প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৩, ০০:০০
![হাজীগঞ্জে বৃষ্টির পর বহু পুকুরের মাছ মরে গেছে](/assets/news_photos/2023/06/10/image-34120.jpg)
হাজীগঞ্জে বৃহস্পতিবার সকালে হয়ে গেলো স্বস্তির বৃষ্টি। বৃষ্টিতে হালকা স্বস্তির দেখা মিললেও বৃষ্টির পরেই বহু পুকুরের মাছ মরতে শুরু করে। এদিন দুপুর থেকে বাজারে পুকুরের মাছ প্রচুর পরিমাণ উঠে। দাম নাগালের মধ্যে থাকায় বহু ক্রেতা প্রয়োজনের বেশি মাছ ক্রয় করতে দেখা গেছে। অল্প বৃষ্টির সাথে অতিরিক্ত গরমে পুকুরের অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা মৎস্য অফিস।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তিদায়ক ছিলো। তবে এই স্বস্তির বৃষ্টির কারণেই মাথায় হাত পড়ে মাছ চাষিদের। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) যেসব এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে, সেসব এলাকার মাছ চাষিরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
এ দিন সকাল সাড়ে দশটা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয় এবং বেলা সাড়ে তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এ বৃষ্টি হয়েছে। তবে কোথাও মুষলধারে বৃষ্টি হয়নি। এতে অতিরিক্ত গরম ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফলে পুকুরে দেখা দিয়েছে অক্সিজেন সঙ্কট। আর পানিতে অক্সিজেন না পেয়ে হাঁসফাঁস করে পানির উপরিভাগে ভাসতে শুরু করে মাছ। ফলে অনেক মাছ মরতে থাকে। তাই মাছগুলো ধরে ফেলে চাষিরা।
হাজীগঞ্জ বাজারস্থ পৌর হকার্স মার্কেটের মাছের আড়ত, মাছ বাজার ও বাকিলা বাজারে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারে শুধু মাছ আর মাছ এবং আড়তদারদের হাঁক-ডাক। কিছুক্ষণ পর পর সিএনজিচালিত অটোরিকশা, অটোবাইক ও মিশুকে করে আড়তে মাছ নিয়ে আসছেন চাষিসহ তাদের প্রতিনিধিরা। আর চাহিদার অতিরিক্ত মাছ আসতে থাকায় হঠাৎ করে দাম নেমে যায়। অর্থাৎ বাজার মূল্যের চেয়ে কেজি প্রতি মাছের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে যায়।
সাধারণত অন্যান্য দিনে ২-৩ কেজি ওজনের কাতল মাছের দাম ৩০০-৪০০ টাকা হলেও এদিন ২০০-২২০ টাকা, এক থেকে দেড় থেকে কেজি ওজনের রুই মাছ ২৫০-৩৫০ টাকা হলেও এদিন ১৫০-২০০ টাকা, ৭০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের রুই মাছ ১৭০-২৫০ টাকা হলেও এ দিন ১২০-১৫০ টাকা, এক থেকে দেড় কেজির কার্প মাছ ১৮০-২৫০ টাকা হলেও এদিন মাত্র ১২০-১৪০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া এক থেকে দেড়-দুই কেজি ওজনের বিগহেড ও সিলভার কার্প মাছ ১৫০-২২০ টাকা হলেও এদিন ১০০-১১৫ টাকা, এক থেকে দেড়/২ কেজি ওজনের মৃগেল মাছ ১৫০-২৩০টাকা হলেও এদিন ১০০-১৩০ টাকা, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছের কেজি গড়ে ১২০-২০০ টাকা হলেও এদিন মাত্র ৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। একই ভাবে অন্যান্য মাছও কম দরে বিক্রি হয়েছে।
মোঃ শাহজাহান মিজি, মোঃ আব্দুল জব্বার ও ফজল মিয়াসহ কয়েকজন মাছ চাষির সাথে কথা হলে তারা জানান, এদিন সকাল সাড়ে দশটায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। আর এর কিছুক্ষণ পরেই পুকুরের মাছ ভেসে উঠতে শুরু করে। তারা বলেন, মাছগুলো আধা-মরা হয়ে পুকুরের এদিক-ওদিক ছুটতে শুরু করে। তারপর বাধ্য হয়ে মাছগুলো ধরে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসি। কিন্তু বাজারে এসে আমাদের মাথায় হাত।
এ বিষয়ে কচুয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও হাজীগঞ্জ উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল হাসান চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, অতিরিক্ত গরমের কারণে পুকুরে অক্সিজেন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আর অক্সিজেন সংকটে মাছগুলো পানির উপরিভাগে উঠে এসে হাঁসফাঁস শুরু করে। তিনি বলেন, যদি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি না হয়ে মুষলধারে বৃষ্টি হতো, তাহলে হয়তো এমনটি হতো না। এতে চাষিরাও ক্ষতির হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পেতো।