প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
আষাঢ় ও শ্রাবণ দুই মাস বৃষ্টির পরিবর্তে খরার কারণে কৃষকদের মনে ফসল রোপণ করতে না পারার যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, ভাদ্রে এসে সেই আশঙ্কা কিছুটা হলেও দূর হলো। গত এক সপ্তাহের বৃষ্টিতে ধান ক্ষেতে পানি জমায় কৃষকরা রোপা আমন রোপণে নেমে পড়েছে। যদিও খরার কারণে এর আগে সেচ দিয়ে কিছু এলাকার কৃষকরা রোপা আমনের চারা রোপণ করেছে। ইতোমধ্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৮০ ভাগ রোপা আমন রোপণ হয়েছে বলে কৃষি অফিস নিশ্চিত করেছে।
জানা যায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ফরিদগঞ্জ উপজেলা বন্যামুক্ত হওয়ার কারণে প্রতি বছর একাধিক ফসল উৎপাদন হয়। সাধারণত রোপা আমনের সময়ে নিয়মিত বৃষ্টি হওয়ায় সেচের প্রয়োজন হয় না। ফলে কৃষকরা প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে বছরের পর বছর রোপা আমন ধানের আবাদ করছে। কিন্তু এ বছর বর্ষা তথা আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় বাজ পড়ে কৃষকের মাথায়। ধানক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে যায় পানির অভাবে। চারা রোপণের সময় চলে যাওয়ায় সেচ দিয়ে শুরু হয় ক্ষেতে পানি দেওয়া।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, বৃষ্টি না হওয়ায় তারা উপজেলায় এলএলপি বিদ্যুৎ সেচযন্ত্র ৭টি দিয়ে এবং এলএলপি ডিজেল সেচ যন্ত্র ১২৫টি দিয়ে ক্ষেতে পানি দেয়া শুরু করে। বাকি আরো কয়েকশ’ চালানোর প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে ভাদ্র মাসের শুরু থেকে বৃষ্টিপাত বাড়ায় কৃষকের মনে স্বস্তি ফিরে আসে। ধানক্ষেতে পানি জমায় সেচের প্রয়োজন হয়নি। কৃষি অফিস জানায়, ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৮০ ভাগ ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় রোপা আমন ফসলের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৩শ’ ২৮ হেক্টর । এর মধ্যে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত ৬৮০০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে।
বালিথুবা গ্রামের কৃষক হোসেন, আবুলসহ কয়েকজন কৃষক জানান, আমরা খুশি আল্লাহ শেষ সময়ে হলেও আমাদের দিকে চেয়েছেন। বৃষ্টির পানি ক্ষেতে জমায় আমরা ধানের চারা লাগাতে পেরেছি। যদিও উপজেলার কিছুটা উঁচু এলাকায় এখনো পানি না জমায় সেই দিকের কৃষকরা কিছুটা আশঙ্কায় রয়েছে সময়মতো চারা রোপণের ব্যাপারে।
সন্তোষপুর গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, বৃষ্টি হলেও আমাদের এলাকা উঁচু হওয়ায় ক্ষেতে এখনো পানি জমেনি। এছাড়া নদী ও খালের পানিও কম। তবে আশা করছি বৃষ্টি হলে চারা রোপণ করতে পারবো।
উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুরে আলম জানান, গত ৪২ বছরে এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা হইনি। চারা রোপণের সময় ঘনিয়ে আসায় আমরা সেচ শুরু করি। ১৩২টি সেচপাম্প দিয়ে পানি দেয়া শুরু করি। এছাড়া আরো কয়েকশ’ পাম্প চালুর প্রস্তুতি নিলেও বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সেগুলোর আর প্রয়োজন হবে না। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই শতভাগ রোপণ সম্পন্ন হবে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা খোকন চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, রোপা আমন নিয়ে আমরা খুব শঙ্কায় ছিলাম। কিন্তু বৃষ্টি আমাদের সেই শঙ্কা দূর করেছে। আশা করছি আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সক্ষম হবো।