বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪  |   ৩২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুরে রাজনৈতিক মামলায় আসামীদের আটক অভিযান অব্যাহত। যুবলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫ নেতা-কর্মী আটক
  •   ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল যুবকের
  •   চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
  •   রাজধানীতে কচুয়ার কৃতী সন্তানদের সংবর্ধনা
  •   সম্প্রীতির চমৎকার নিদর্শন আমাদের বাংলাদেশ --------------জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২১, ০০:০০

চাঁদপুর শহরে বালু ব্যবসায়ী খুন
গোলাম মোস্তফা ॥

চাঁদপুর শহরের নিউ ট্রাকরোড এলাকায় খুন হয়েছেন এক ব্যবসায়ী। এখানকার খান সড়কের ‘তামান্না শারমিন ভিলা’র ৩য় তলার ভাড়াটিয়া ড্রেজিং ও বালু ব্যবসায়ী রেহান উদ্দিন মিজি (৫৫)কে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয় বাসিন্দা ও একই বিল্ডিংয়ের ভাড়াটিয়াদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলার তারাবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা মোঃ রেহান উদ্দিন মিজি গত দেড় বছর পূর্বে খান সড়কের এই বাসার ৩য় তলার পশ্চিম পার্শ্বের ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠেন। তিনি ৩ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক। তার ৩ মেয়ে বিবাহিতা। সকলে স্বামীর বাড়িতে থাকেন। একমাত্র ছেলে প্রবাসী। মূলত তারা স্বামী-স্ত্রী এ বাসায় থাকতেন। প্রায়ই পারিবারিক কাজে তিনি বা তার স্ত্রী শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া যেতেন। গত ২ দিন পূর্বে পারিবারিক কাজে তার স্ত্রী নড়িয়া যান। অন্যান্য দিনের ন্যায় গতকাল ২৪ জুন সকাল থেকেই তিনি স্বামীর খোঁজখবর নিতে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে কল দিলেও রিং শোনা যাচ্ছিলো না। তার ধারণা ছিলো হয়তো মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে।

দীর্ঘ সময় ধরে একই অবস্থার কারণে বাধ্য হয়ে রেহান উদ্দিনের স্ত্রী দুপুরের দিকে উক্ত বাসার পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়াকে বিষয়টি অবহিত করে তার স্বামী বাসায় আছে কিনা, না নেই বিষয়টি দেখে জানানোর জন্যে অনুরোধ করেন। পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া তাৎক্ষণিক দরজা খুলে তাকে জানান, তাদের বাসার দরজাতে তালা নেই, বাহির থেকে দরজায় ছিটকিনি দেয়া রয়েছে। পুনরায় তিনি ছিটকিনি খুলে বাসার ভেতরে কেউ আছে কি না তা দেখতে বললে তার ভয় লাগে, এজন্যে অন্য কাউকে নিয়ে বাসায় ঢুকবেন বলে জানান। সেমতে একই বিল্ডিংয়ের আরেক ভাড়াটিয়াকে নিয়ে দরজার ছিটকিনি খুলে বাসায় ঢুকে দেখেন খাটের ওপর এক ব্যক্তির দেহ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এ দৃশ্য দেখে তাদের চিৎকারে পার্শ্ববর্তী লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। পরবর্তীতে নিহতের স্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়। তাৎক্ষণিক চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশকে অবহিত করা হলে মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রশিদসহ সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থলে যায় এবং পুলিশ সুপার মহোদয়কে অবহিত করে। হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে তাৎক্ষণিক চাঁদপুরের পিবিআই এক্সপার্ট টিমের ইন্সপেক্টর মীর মাহবুবের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থলে গিয়ে খুনের আলামত ও মোটিভ সংগ্রহ করে। পরে লাশের সুরতহাল শেষে পোস্টমর্টেম করার জন্যে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়।

পিবিআই এক্সপার্ট টিম প্রধান ইন্সপেক্টর মাহবুবের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমরা ঘটনাস্থলে এসে সবকিছু দেখে মনে হলো খুনিরা তার পূর্ব পরিচিত। হয়তো পূর্বের কোনো শত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। ২৩ জুন বুধবার রাত থেকে যে কোনো সময় খুনিরা তাকে খুন করে ঘরের বাইরে থেকে দরজায় ছিটকিনি বন্ধ করে চলে যায়। আমরা খবর শোনার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে এসে খুনের বেশ কিছু আলামত পেয়েছি এবং তা সংগ্রহ করে স্থানীয় থানা পুলিশকে হস্তান্তর করেছি।

