প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
জুবায়ের আল নাহিয়ান ১৯৯৭ সালে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন। ২০০৩ সালে শাহরাস্তি পৌর ৮নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌরসভা ছাত্রদলের সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে রাজনীতির পাশাপাশি মেহার কালীবাড়িতে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের রাজনৈতিক ভাবনায় তার দেয়া সাক্ষাৎকার নিম্নে তুলে ধরা হলো :
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার দৃষ্টিতে যে কোনো নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন কিসের নিরিখে হয়? এজন্যে কী কী করতে হয়?
জুবায়ের আল নাহিয়ান : যে কোনো নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে জনগণের সমর্থন ও আর্থিক পুষ্টতা একান্ত প্রয়োজন। এছাড়া তৃণমূলের অবস্থান, স্থানীয় নেতা-কর্মীর সমর্থন ও সুদক্ষ কর্মী বাহিনী থাকা দরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থানীয় সিনিয়র নেতা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের আর্থিকভাবে সন্তুষ্ট রাখতে হয়। আগের মতো ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন কাউকে মনোনয়ন তেমন একটা দেয়া হয় না। বর্তমান রাজনীতিতে দলীয় মনোনয়ন পেতে হলে আর্থিক যোগ একান্ত প্রয়োজন। হতে হবে শিল্পপতি বা যে কোনোভাবে কোটিপতি। তবেই মিলবে মনোনয়ন। যা দীর্ঘ বছর দলের পক্ষে নিরলস কাজ করার পরও একজন প্রকৃত নেতার দ্বারা সম্ভব হয় না। যে কারণে দলের জন্যে আত্ম নিবেদিত ওই নেতা অবহেলিতই থেকে যায়।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : স্থানীয় পর্যায়ে নিজ দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল কী কী কারণে হয় বলে আপনার ধারণা? এ কোন্দল নিরসনে জেলা পর্যায় বা কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতার সাংগঠনিক ব্যবস্থাগ্রহণের হুঙ্কার সাধারণত দ্রুত উচ্চারিত হয় না। এটার হেতু কী?
জুবায়ের আল নাহিয়ান : স্থানীয় পর্যায়ে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলগুলোর অন্যতম হচ্ছে নেতা নির্বাচন। এখানেও আর্থিক বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। যিনি তার শ্রম, ঘাম, অর্থ ও জীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ নষ্ট করে দলের পক্ষে কাজ করে গেছেন, তিনি সেই অর্থের কারণে স্থানীয় পর্যায়ে অবহেলিত হন। হঠাৎ করে উড়ে আসা কোনো এক ব্যক্তি আর্থিক যোগসূত্র সৃষ্টি করে স্থানীয় নেতা বনে যান, তখনই শুরু হয় দলীয় কোন্দল। এছাড়া স্থানীয় ঊর্ধ্বতন নেতাদের কিছু অগোছালো সিদ্ধান্ত এবং পক্ষপাতিত্বও লোকাল পর্যায়ে কোন্দল তৈরি করে। যে কারণে নেতা-কর্মীদের মধ্যে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।
এ ধরনের কোন্দল নিরসনে জেলা পর্যায়ের নেতা বা কেন্দ্রীয় নেতাদের ভূমিকা নজরে না পড়ার মতই। এখানেও আর্থিক বাণিজ্য জড়িত। এই কোন্দল নিরসনকল্পে যারা বা যে পক্ষ আগে যান জেলা বা কেন্দ্রীয় নেতাগণ তাদের পক্ষ গ্রহণ করে হুঙ্কার বা গর্জন দেন। পরবর্তীতে যারা যান একই রকম ঘটনা ঘটে। ‘আপনারা যান, বিষয়টি দেখছি’-এমন সাধুর বচন আওড়ানো ব্যতীত আর কিছুই পাওয়া যায় না। আর্থিক এবং পক্ষপাতিত্বের কারণে বিবদমান বিষয়টি আর নিরসন হয় না এবং অনেক একনিষ্ঠ কর্মী বা নেতা ঝিমিয়ে পড়ে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দল।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : দলের তৃণমূলের বর্ধিত সভায় কিংবা সাধারণ বর্ধিত সভায় খোলামেলা অনেক কথা হয়। অনেক তিক্ত সত্য কথা উচ্চারিত হয়। এগুলো কি আদৌ আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়?
