প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
হাজীগঞ্জে মৃত বোনের ডিভোর্স জালিয়াতি করে সম্পত্তি ও পেনশন আত্মসাতের চেষ্টার আলোচিত মামলায় আদালতের রায়ে সম্পত্তি ও পেনশনের অধিকার পেলেন স্বামী। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার চাঁদপুর জজ কোর্টের সহকারী জজ লাভলী শীলের আদালত এ রায় প্রদান করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, খাটরা রেফায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রয়েলী আক্তার গত ২২ জুলাই ২০২০ তারিখে করোনা উপসর্গে মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী ও দুই ভাইকে ওয়ারিশ রেখে যান। কিন্তু মৃত্যুকালে ওয়ারিশ সূত্রে রেখে যাওয়া কোটি টাকার সম্পদ ও পেনশন থেকে স্বামী মোঃ গিয়াস উদ্দিনকে বঞ্চিত করার অসৎ উদ্দেশ্যে হাজীগঞ্জ পৌরসভা থেকে রয়েলী আক্তারের পূর্বের স্বামী শাহাদাত হোসেনের নাম ওয়ারিশ সনদে অন্তর্ভুক্ত করেন। পরবর্তীকালে এই ঘটনা জানতে পেরে স্বামী গিয়াস উদ্দিন হাজীগঞ্জ পৌরসভায় লিখিত আপত্তি জানান। হাজীগঞ্জ পৌরসভা ব্যাপক অনুসন্ধান করে জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হলে পূর্বোক্ত ওয়ারিশ সনদটি বাতিল ঘোষণা করে স্বামী গিয়াস উদ্দিন এবং দুই ভাই আল-আমিন লিটন ও হাবিবুর রহমান জীবনের অনুকূলে ওয়ারিশ সনদ ইস্যু করেন। এরপর ছোটভাই হাবিবুর রহমান জীবন ভুয়া ডিভোর্সনামার তথ্য দিয়ে সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা (১৪/২০২১) দায়ের করেন। কিন্তু ডিভোর্সনামা উপস্থাপন করতে সক্ষম না হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত ২৮/২/২০২১ তারিখে মামলাটি খারিজ করে দেন।
পরবর্তীকালে ছোটভাই হাবিবুর রহমান জীবন তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসকে মৃত রয়েলী আক্তার সাজিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে একটি ভুয়া ডিভোর্সনামা তৈরি করেন এবং সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ০২/০৩/২০২১ তারিখে একটি মামলা (৫৭/২০২১) দায়ের করেন। বাদী হাবিবুর রহমান জীবন সম্পত্তির লোভে এই মামলায় বড়ভাই আল-আমিন লিটনের অজ্ঞাতসারে বাদী হিসেবে তার নামটিও ব্যবহার করেন। বিষয়টি অবগত হয়ে বড়ভাই আল-আমিন লিটন আদালতে উপস্থিত হয়ে ভগ্নিপতি গিয়াস উদ্দিনের পক্ষে ছোলেনামা দেন এবং ছোট ভাই হাবিবুর রহমান জীবনের অপকর্মের কথা স্বীকার করেন। ডিভোর্সনামার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্যে আদালত ডাক বিভাগের কাগজপত্র যাচাইকল্পে তাদেরকে তলব করলে হাবিবুর রহমান জীবন কর্তৃক ডাক বিভাগের এডি নকল করার চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। এরপর বাদী হাবিবুর রহমান জীবন ভগ্নিপতি গিয়াস উদ্দিনকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে জিআর ২৩২/২০২১সহ কয়েকটি মামলা করেন।
উল্লেখ্য, জিআর ২৩২/২০২১ মামলাটি যথাযথ প্রমাণের অভাবে বিজ্ঞ বিচারক কামরুন নাহারের আমলী আদালত গত ২০/৯/২০২২ তারিখে খারিজ করে দেন।
মৃত স্ত্রীর ডিভোর্স জালিয়াতি করে সম্পদ ও পেনশন আত্মসাতের চেষ্টা করায় ভগ্নিপতি গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে আদালতে একটি জাল জালিয়াতির মামলা (সিআর ২৯৬/২০২১) করেন। মামলায় সিআইডির তদন্তেও এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে।
ছোট ভাই হাবিবুর রহমানের করা মামলায় ( মামলা নং ৫৭/২০২১) বিজ্ঞ আদালত হাজীগঞ্জ পৌরসভার ওয়ারিশনামা, ডাক বিভাগের প্রমাণপত্র, রয়েলী আক্তারের বড়ভাই আলআমিন লিটনের ছোলেনামা, মৃত্যুকালে হাসপাতালের ছাড়পত্র, কাজীর স্বীকারোক্তি এবং অপরাপর পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করে বিবাদী গিয়াস উদ্দিন মৃত্যু পর্যন্ত রয়েলী আক্তারের স্বামী ছিলেন মর্মে নিশ্চিত হন এবং মামলাটি স্বামী গিয়াস উদ্দিনের পক্ষে খারিজ করে দেন।
এ বিষয়ে মৃত রয়েলী আক্তারের স্বামী গিয়াস উদ্দিনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন মিয়াজী বলেন, আদালতের রায়ে আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি, তাই আমরা ভীষণ সন্তুষ্ট। এই রায়ের মাধ্যমে গিয়াস উদ্দিন তার স্ত্রীর সম্পত্তি ও পেনশনের উত্তরাধিকার পাওয়ার পথে সকল বাধা দূর হলো।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে স্বামী গিয়াস উদ্দিন বলেন, আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি, তাই আমি সন্তুষ্ট। আমি এই রায়ের দ্রুত প্রতিফলন দেখতে চাই।