প্রকাশ : ২০ মে ২০২৩, ০০:০০
দেশে প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী দোকান ও প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত শ্রমিকদের জন্যে দেড়দিন ছুটি থাকলেও চাঁদপুর শহরে সে ছুটি কার্যকর নেই দীর্ঘদিন যাবত। বৃহস্পতিবার আধাবেলা এবং শুক্রবার পূর্ণদিন এ ছুটি কার্যকর করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবারে প্রায় শতভাগ দোকান ও প্রতিষ্ঠানেই আধাবেলা ছুটি কার্যকর করা হয় না। আর শুক্রবার বড়ো বড়ো মার্কেট ছাড়া প্রধান সড়কের পার্শ্ববর্তী ও বিভিন্ন সড়কের জনাকীর্ণ মোড়গুলোতে অবস্থিত দোকান ও প্রতিষ্ঠান সমূহের অন্তত ষাটভাগ খোলা থাকে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কের দক্ষিণ-পশ্চিমে বিরাট এলাকা জুড়ে তিন শতাধিক দোকান নিয়ে যে বিশাল হকার্স মার্কেট, সেই মার্কেটে বৃহস্পতিবার আধাবেলা দোকান বন্ধ রাখা তো দূরের কথা, শুক্রবার অন্তত ৯৫ ভাগ দোকান পূর্ণদিন খোলা রেখে শ্রমিক-কর্মচারীদের ছুটি থেকে বঞ্চিত করা হয়। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে এই মার্কেটে সরেজমিনে গিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিবেদক প্রায় ৯৮ ভাগ দোকান খোলা দেখতে পান।
এক সময় চাঁদপুর শহরে লেবার অফিসারদের দাপট ছিলো। তারা বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে এবং শুক্রবার সকাল ১০টার পূর্বাপর রাস্তায় নামলে দোকানের ঝাপ ফেলার হিড়িক পড়তো। এমতাবস্থায় দোকানের মালিকগণ ‘মান্থলি’ দিয়ে লেবার অফিসারকে ম্যানেজ করার ব্যবস্থা করেন এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের নির্বিঘ্নে দেড়দিন ছুটি থেকে বঞ্চিত করে চলছিলেন। নব্বইর দশকে এই অনিয়মের বিরুদ্ধে নিরাপোষভাবে রিপোর্ট করতে থাকেন তৎকালীন তুখোড় সাংবাদিক, পরবর্তীতে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সেক্রেটারী ও সভাপতি (বর্তমানে মরহুম) ইকরাম চৌধুরী। এতে দোকান ও প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক-কর্মচারীদের দেড় দিন ছুটি সঠিকভাবে কার্যকর হয়।
কয়েক বছর দেড় দিন ছুটি কার্যকর থাকলেও এক পর্যায়ে সেটি একদিন অর্থাৎ কেবল শুক্রবার কার্যকর হতে থাকে। সাম্প্রতিক ক’বছরে সেটি অর্থাৎ শুক্রবারের ছুটি কিছু প্রতিষ্ঠানে কার্যকর হচ্ছে, তবে সকল প্রতিষ্ঠানে আর কার্যকর হচ্ছে না। এজন্যে লেবার অফিসার কিংবা ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক দোকান ও প্রতিষ্ঠানের কোনো মালিক দণ্ডিত না হওয়ায় চাঁদপুর শহরে শুক্রবার দোকান ও প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়টি ফ্রি স্টাইল হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে কারো মধ্যে ভয়-ডর কাজ করছে না।
গত এক/দেড় বছর পূর্বে চাঁদপুর শহরে ঔষধের দোকানগুলোতে এলাকাওয়ারি পালাক্রমে সাপ্তাহিক ছুটি কার্যকর করার উদ্যোগ বাস্তবায়িত হতে থাকলেও সেটি অল্প সময়ের ব্যবধানে বন্ধ হয়ে যায়।
প্রতি বছর মুসলমানদের দুটি ঈদ এবং দুর্গাপূজার দু সপ্তাহ পূর্ব থেকে দোকান ও প্রতিষ্ঠানে দেড়দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শিথিল করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আসলে ওই সময় (১৫দিন করে) দোকান ও প্রতিষ্ঠান সপ্তাহের প্রতিটি দিনই খোলা রাখা হয়। আর এখন কোনো নির্দেশনা না থাকলেও সপ্তাহের প্রতিটা দিন চাঁদপুর শহরের অধিকাংশ (৫০ শতাংশেরও বেশি) দোকান ও প্রতিষ্ঠান নির্বিঘ্নে খোলা থাকছে। এতে শ্রমিক-কর্মচারীরা সাপ্তাহিক ছুটির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিষয়টি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচিত হওয়া এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে সুধীজন মনে করছেন।