বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিয়ে শিক্ষার্থীদের পৌঁছাতে হয় হাইমচরের পরীক্ষা কেন্দ্রে

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা ॥ ঈশানবালায় স্বতন্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র করার দাবি

উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিয়ে শিক্ষার্থীদের পৌঁছাতে হয় হাইমচরের পরীক্ষা কেন্দ্রে
সাজ্জাদ হোসেন রনি ॥

হাইমচর উপজেলার ঈশানবালা এমজেএস উচ্চ বিদ্যালয়ের জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেঘনা নদীবেষ্টিত হাইমচরের নীলকমল ইউনিয়নে সড়কপথ না থাকায় যোগাযোগবিচ্ছিন্ন এমজেএস উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে ৮০৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। যারা প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এলাকা থেকে যাতায়াত করে পড়াশোনা করেন।

এমজেএস উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষা দিতে দুই থেকে তিন ঘণ্টায় উত্তাল মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে হাইমচর উপজেলা সদরস্থ পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে হয়। অনেক সময় শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক, হতাশা আর উৎকণ্ঠায় ভুগতে হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় দেখা যায়, মাধ্যমিক পর্যায়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে না এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এমতাবস্থায় অনেক শিক্ষার্থীকে ট্রলার ভাড়া বহন করতে কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।

উক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদা আক্তার বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা দুই-তিন ঘণ্টা সময় হাতে রেখে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাই। আমাদের দুর্গম চরাঞ্চলে অবস্থান হওয়ায় যাতায়াত করার মতো যানবাহন থাকে না। নদীপথে ট্রলারযোগে যাতায়াত আমাদের একমাত্র উপায়। অনেক সময় আমরা পরীক্ষা দিতে গিয়ে আতঙ্কিত হয়ে যাই। বাড়ি থেকে দুই-তিন ঘণ্টা আগে বের হতে হয়। এমজেএস উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র হলে আমাদের এতো কষ্ট করতে হতো না। আমরা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি, যাতে যেনো পরীক্ষার কেন্দ্রটি আমাদের বিদ্যালয়ে হয়।

এসএসসি পরীক্ষার্থী আশরাফুল আলম বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানারকম প্রতিকূল পরিবেশে উত্তাল মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের পরীক্ষা দিতে যেতে হয়। কখনো কুয়াশার সকালে নদীর মাঝে জেগেউঠা চরে আটকে যায় নৌযান। অনেক সময়ে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে পারি না আমরা। এতে আমাদের পরীক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমাদের সকলের দাবি, পরীক্ষা কেন্দ্রটি যাতে নিজ স্কুলে হয়।

ঈশানবালা এমজেএস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিএম মান্নাফ বলেন, আমার বিদ্যালয় থেকে গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় ৬৬ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। চরাঞ্চলে দিন দিন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থায় স্থানীয় পর্যায়ে পরীক্ষা কেন্দ্র করার জন্যে তিন বছর পূর্বে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করা হয়েছিলো। মেঘনার ঢেউ অতিক্রম করে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা ট্রলারযোগে নদী পার হয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দেয়ার মতো মন-মানসিকতা থাকে না শিক্ষার্থীদের। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি মহোদয়ের কাছে অনুরোধ করছি, যেনো দ্রুত ঈশানবালায় একটি পরীক্ষা কেন্দ্র করা হয়।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ. কে. মীর হোসেন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি চরাঞ্চলে অবস্থিত। সেখানে কোনো পরীক্ষা কেন্দ্র না থাকায় পরীক্ষার্থীদের নদী পার হয়ে হাইমচর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এসে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি সম্পর্কে জেনেছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে তারা আশ্বাস দিয়েছেন।

হাইমচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার চাই থোয়াইহলা চৌধুরী বলেন, চরাঞ্চলের এতো শিক্ষার্থীর এ রকম ঝুঁকি নিয়ে হাইমচরে এসে পরীক্ষা দেয়ার বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। ভবিষ্যতে চরাঞ্চলে একটি কেন্দ্র দেয়া যায় কি-না সে চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করি এ ব্যাপারে দ্রুত সমাধান আসবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়