প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
২০ আগস্টকে জাতীয়ভাবে ‘নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রাম দিবস’ ঘোষণার দাবিতে হাইমচরে আলোচনা সভা
জাতীয়ভাবে দিবসটি ঘোষণায় ভূমিকা রাখবো : কলামিস্ট বিভুরঞ্জন সরকার
আব্দুল্লাহ সরকার শুরু করেছেন, ডাঃ দীপু মনি সমাপ্ত করেছেন : মোঃ শাহাদাৎ মিয়াজী
হাইমচর উপজেলার ভিটে-মাটিহারা অসংখ্য নদী ভাঙতি অসহায় মানুষের পক্ষে সংগ্রাম করেছেন এ অঞ্চলের অভিভাবকগণ। ১৯৮৮ সালে হাইমচরে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গনে শত শত পরিবার ভিটেমাটি হারা হয়। নদী ভাঙ্গনের এমন ভয়াবহতা থেকে হাইমচরকে রক্ষা করতে সে বছরের ২০ আগস্ট ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হাজার হাজার মানুষ অনশন করে। এটি ছিলো একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। সেজন্যে এ দিবসটিকে জাতীয়ভাবে ‘নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রাম দিবস’ ঘোষণার দাবিতে হাইমচরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
|আরো খবর
৮০’র দশক থেকে চলে আসা হাইমচরের মানুষের প্রাণের দাবি নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রাম সফল হয় ২০১১ সালে। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনির হাত ধরে এ দাবি বাস্তবায়ন হয়। যাদের আত্মত্যাগে এ সংগ্রাম সফল হয় তারা অনেকেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের এ সংগ্রামকে স্মরণীয় করে রাখতে ভিটে-মাটিহারা মানুষের দাবি ২০ আগস্টকে জাতীয়ভাবে ‘নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রাম দিবস’ ঘোষণা করা। এ দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের সনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, লেখক, গবেষক, কলামিস্ট, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে হাইমচরে গতকাল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
হাইমচর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের আয়োজনে গতকাল ২০ আগস্ট শনিবার বিকেলে মেঘনাপাড় হাইমচর সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাইমচর সরকারি কলেজের সদ্য বিদায়ী অধ্যক্ষ মানোয়ার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে ও হাইমচর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকার সহকারী সম্পাদক বিভুরঞ্জন সরকার, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রাম দিবস সংগঠক হাসান আলী, রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন, নেক্সাস টেলিভিশনের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর আমীন আল রশীদ, হাইমচর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ শাহাদাৎ মিয়াজী, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত এবং চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতির নেতা অ্যাডঃ জাহাঙ্গীর আলম।
আজকের পত্রিকার সহকারী সম্পাদক বিভুরঞ্জন সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, এমন একটি গণদাবির সাথে আমিও একাত্মতা পোষণ করছি। আর এ নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রাম শুধু চাঁদপুর বা হাইমচরকে রক্ষার জন্যে নয়। বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলে নদী ভাংছে, সে সব অঞ্চলকেই রক্ষা করাটা হবে এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। আর যেহেতু হাইমচরকে রক্ষায় ১৯৮৮ সালের ২০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তাই এ দিবসটিই হতে পারে জাতীয়ভাবে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রাম দিবস। এ দাবি বাস্তবায়নে আমি ভূমিকা রাখবো।
সাংবাদিক কাজী শাহাদাত তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমার ৪২ বছরের সাংবাদিকতার জীবনে হাইমচরের মানুষের দুঃখণ্ডদুর্দশা নিয়ে সবচেয়ে বেশি লেখালেখি করেছি। আমি এবং আমার আত্মা মিশে আছে এই উপজেলার মাটি ও মানুষের হৃদয়ে। স্বচক্ষে উপলব্ধি করতে পেরেছি এখানকার মানুষের সুখণ্ডদুঃখ। এ সর্বনাশা মেঘনা কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য মানুষের ভিটে-মাটি, আর হাজারো পরিবারকে করেছে নিঃস্ব। মেঘনার ভয়াবহ করাল গ্রাসে নিপতিত হয়ে অনেকেই মাতৃভূমি ছেড়েছেন, পাড়ি দিয়েছেন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এই হাইমচরকে রক্ষায় ১৯৮৮ সালের ২০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশন করা হয়। এ ঘটনা ছিল দেশজুড়ে আলোচিত। তাই এই মানুষগুলোর সম্মানার্থে বা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নদী তীরবর্তী মানুষের জন্যে হলেও ‘নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রাম দিবস’কে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
হাইমচর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি আমেরিকা প্রবাসী মোঃ শাহাদাৎ মিয়াজী ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে হাইমচরকে নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা আন্দোলনের পুরোধা হাইমচরের গণমানুষের নেতা সাবেক সংসদ সদস্য কমরেড আব্দুল্লাহ সরকার এবং সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়কোবাদ চুন্নু সরকারকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, হাইমচরকে রক্ষায় কমরেড আব্দুল্লাহ সরকার আন্দোলন শুরু করেছেন। আর এ দাবি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনির মাধ্যমে। ২০ আগস্টকে জাতীয়ভাবে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রাম দিবস ঘোষণা দাবি আদায়ে তিনি মিডিয়ার অগ্রণী ভূমিকা প্রত্যাশা করেন।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন হাইমচর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা এমএ মান্নান ও সংগঠক মশিউর রহমান খোকন। উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শহীদ পাটওয়ারী, সিনিয়র সহ-সভাপতি রহিম বাদশা, সহ-সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা জাকির, প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি আলম পলাশ, এখন টিভির জেলা প্রতিনিধি তালহা জুবায়ের, উপজেলা প্রেসক্লাব, হাইমচর-এর সভাপতি মোঃ ফারুকুল ইসলাম ও হাইমচর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মোশাররফ হোসেন।
অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন হাইমচর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ইকবাল হোসেন, কার্যকরী পরিষদ সদস্য জিল্লুর রহমান জুয়েল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বারেক বকাউল, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রামের সদস্য ও হাইমচর রোভার স্কাউটের একাংশ।