প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
শরীয়তপুরের সখিপুর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চরসেনসাস ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জিতু মিয়া বেপারী বাদী হয়ে এমএ ইদ্রিস খান নামে এক ভুয়া দুদক কর্মকর্তাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে শরীয়তপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। ২৫ সেপ্টেম্বর রোববার এ মামলা করেন তিনি।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, প্রতিপক্ষের ইন্ধনে জিতু মিয়া বেপারীর ক্ষতি করার জন্য চাঁদপুরের মতলব উপজেলার সুজাত খানের ছেলে এমএ ইদ্রিস খান নামে এক ব্যক্তি দুদক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তার কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
এমএ ইদ্রিস তার মোবাইল ফোন নম্বর থেকে কল করে জিতু মিয়াকে ঢাকায় দুদক কার্যালয়ে যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে তার নম্বরে কল করলে তাকে মগবাজার যেতে বলেন। জিতু মিয়া জানান, এ সময় ইদ্রিস খান নিজেকে দুদক কার্যালয়ের স্টাফ পরিচয় দিয়ে বলেন, আপনার বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে। তবে আমি আপনাকে মুক্ত করতে পারি, যদি আমাকে ২০ লাখ টাকা দেন। এ সময় তাকে আমার কাছে ভুয়া মনে হলে আমি তার পরিচয়পত্র দেখতে চাই। তখন তিনি বলেন, আমি দুদকের লোক নই। আমি এনটিভি চ্যানেলের ক্রাইম রিপোর্টার। আমি তখন সেই পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে তিনি পরিচয়পত্র সাথে নেই বলে জানান। তিনি আমাকে বলেন, আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। পরে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ করেন। এতে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় ২৬ সেপ্টেম্বর রোববার জিতু মিয়া বাদী হয়ে ৬ জনের নামে শরীয়তপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
জিতু মিয়া বেপারী বলেন, কোনো ধরণের ভিত্তি ছাড়াই প্রতিপক্ষের লোকজনের মিথ্যা তথ্যের ওপর নির্ভর করে এক বিভ্রান্তিকর সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যা আমার জন্য খুবই অসম্মানজনক।
আমি শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সরকারকে নিয়মিত ভ্যাট, ট্যাক্স প্রদান করে আসছি। যা আয়কর ফাইলে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অতএব অবৈধ সম্পদ অর্জনের কোনো সুযোগই আমার নেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক)-এ ভাইরাল হওয়া ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জিতু মিয়া বেপারী চরসেনসাস ইউনিয়নের বেড়াচাক্কি এলাকায় অন্যদের জমি জোরপূর্বক দখল, ইটভাটার জমি জোরপূর্বক দখল, চাঁদপুরে ৩টি বাড়ি, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ, চাঁদপুরে এক হাসপাতালে ৮০% শেয়ার, গ্রামে আলিশান বাড়ি, শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরিঘাট নিয়ন্ত্রণ করে কয়েকশ’ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
এসব দাবির প্রতিটির ব্যাখ্যা দিয়ে নিজের বিরুদ্ধে চক্রান্তের বিষয়টি উল্লেখ্য করেন জিতু মিয়া বেপারী।
