প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৪৬
বিএনপির ব্যানারে আওয়ামী লীগ নেতার মানববন্ধন: রাজনৈতিক অঙ্গনে বিস্ফোরক বিতর্ক
রাজনৈতিক ভূমিকম্প!

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় একটি বিরল রাজনৈতিক ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে যুবলীগ নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহিম মুরাদের পক্ষে বিএনপির ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ঘটনা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।
|আরো খবর
মানববন্ধনের পটভূমি
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার সাহেবরামপুর ইউনিয়নে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জাতীয় পর্যায়েও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
মুরাদের রাজনৈতিক অবস্থান
দলীয় সূত্র জানায়, মাহবুবুর রহিম মুরাদ বর্তমানে কালকিনি উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০২১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তবে বিভিন্ন সময়ে তিনি বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সমাবেশে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন।
বিতর্কিত মানববন্ধন
সম্প্রতি মুরাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তুলে ধরেন। এর প্রতিবাদে সাহেবরামপুর ইউনিয়নে তার সমর্থকদের উদ্যোগে একটি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে চমকপ্রদ বিষয় হলো, এই কর্মসূচি হয়েছে ‘ইউনিয়ন বিএনপির’ ব্যানারে।
বিএনপি নেতাদের প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনায় কালকিনি উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কালকিনি উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বলেন, “সাহেবরামপুর ইউনিয়নে ছাত্রদলের কোনো কমিটি নেই। যারা বিএনপির ব্যানার ব্যবহার করেছে, তারা দলের কেউ নয়। এটি পরিকল্পিতভাবে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা।”
কালকিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক বেপারী বলেন, “এটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিএনপির কোনো কমিটি না থাকলেও, যারা দলের নামে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে, তারা আওয়ামী লীগের দোসর। এ ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।”
আওয়ামী লীগের ভূমিকা
বিতর্কিত মানববন্ধনে আওয়ামী লীগের নেতাদের উপস্থিতি আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেখানে সাহেবরামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কালাম আকন, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আকন, যুবলীগ সভাপতি মো. মতি, সহ-সভাপতি আহসানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
কালকিনি উপজেলা যুবলীগের সদস্য খায়রুল ইসলাম বলেন, “মুরাদ ভাই ভালো নাকি খারাপ, তা জানি না। তবে তিনি আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী।”
মুরাদের সাফাই
বিতর্কের মুখে মাহবুবুর রহিম মুরাদ বলেন, “আমার বিরুদ্ধে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাই মানববন্ধন করা হয়েছে। এখন তো আর আওয়ামী লীগ দিয়ে মানববন্ধন সম্ভব না, তাই বিএনপির লোকজন দিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মুরাদের মতো আওয়ামী লীগের একজন নেতা বিএনপির ব্যানারে মানববন্ধন করানো এক ধরনের রাজনৈতিক প্রহসন। এটি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ করে এবং বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা হতে পারে।
এদিকে, এই ঘটনা মাদারীপুরের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মত দিয়েছেন স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এটি তাদের দলীয় পরিচয়কে বিভ্রান্ত করতে ও জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের কৌশল হতে পারে।
এই ঘটনা দেশের রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এটি কেবল বিএনপি বা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং জাতীয় রাজনীতিতে দলীয় স্বচ্ছতা ও আদর্শিক অবস্থানের প্রশ্নও উত্থাপন করছে। মাদারীপুরের রাজনীতিতে এই ঘটনার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী হবে, সেটি এখন দেখার বিষয়।
ডিসিকে/এমজেডএইচ