প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অনিয়ম যেনো নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১নং বালিথুবা ইউনিয়নের চান্দ্রা বাজারস্থ বালিথুবা অগ্রণী ব্যাংক শাখায়। এতসব অনিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে গ্রাহকদের অসন্তুষ্টি এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। যার কারণে গত ক’মাসে এ ব্যাংক থেকে চলে গেছে অনেক গ্রাহক।
গত ক’মাসের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সরকারি এই ব্যাংকটিতে মাসের পর মাস ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে সাধারণ একজন গার্ডকে। নিয়ম অনুযায়ী ক্যাশ কাউন্টারের ভেতরে বহিরাগত কোনো লোক ঢোকার অনুমতি না থাকলেও সেখানে বাহিরাগত লোকদেরই চলে আপ্যায়নের ব্যবস্থা। গ্রাহক লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা নিতে দেরি হবে বলে পরিচিতজনরা ক্যাশ কাউন্টারে ঢুকেই তাদের নগদ প্রদান, নগদ গ্রহণ শেষ করেন। অভিযোগ রয়েছে, ক্যাশিয়ারের বাড়ি বালিথুবা শাখা ব্যাংকের নিকটস্থ এলাকায় হওয়ায় তিনি সারাক্ষণ পরিচিতজনদের কাউন্টারে ঢুকিয়ে খোশ-গল্পে ব্যস্ত থাকেন এবং অনিয়মগুলোকে নিয়ম করে নিয়েছেন।
ক্যাশ কাউন্টারের সামনে বাংলাদেশ ব্যাংকের লিখিত নির্দেশনা ছিলো, এখানে সবসময় ছেঁড়া-ফাড়া টাকা নেয়া হয়। কিন্তু ক্যাশিয়ার ঝামেলা কমাতে সেই নির্দেশনা ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। এই ধরনের উপকারভোগীরা আসলে তিনি বলে দেন, এখানে কোনো ছেঁড়া-ফাড়া টাকা নেওয়া হয় না। যারা টাকা জমা করতে আসে তারা বড় বড় নোট না আনলে তিনি টাকা ফেরত দেন। বড় নোট বানিয়ে আনতে বলেন। একটু পুরাতন নোট হলে তিনি নিতে চান না। এছাড়া গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত ভাংতি টাকা নেই বলে ১০/২০ টাকা করে রেখে দেন।
বিদ্যুৎ বিলে এই ব্যাংকে সরকারের হাজার হাজার টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়া ২/১ দিনের ঘটনা নয়, মাসের পর মাস বছরের পর বছর ৪শ’ টাকার উপরের বিলে ১০ টাকার রেভিনিউ না লাগানো এই ব্যাংকে একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ভাংতি টাকা নেই বলে অনেক সময় গ্রাহককে খুচরো টাকা ফেরত দেয় না। যা নিয়ে প্রতিনিয়তই কথা কাটাকাটি হতে দেখা যায়। এলাকার সচেতন মহল এ বিষয়ে ব্যাংকের ম্যানেজারের সাথে কয়েকবার রফাদফা করেও বিদ্যুৎ বিলে নিয়মিত রেভিনিউ লাগানো নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন না।
জানা যায়, রেভিনিউ না লাগিয়ে যে টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়, সে টাকা দিয়ে ব্যাংকের বিভিন্ন খরচ মেনটেইন করা হয়। সিকিউরিটি গার্ড যাকে দিয়ে ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করা হয়, তাকে বাড়তি সম্মাননা প্রদান করা হয়।
চাঁদপুর জেলার অন্যতম বৃহৎ চান্দ্রা বাজারের বহু ব্যবসায়ীর মতামত, অগ্রণী ব্যাংক বালিথুবা শাখার অনিয়মগুলো সিসিটিভি ফুটেজে আছে। যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখলেই প্রমাণ পাবেন বলে তারা দাবি করেন। বাজারের আরো অন্যান্য ব্যবসায়ী অত্যান্ত ক্ষোভের সাথে এ প্রতিনিধিকে বলেন, অগ্রণী ব্যাংকের এ শাখাটি আগে খুব ভালো সেবা দিতো। কিন্তু গত ক’মাস ব্যাংকে হয়রানি বেড়ে গেছে। এত বড় একটা সরকারি ব্যাংকে একজন অযোগ্য ক্যাশিয়ারের স্থলে একজন সাধারণ গার্ড দায়িত্ব পালন করবে-এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। এদের বর্তমান সেবা প্রদানে আমরা অসন্তুষ্ট, তাই আমরা অন্য ব্যাংকে চলে এসেছি।
ব্যাংকের এসব অনিয়মের বিষয়ে নবাগত ম্যানেজার মোঃ আবু তাহের পাটোয়ারীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি নতুন এসেছি, ব্যাংকের কিছু অনিয়ম আমার চোখে পড়েছে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করবো।
অগ্রণী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) লক্ষণ চন্দ্র সিংহের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি চাঁদপুরে নতুন এসেছি। অভিযোগগুলো যুক্তিযুক্ত। তিনি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে এই প্রতিনিধিকে জানান।