বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ডাকাতিয়া গিলে খাচ্ছে ফরিদগঞ্জের মানচিত্রের শেষাংশ
এমরান হোসেন লিটন ॥

চাঁদপুর তিন নদীর মিলনস্থল হতে হাজীগঞ্জ অভিমুখী ডাকাতিয়া নদী। যার উপকারের কোনো শেষ নেই। নদীর দুই পাড়ের লাখ লাখ মানুষ ছাড়াও উপকার পাচ্ছেন দূর-দূরান্তের অগণিত মানুষ। কারণ পরিবহন খাতে এ নদী মানুষের উপকারে ব্যাপক অবদান রেখে যাচ্ছে। এছাড়া এ নদীর প্রবহমান জোয়ার-ভাটায় এক স্থান হতে অন্য স্থানে পলিমাটি গিয়ে ফসলের ব্যাপক উৎপাদনে সাহায্য করছে এবং ডাকাতিয়া নদীর পানি সেচ পাম্পের সাহায্যে ব্যবহার করে নদীর দু পাড়ের মানুষ ফসল উৎপাদনসহ কত ধরনের উপকার পাচ্ছে, যার কোনো শেষ নেই। কিন্তু ডাকাতিয়া নদীর অসামান্য উপকার থাকলেও এর দ্বারা নদীর দু পাড়ের মানুষের ক্ষতিরও কোনো শেষ নেই। সেই ক্ষতির অংশবিশেষ হিসেবে খুব বেশি ক্ষতির সম্মুখীন ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১ ও ২নং বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের নদী পাড়ের মানুষেরা।

তাদের অভিযোগের আলোকে ফরিদগঞ্জের উত্তরে ডাকাতিয়া নদীর পাড়স্থ আশরাফুল উলুম এতিম মাদ্রাসা সংলগ্ন স্থানে গেলে দেখা যায়, ডাকাতিয়া নদী গিলে খাচ্ছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার মানচিত্রের শেষ অংশ এবং ডাকাতিয়ার অন্যপাড় চাঁদপুর সদর উপজেলার মানচিত্রের অংশ বছর বছর পরিবর্তন হয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নদীর পাড়ের মানুষের সাথে কথা হলে তারা বলেন, বর্তমান ডাকাতিয়া নদী উত্তর পাড়ের চরের অনেক উত্তরে ছিলো। নবতিপর (৯০ বছরোর্ধ্ব) রেজওয়ান নামের এক বৃদ্ধ বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন ডাকাতিয়া নদী উত্তর পাড়ের চরের উত্তরে চৌকিদার বাড়ির পাশ দিয়ে প্রবাহিত ছিলো। গত প্রায় ৮০ বছরে নদী ভেঙ্গে ভেঙ্গে দক্ষিণ দিকে চলে এসেছে এবং আমাদের ফরিদগঞ্জের অংশ উত্তর পাড়ে চলে যাচ্ছে। ওই সম্পত্তি আমাদেরকে দখল দেয় না।

এমদাদ বেপারী (৭০) বলেন, আমি নদীকে অনেক উত্তরে দেখেছি। এখন ফরিদগঞ্জের অংশ ভেঙ্গে চাঁদপুর সদরে চলে গেছে এবং ফরিদগঞ্জ অংশের নদী পাড়ের মানুষের সম্পদ ডাকাতিয়া গিলে খাচ্ছে। আর সদর উপজেলার মানুষ সেই জমি ভাগ-বণ্টন করে খাচ্ছে।

আশরাফ হোসেন মানিক নামের একজন বলেন, ডাকাতিয়া নদীর উত্তর পাড়ের সম্পদ সম্পূর্ণরূপে আমাদের এবং মানচিত্রের আলোকে উত্তর পাড়ের সেই চর হবে ফরিদগঞ্জের মানচিত্রের শেষ অংশ। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের ফরিদগঞ্জের মানচিত্রের শেষ অংশ দখল করে আছে চাঁদপুর সদরের মানুষ। নদীগর্ভে বিলীন হওয়া সকদিরামপুর, কৃষ্ণপুর, ইসলামপুর, বেহারীপুর, বলিয়ারপুরের মানুষের দাবি, সরকার ডাকাতিয়া নদীর দক্ষিণ পাড় ভাঙ্গা থেকে আমাদের রক্ষার জন্য এগিয়ে আসবে।

সকদিরামপুর আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা কাউসার আহমেদ বলেন যে, তিনি মাদ্রাসায় চাকরির সুবাদে এই এলাকায় গত ২৫ বছর অবস্থান করছেন। তিনি প্রথমে এসে দেখেছেন এ নদী বর্তমান জায়গা থেকে অনেক উত্তরে ছিলো। এই নদী দিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের ট্রলার চলাচলের কারণে দক্ষিণ পাড় ভেঙ্গে উত্তরপাড়ে চর জমেছে এবং চাঁদপুর সদরের মানুষ সে চর দখল করেছে। এছাড়া নদীর পাড়ের সরকারি রাস্তা নামকাওয়াস্তে বারবার মেরামত করলেও তা নদী গিলে নেয়। আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার পাশে এলজিইডি নির্মিত ব্রিজটি হয়তো যে কোনো মুহূর্তে নদী গিলে খাবে। এছাড়া মাদ্রাসা-মসজিদ হয়তো আর কয়েক বছরের মধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন। তার আকুল আবেদন, এই মাদ্রাসায় এ পর্যন্ত কয়েক হাজার এতিম ছাত্র হাফেজ হয়ে মানুষ হয়েছে। হাজার হাজার ছাত্র পড়ালেখা করে হাফেজ হয়ে ভালোভাবে দিনাতিপাত করছে। মাদ্রাসা ও এলজিইডির ব্রিজ, কয়েক গ্রামের মানুষের জান-মালের হেফাজতের জন্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত গতিতে নদীভাঙ্গা থেকে রক্ষার জন্যে এগিয়ে আসবে।

বিষয়টি নিয়ে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন স্বপন নিয়াজীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি সবেমাত্র চেয়ারম্যান হয়েছি। এখনো আমার দায়িত্ব পালন শুরু হয়নি। আমি দায়িত্ব পালন শুরু করলে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি ভেবে দেখবো।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুন নাহারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি অবগত নন। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানান।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়