পিবিআই জানায়, খুন হওয়া রেহান উদ্দিনের শরীরের সামনে-পেছনে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে বেশির ভাগ আঘাতই তার মাথায় করা হয়েছে। তাকে ভোঁতা কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। এছাড়া তার নাভির নিচে ও অণ্ডকোষে আঘাত করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মাথায় আঘাতের ফলেই তার মৃত্যু ঘটেছে। ফলে এক পর্যায়ে প্রচুর রক্তপাত হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খুনিরা খুব কৌশলে তাকে খুন করেছে। কারণ ঘটনাস্থল থেকে আমরা ঠাণ্ডা পানীয়, সিগারেট এবং বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করেছি। এতে আমাদের ধারণা, তাকে খুনের পূর্বে নেশাজাতীয় খাবার খাইয়ে অচেতন করে তারপর খুন করা হয়, যাতে আঘাত করার পর কোনো শব্দ না হয় এবং কৌশলে খুনিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে পারে। তবে তিনি দৃঢ়তার সাথে আশা ব্যক্ত করে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে খুনিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি সংগৃহীত আলামত এবং নিহতের স্বজনদের সাথে ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়ায় কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি দেখছি। ঘটনাটি কেনো ঘটেছে, কী কী কারণে ঘটতে পারে, বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি-এখানে পারিবারিক কোনো দ্বন্দ্ব ছিলো কি না, সম্পত্তি-সংক্রান্ত কোনো কিছু আছে কি না। এছাড়া কিছুদিন পূর্বে একজনের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে, সে বিষয়টিও আমরা দেখছি। উক্ত ঘটনায় মাননীয় পুলিশ সুপার থানা পুলিশ, সিআইডি, পিবিআই, ডিবিসহ সবাইকে একসাথে ঘটনাটি উদ্ঘাটনের জন্যে কাজে লাগিয়েছেন। যেহেতু, সব ইউনিট বিষয়টি নিয়ে একসাথে কাজ করছে, আশা করছি ক’দিনের মধ্যেই আমরা ঘটনাটির কারণ উদ্ঘাটন করতে পারবো এবং আসামীদের আটক করতে পারবো।

নিহতের স্বজনদের সাথে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, হয়তোবা লেনদেন নিয়ে তাকে খুন করা হয়েছে। নিহত রেহান উদ্দিন মিজি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুর রশিদ বলেন, লাশের সুরতহাল হয়েছে। পোস্টমর্টেম শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তিনি বলেন, পরিবারের নিকট স্বজন হিসেবে তার স্ত্রী বা সন্তানরা যে কেউ বাদী হতে পারবেন। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

নিহতের স্বজনরা জানান, আইনী প্রক্রিয়া শেষে এবং লাশের পোস্টমর্টেম করে নিহত রেহান উদ্দিনকে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া এলাকার নিজ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। খুনের ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত উৎসুক জনতা ভিড় করে।

এদিকে বাড়ির মালিক মাহবুবুর রহমান দীর্ঘদিন যাবৎ প্রবাসী। তিনি সপরিবারে প্রবাসে থাকেন। কয়েক বছর পূর্বে জমিটি ক্রয় করে তিন তলাবিশিষ্ট এ বিল্ডিং করেন। তার স্ত্রীর নামে তিনি ভবনটির নাম দেন তামান্না শারমিন ভিলা। তার অনুপস্থিতিতে তার শ্বশুর গুণরাজদী পাটোয়ারী বাড়ির বাসিন্দা তাফাজ্জল হোসেন পাটোয়ারী এটি দেখাশোনা করেন।

এ বিষয়ে তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এক সময়ে ভবনে দারোয়ান ছিলো। দারোয়ানকে কয়েক মাস পূর্বে বাদ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সবসময় ভবনের গেইটে তালা থাকে। সকল ভাড়াটিয়াকে উক্ত তালার চাবি দেয়া রয়েছে। তাই কারো বাসায় গেস্ট আসলে সংশ্লিষ্ট ভাড়াটিয়া নিজে গেট থেকে গেস্টকে রিসিভ করে নিতে হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়