প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

এলাকায় এক নামে সবাই চিনে আর্মি লিটন হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনীয়ারিং কোরে সার্জেন্ট পদ থেকে অবসরপ্রাপ্ত এই ব্যক্তির পুরো নাম মোঃ হোসেন মোল্লা লিটন। অবসর গ্রহণের পর নিজ এলাকায় ধারাবাহিকভাবে দুটি ফাস্টফুডের ব্যবসা শুরু করেন। এই ব্যবসার আয়ের পুরো টাকা ব্যয় করেন এতিম গরিব আর দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের পেছনে। নিজের পেনশনের টাকা, প্রবাসী ২ ছেলে আর ছোট ভাইয়ের দেয়া অর্থে নিজ সংসার সুন্দরভাবে চলে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। ৪ সন্তানের জনক মোঃ হোসেন মোল্লা লিটন হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের দক্ষিণ ইউনিয়নের সন্না মোল্লা বাড়ির মৃত রুহুল আমিন মোল্লার ছেলে।
বাকিলা বাজারের ব্লু মুন ক্যাফেটেরিয়া ও ব্লু মন-১ ফাস্ট ফুডের স্বত্বাধিকারী ও বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হোসেন মোল্লা লিটন তার ব্যবসার পুরো আয়ের টাকা ধারাবাহিক দান করার বিষয় নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, অন্যদেরকে সহযোগিতা করার বিষয় প্রকাশ্যে কোনোভাবেই সামনে আনতে চাইছি না। এটা তার এক ধরনের প্রচার বলে মনে করেন তিনি। অনেক বুঝানোর পর কথা বলতে রাজি হন তিনি।
খোঁজ নিয়ে ও হোসেন মোল্লা লিটনের সাথে কথা বলে জানা যায়, চাকুরি জীবনে তার হাতের স্পর্শে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ, রাজধানীর হাতির ঝিল প্রকল্প, বনানী ওভার পাস, ক্যান্টনমেন্ট ফ্লাইওভার তৈরি হয়েছে। লাইবেরিয়াতে শান্তিরক্ষী মিশনে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৮ সালে অবসরে আসেন তিনি। অবসরের এককালীন টাকা দিয়ে বাকিলা পশ্চিম বাজারে উন্নত মানের ফাস্ট ফুড ব্লু মুন ক্যাফেটেরিয়া নামে ব্যবসা চালু করেন। তার পরের বছর করোনার হানায় পুরো ব্যবসায় ধস নামে। করোনার দাপট কমে আসলে আবারো ব্লু মুন ক্যাফেটেরিয়া পুরোপুরি চালু করেন। এরপরেই মধ্য বাজারে ব্লু মুন-১ নামের আরেকটি ফাস্ট ফুডের ব্যবসা চালু করেন। এই দুটি ফাস্ট ফুডের দোকানে ৪ জনের কর্মসংস্থানে তাদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা দেবার পর মাস শেষে ২০ হাজারের কম-বেশি আয় হয়। মূলত এই পুরো টাকাই তিনি ব্যয় করেন গরিব অসহায় আর এতিম শিক্ষার্থীদের শুধু পড়ালেখার পেছনে। তিনি এতিম, গরিব অসহায় বা দুঃস্থ সকল শিক্ষার্থীর যে কোনো পরীক্ষার ফি, বিদ্যালয়ের বেতন, শিক্ষা উপকরণ, ড্রেস তৈরি, প্রাইভেট পড়ার শিক্ষক বেতন কিংবা এতিম মেয়েদের বিয়ে দেবার খরচ দিয়ে আসছেন। তার এই টাকার বেশিরভাগ ব্যয় করেন বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সকল গরিব, এতিম আর দুঃস্থদের শিক্ষার্থীদের পিছনে।
হোসেন মোল্লা লিটনের অনুদানের বিষয় নিশ্চিত করে বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান জানান, তিনি (হোসেন মোল্লা লিটন) আমার বিদ্যালয়ের দুঃস্থ, অসহায় আর এতিম সকল শিক্ষার্থীকে সবসময় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে আসছেন। তার এই টাকায় পড়ালেখা করে এসএসসি পাস করে ইতোমধ্যে বহু শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছে কিংবা চাকুরি করছে বলে আমি জানি। তবে তিনি বিষয়টি সবসময় গোপন রাখতে চান।