প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
‘আমরা স্বাবলম্বী হব, সকলে কর দেব। সবাই মিলে কর দেব উন্নয়নে অংশ নেব’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই আহ্বানকে সামনে রেখে স্টেকহোল্ডারদের সাথে আয়কর আইন-২০২৩ অনুযায়ী উৎসে কর কর্তন ও জমাদান বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৩ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় চাঁদপুরের সুধীজন, ডাক্তার, সাংবাদিক, পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক, ব্যবসায়ী, আয়কর উকিল, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক মালিকদের ব্যাপক উপস্থিতিতে চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের রোঃ ডাঃ নুরুর রহমান কনফারেন্স হলে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা অঞ্চলের কর কমিশনার মোঃ গোলাম কবির। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, করদাতা ও গ্রহীতার মাঝে দূরত্ব দূরসহ সুসম্পর্ক স্থাপনের জন্যেই আজকের এই মতবিনিময় সভা। কর কর্মকর্তা-কর্মচারী আপনাদেরই লোক। অনেকেই মনে করেন ইনকাম ট্যাক্স অফিসে যাওয়া মানেই ট্যাক্স দেয়া, বিষয়টি তেমন নয়। ট্যাক্স প্রদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু আইন আছে, সরকার পূর্বের অনেক আইনের পরিবর্তন করেছেন এবং মানুষ যাতে সহজে করের আওতায় আসতে পারে এবং কর দিতে পারেন, সেজন্যে চলতি ২০২৩ সালে আয়কর আইনের কিছু পরিবর্তন করেছেন। আমরা সে বিষয়ের উপরই আলোচনা করবো এবং আপনাদের মতামত জানবো।
তিনি আরো বলেন, কুমিল্লা অঞ্চলে ৬টি কর অঞ্চল রয়েছে, যার মধ্যে চাঁদপুর একটি। আপনারা আপনাদের সুবিধা অনুযায়ী আপনাদের রিটার্ন বা ট্যাক্স প্রদান করতে পারেন। সরকার সকলকেই আয়করের আওতায় নিয়ে আসতে চেষ্টা করছেন। এজন্যে একটি সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। ন্যূনতম কত টাকা আয় হলে আপনি বার্ষিক ইনকাম ট্যাক্স প্রদান করবেন, বা রিটার্ন জমা করবেন। আপনি ইচ্ছে করলে নিজে নিজেই কর অঞ্চলে এসে আপনার আয়ের বিবরণী প্রদান (সেলফ) করতে পারবেন। এক্ষেত্রে করঅঞ্চলে দায়িত্বরত কর্মকর্তাগণ আপনাকে সহযোগিতা করবেন। তিনি আরো বলেন, অনেকেই আয়কর অফিসে এসে আয়কর দিতে বিব্রতবোধ করেন। তার কারণ কী হতে পারে তা নিয়ে আপনারা খোলামেলা আলোচনা করবেন, মনে রাখবেন আমরা আপনাদেরই লোক। কাউকে হয়রানি করা আমাদের লক্ষ্য নয়। তিনি বলেন, সরকার শুধু ট্যাক্স নেয় না, বড় অংকের ট্যাক্স দিয়েও থাকে, ট্যাক্স প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের পর দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে কোম্পানি আর তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে ব্যক্তি। আইনানুযায়ী সরকারি ড্রাইভার, পিয়নকেও ট্যাক্স দিতে হয়। যা সাধারণ উপার্জনকারীর ক্ষেত্রে হয় না। তিনি টিন সার্টিফিকেট, রিটার্ন দাখিল ও আয়কর প্রদানের ক্ষেত্রে সরকার গৃহীত ২০২৩ আয়কর আইনের উপর ব্যাপক আলোচনা করেন এবং তা কার্যকরে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
মতবিনিময় সভার উন্মুক্ত আলোচনায় চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক রোটারিয়ান কাজী শাহাদাত মিথ্যা ও ভুয়া অভিযোগের ভিত্তিতে যাতে কেউ হয়রানি না হন, সে বিষয়ে তিনি কর কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এই প্রসঙ্গে তিনি তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন। এই প্রসঙ্গে কর কমিশনার বলেন, যারা এ ধরনের অভিযোগ করেন তারা হয়তো পরিচিত লোক। তারা বিভিন্ন তথ্য দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে চিঠি দেন, তখন রাজস্ববোর্ড থেকে আমাদের বলা হয় তা তদন্ত করার জন্য, তখন আমরা তা না করে পারি না। আমাদেরকে বাধ্য হয়েই অভিযোগের আলোকে তদন্ত করতে হয়। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, এসব ক্ষেত্রে চাঁদপুরের মানুষেরই অভিযোগ বেশি। তিনি বলেন, যারা মনে করেন তাদের উপর মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত হচ্ছে, তারা অবশ্যই তদন্ত কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করবেন এবং তদন্ত শেষে আপনার উপস্থিতিতে রিপোর্ট তৈরি করে তা যেন পাঠিয়ে দেয়া হয় সে বিষয়ে নিশ্চিত হবেন।
মুক্ত আলোচনায় উপস্থিত বক্তাগণ কর প্রদানের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান এবং সরকারের গৃহীত আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কর্মকর্তাগণ একটু সহনশীল ও মানবিক হন সেই বিষয়ে তারা কর কমিশনারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
কর সার্কেল ১৮, ১৯ ও ২১ চাঁদপুর কর অঞ্চলের আয়োজনে চাঁদপুর কর অঞ্চলের যুগ্ম কমিশনার আঃ মালেকের সভাপতিত্বে ও চাঁদপুর সার্কেলের সহকারী কর কমিশনার মোঃ হেফজুল বারী খানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর কর অঞ্চলের উপ কর কমিশনার সৈয়দ কালিমউল্লাহ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত কর কমিশনার, কুমিল্লা সামিনা ইসলাম।
এ সময় অতিথিদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন উপ-কর কমিশনার কুমিল্লা কৃপা সিন্ধু দাস, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম, চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ- সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, চাঁদপুর অঞ্চলের কর পরিদর্শক মোঃ কামরুজ্জামান।
মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ মহসিন আলম, ডাঃ এসএম সহিদুল্লাহ, জেলা বিএমএর সভাপতি ডাঃ সৈয়দ নুরুল হুদা, চাঁদপুর পৌরসভার সচিব আবুল কালাম ভূঁঞা, চাঁদপুর কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল্লাহ আব্দুল আল ফারুক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শেখ আব্দুর রশিদ, চাঁদপুর হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহীন, নাভানা হাসপাতালের কর্ণধার কিশোর সিংহ রায়, মাজহারুল হক চক্ষু হাসপাতালের কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার অধিকারী, চাঁদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইকবাল আজম প্রমুখ।