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে নিয়ে লিখেছেন। তিনি দুদক কর্মকর্তার পরিচয়ে প্রথমে আমার কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন, পরে এনটিভির ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয়ে দাবি করেন ২০ লক্ষ টাকা। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তিনি আমাকে নিয়ে সংবাদ প্রচারের হুমকি দেন। আমার বিপক্ষে সংবাদ প্রচারের জন্যে অনেক লোক তাকে টাকা দিতে প্রস্তুত বলেও তিনি আমাকে হুমকি দিয়ে যান। আমার কাছ থেকে টাকা না পেয়ে, পরবর্তীতে আমার প্রতিপক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ঐ ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণায় লিপ্ত হন।
চরসেনসাস বেড়াচাক্কি এলাকায় জমি দখলের বিষয়ে জিতু মিয়া বেপারী বলেন, ১০-১৫ বছর আগে ওই দুর্গম এলাকার জমি ৩০-৪০ হাজার টাকা একর বিক্রি হতো। আমি ওই সময় ওই এলাকায় কিছু জমি কিনেছিলাম। পরবর্তীতে ওই জমি অন্য ব্যক্তির কাছে লিজ দিয়েছি। সেখানে তারা মাছের খামার করছে। ওইসব জমির যাবতীয় দলিলপত্র আমার কাছে রয়েছে। ওই ঘের আমার না। তবে আমার একটা মাছের আড়ত আছে, যা আয়কর ফাইলে লিপিবদ্ধ। আর আমার ইটের ভাটার জমি মালিকদের কাছ থেকে লিজ নেয়ার যাবতীয় চুক্তিপত্র আমার কাছে সংরক্ষিত আছে। চাইলে দেখাতে পারবো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো জমি আমার দখলে নেই। চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন। আর আমাদের গ্রামের বাড়িতে যৌথ পরিবার মিলে যে বাড়ি রয়েছে, তা বহু বছরের পুরানো। পৈত্রিক সম্পত্তি এবং ঐ বাড়িতে আমি থাকি না। পার্শ্ববর্তী চাঁদপুর জেলায় জিতু বেপারীর ৩টি বাড়ি রয়েছে বলে যে তথ্য প্রতিবেদনে দেয়া হয়েছে, সে বিষয়েও পরিষ্কার করেন সাবেক এ চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, চাঁদপুর জেলায় আমার স্ত্রীর নামে একটি চার তলা বাড়ি রয়েছে। অনেক আগে ঐ জমিটি আমরা কিনেছিলাম। পরে প্রতিবছর আস্তে আস্তে করে সেখানে চার তলা গড়ে তুলেছি। এছাড়া আমাদের আর কোনো বাড়ি নেই। নিশি রোড পূর্ব এলাকার ভূমিতে রয়েছে টিনশেড বাড়ি ৪টি কক্ষ বিশিষ্ট একটি দোকান যা আয়কর ফাইলে দেখানো হয়েছে। শেয়ার মার্কেটে আমার কোনো বিনিয়োগ নেই। আর চাঁদপুরের যে হাসপাতালে আমার ৮০% শেয়ারের কথা বলা হয়েছে, সেখানে মাত্র ৫% শেয়ার রয়েছে, যাতে কোনো প্রকার মুনাফা নেই।
দীর্ঘদিন ধরে ফেরিঘাটের অবৈধ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জিতু মিয়া বেপারী বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন টেন্ডার নিতে ব্যর্থ হওয়ার ক্ষোভে আমাকে দোষারোপ করছে। আমি শুধু বিআইডাব্লিউটিএর ইজারাদার হিসেবে লোকজন দিয়ে ধার্যকৃত টাকা উত্তোলন করি। এক কথায় আমার সাথে রাজনৈতিকভাবে, ব্যবসায়িক ও সামাজিকভাবে ব্যর্থ হয়ে আমার সুনাম ক্ষুণœ করার চেষ্টা করছে আমার প্রতিপক্ষের লোকজন। তবে এলাকার লোকজন আমার সম্পর্কে অবগত আছে আমি কেমন মানুষ। আমার কর্ম দ্বারাই আমি জনগণের কাছে বিবেচিত হবো। আমার আয় ব্যয়ের হিসাব নিয়মিত আয়কর ফাইলে লিপিবদ্ধ আছে। আমি আমার সকল সম্পত্তির বিষয়ে সব জায়গায় হিসেব দিতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, চেয়ারম্যান হওয়ার পূর্বে আমার ভাইয়ের স্বর্ণের ব্যবসা ছিলো, দক্ষিণ তারাবুনিয়া মাল বাজারে আমার নিজের রাইচ মিল ছিলো। তাছাড়া ওই সময় আমি ছোটখাটো ঠিকাদারি করতাম। এলাকার লোকজন সবাই এটা জানে। ওই ভুয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমি মাছ বিক্রেতা থেকে চেয়ারম্যান, কোটিপতি। এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার নম্বর ০৮, তারিখ: ২৭/০৯/২০২২। তাই এ ধরনের মিথ্যা ও অসম্মানজনক তথ্যের আমি তীব্র নিন্দা জানাই এবং অনলাইনের ভুয়া ভিত্তিহীন সংবাদে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তা কামনা করছি।