জুবায়ের আল নাহিয়ান : তৃণমূলে দলীয় বর্ধিত সভা কিংবা সাধারণ বর্ধিত সভায় নেতাদের মুখ থেকে বহু আদর্শিক কথা বের হয়ে আসে। যা পরে বাস্তবায়িত হয় না। তৃণমূল নেতারা উপজেলা বা জেলা পর্যায়ের নেতাদের সামনে দলীয় কোন্দল, স্থানীয় নেতার অদক্ষতা, কর্মীদের বিশৃঙ্খলা, বিবিধ সমস্যায় তাৎক্ষণিক সমাধান দেয়া, বিভিন্ন মিছিল-মিটিং বা সভায় অসহযোগিতা সম্পর্কে নানান কথা তুলে ধরেন। কিন্তু আদৌ তার সমাধান করা হয় না। ‘বলে দিবো, করে দিবো’ এমন কথা উপস্থিত সকলের সামনে বলে তারা করতালি গ্রহণ করে চলে যান। সমস্যাগুলো পড়ে থাকে আগের মতই। যা ধীরে ধীরে ঘা হয়ে ছড়াতে থাকে দলের ভেতর। যখন কোনো নির্বাচন আসে তখন নেতা-কর্মীদের প্রয়োজন হয়। ওই সময় সৃষ্ট হওয়া কোন্দল কিংবা সমস্যাগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। দিকপালেরা যখন দিক ভুল করেন তখন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা দলীয় পথভ্রষ্ট হয়। যে কারণে পরবর্তীতে দলকে সুসংগঠিত করতে হিমশিম খেতে হয় তাদের।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : রাজনীতিতে আদর্শের চর্চা ও দলীয় গঠনতন্ত্র যথাযথভাবে মেনে চলার গুরুত্ব কতোটুকু? আপনি কি মনে করেন আপনার দলে উক্ত চর্চা ও মেনে চলার কাজটা যথাযথভাবে হচ্ছে?
জুবায়ের আল নাহিয়ান : রাজনীতিতে আদর্শের চর্চা ও দলীয় গঠনতন্ত্র যথাযথভাবে মেনে চলার গুরুত্ব অপরিসীম। তবে বর্তমানে আদর্শিকতা সভ্যতার তলানিতে অবস্থান করছে। আদর্শিকতার ঢোল বাজিয়ে এখন আর নেতা হওয়ার সুযোগ নেই। বক্রপথে উপার্জিত অর্থ দলের স্বার্থে ঢালতে পারলে আদর্শিকতার প্রয়োজন হয় না। যে কোনো দলের নেতা বা কর্মী দলীয় আদর্শ আগলে রেখে সামনে চললে তাকে পিছপা হতে হবে। আদর্শিকতার কারণে সে না পারবে কারও চাটুকারিতা করতে, না পারবে আদর্শহীন কাউকে মেনে নিতে। আদর্শবান ব্যক্তি শীতেও মরে ক্ষুধায়ও মরে।
প্রতিটি দলের নিজস্ব একটি গঠনতন্ত্র রয়েছে। ওই গঠনতন্ত্রের নিরিখে প্রতিটি নেতা চলবে এবং কর্মীদের চালাবেন-এটাই ওই গঠনতন্ত্রের মূলমন্ত্র। অথচ বর্তমান রাজনীতিতে গঠনতন্ত্র নয় সময়েরতন্ত্রে চলছে দলীয় নেতা বা কর্মীরা। এটার জন্য অবশ্যই জেলা কিংবা কেন্দ্রীয় নেতারাই দায়ী। তৃণমূলে কোনো নেতা বা কর্মী দলীয় গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজে জড়িত হয়েছে বা হলে তা বোঝার উপায় থাকে না। তার মূল কারণ গঠনতন্ত্র সম্পর্কিত কোনো চর্চা না থাকায় তারা বুঝে উঠতে পারে না তারা কী অপরাধ অথবা দলীয় গঠনতন্ত্রের কোন্ নীতি ভঙ্গ করেছেন। যে কারণে নেতা-কর্মীরা চলছেন সময়ের তন্ত্রানুযায়ী।