ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখা যায়, ফাতেমা আক্তার শিল্পীকে অনেকেই অত্র কলেজের শিক্ষক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। মূলত সে মাস্টার রোলের একজন কর্মচারী এবং ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট পদে কর্মরত। সে কলেজের শিক্ষা-সংক্রান্ত কোনো কাজের সাথে সম্পৃক্ত নয়। ভিডিওটিতে প্রচারিত ঘটনাটি একান্তই তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়। এ বিষয়টি বর্তমানে আইনী প্রক্রিয়াধীন। এমতাবস্থায় কলেজ প্রশাসন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। তারপরও কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অধিকতর অবগতির জন্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির তদন্তের ভিত্তিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ পরবর্তী ব্যবস্থাগ্রহণ করবে।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শেখ মুহসীন আলম জানান, ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশে আমরা ফাতেমা আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আটক করেছি। সকালে তার পিতা থানায় এসেছে। তিনি এখনো কোনো অভিযোগ করেননি। তিনি বলছেন, মেয়েকে জেলে দিলে তাকে কে দেখবে।