প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া বাবুর প্রতারণার শিকার বহু মানুষ
তার আয়ের উৎস কোথায়?
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ও চাঁদপুরের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে চাঁদপুর-৩ থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, ইতোমধ্যে গণভবনে নেত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে আশ্বস্ত হয়েছেন যে, আগামী সংসদ নির্বাচনে তাঁলী লীগ থেকে তাকে দলীয় নমিশেন প্রদান করা হবে-এমন প্রচার প্রচারণা করে বিভিন্ন মহলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন চাঁদপুর শহরের গুণরাজদী এলাকার মোঃ সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া বাবু। তিনি এককালে ছাত্রদল নেতা ছিলেন। ছাত্রদল নেতা থেকে জাসদের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। জাসদের রাজনীতি ছেড়ে তাঁতীলীগের উপদেষ্টা পদে আসীন হন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের কথা শোনা যাচ্ছে এবং বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে আসছে।
|আরো খবর
সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া (বাবু) তিতুমীর কলেজ, মহাখালী, ঢাকা-এর জিএস ছিলেন ও সরকারি জগন্নাথ কলেজ হতে ১৯৯৪ সালে পলিটিক্যাল সায়েন্স বিষয়ে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি পাস করেছেন বলে যে দাবি করছেন, তার সত্যতা যাচাই করে সঠিক পাওয়া যায় নি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নং ১৯৭৪২৬৯৫৪৩১০১৭৭৩৪-এ হাতের ফিঙ্গার প্রিন্ট কম্পিউটারে গ্রহণ না করায় সেটিও সঠিক নয় বলে প্রতীয়মান হয়। এছাড়া একই ব্যক্তি কখনো এম. আর. ভূঁইয়া আবার মোঃ সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া অর্থাৎ দ্বৈত নাম ব্যবহার করছেন। এতে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এক অনুসন্ধানে সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতারণা ও অর্থ কেলেঙ্কারীসহ বিভিন্ন দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসে। এই অনুসন্ধানে জানা যায়, সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া (বাবু) ঢাকায় গিয়ে জাসদ রাজনীতির কর্মকা-ের পদবী প্রচার করেন, কিন্তু বর্তমানে তাঁত শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক না হয়েও তাঁতীলীগের উপদেষ্টা প্রচার করে নিরীহ সহজ-সরল জনগণকে চাকুরি, বদলি ও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের নিশ্চয়তা দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন। এতে ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করে। সুন্দরবন ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল লিঃ-এর কো-অর্ডিনেটর ও উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে পুনরায় চালু করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবরে আবেদন দেখিয়ে সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া (বাবু) বিভিন্ন মহলে নিরীহ সহজ সরল জনগণকে ব্যাংকের চাকুরি দেওয়ার প্রলোভনে টাকা হাতিয়ে নেন। ঢাকা বনানী হাউজ, রাজউকের কাগজপত্র ও বনানী হাউজের পরিদর্শনমূলক ছবি তুলে মালিকানা প্রচার করেন। চাঁদপুর সদরের গুণরাজদী ও মৈশাদী মৌজার সিএস খতিয়ান ও দাগের মালিক মৃত হামিদ রাজা ভূঁইয়ার ছেলেমেয়ে ও তার দাদার ভাই-বোন, আপন চাচা-ফুফু সহোদর ভাইবোন এবং ওয়ারিশদের মালিকানা বাদ দিয়ে নিজ পিতা মোজাফ্ফর আলী ভূঁইয়াকে দিয়ে হেবা দলিল নং ৬৭৩২/১০ তাং ১৯/০৯/২০১০-এর মাধ্যমে ১৫ একর ৫৪ শতাংশ ভূমি দুর্নীতির মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে নেন। এমনকি নিজ পিতাকে দিয়ে চাচা-ফুফু, সহোদর ভাইবোন ওয়ারিশদের মালিকানা বাদ দিয়ে সিরাজুল ইসলাম ভুঁইয়া বাবু নিজের নামে দান ও হেবা দলিল রেজিস্ট্রি করেন, যার দলিল নং-২৮৭৫, তাং ১৩/০৪/২০১০, ৬৩২৯, তাং ১৯/০৮/২০১০, ৭০০১, তাং ২৩/০১/২০১০, ৭০০২, তাং ২৩/০৯/২০১০, ৬৭৩২, তাং ১৫/০৯/২০১০। প্রতারণা দলিলের মাধ্যমে গুণরাজদী মৌজা ও মৈশাদী মৌজার সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারায় তাঁতীলীগের উপদেষ্টার পরিচয়ে আবেদনের সুপারিশ, মন্ত্রীদের সভাস্থলের ছবি, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে নিজ বন্ধু, তাদের ভিজিটিং কার্ড ও ভয়ভীতি দেখিয়ে থানায় ও আদালতে মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। একবার এমন হয়রানি করতে গেলে চাঁদপুর শহরের নতুনবাজার, পালপাড়া ও গুণরাজদীর জনগণ তাকে প্রতিহত করেন এবং মারধরে করে গায়ের শার্ট ছিঁড়ে ফেলে। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার দায়েরকৃত মামলা আদালতে খারিজ হয়ে যায়।
বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর মার্কেটিং পদবী ব্যবহার করে ও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সিরাজুল ইসলাম বাবু বিভিন্ন এলাকার মানুষকে প্রতারিত করা, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর টাকা আত্মসাৎ ও গ্রাহকদের সাথে অশালীন আচরণ করার কারণে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী কর্তৃপক্ষ তাকে অন্যত্র বদলি করে দেয়।
মোঃ সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া নামে-বেনামে ও তার আপন ছোট ভাই মিন্টুর নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে জমি ক্রয় করেন। তার স্ত্রী তাছলিমা আক্তারের নামে ২২/১ দক্ষিণ মুগদাপাড়ায় মায়ের আঁচল নামে ফ্ল্যাট ক্রয় করেন এবং বিভিন্ন স্থানে জমি ক্রয় করেন।
মোঃ সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া (বাবু) নামে-বেনামে ব্যাংক ব্যালেন্স, স্ত্রী তাছলিমা আক্তার ও নিজ সন্তানদের নামে সোনালী ব্যাংক লিঃ, প্রধান শাখা, মতিঝিল, ঢাকা ও সিটি ব্যাংক লিঃ, প্রিন্সিপাল শাখা, দিলকুশা শাখায় এফডিআর-এর মাধ্যমে অনেক টাকা জমা রেখেছেন। প্রশ্ন হলো : তার এতো টাকা আয়ের উৎস কী?
সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার শাশুড়ি মরহুমা মোসাম্মৎ অহিদা বেগমের মৃত্যুর ৪ দিনের দোয়ানুষ্ঠানে তার শাশুড়ির অসিয়তনামা সকল ছেলে, বাড়ির লোকজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের অবগত হয়ে সেটি বাস্তবায়নে নিজ শ্যালিকা আকলিমা আক্তার সুইটিকে পাত্রস্থ করার ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে তার (বাবু) প্ররোচনায় ছেলের দোষ দেখিয়ে তাকে তালাক প্রদান করে। সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন থাকাকালীন মুখে রক্তক্ষরণ, ত্বকে রক্ত ভেসে ওঠা ও ডাক্তারি রিপোর্ট দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়ে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়। ডাক্তারীর রিপোর্ট ও মুমূর্ষু অবস্থা দেখে অনেক হাসপাতালে তাকে ভর্তি করেনি। পরবর্তীতে ধানমন্ডি জেনারেল ও কিডনি হাসপাতালে (আইসিইউ) সন্ধান সাপেক্ষে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি তার সুস্থতার জন্য ওয়াদা করে বলেন, মিথ্যা কথা বলবো না, নামাজ পড়বো, হজ¦ করবো। এছাড়া মক্কায় এক নিকটাত্মীয়কে হজ¦রত অবস্থায় উক্ত ওয়াদার কথা মোবাইল ফোনে শুনিয়ে দোয়া করতে অনুরোধ জানান। এর পরের দিন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেন। কিন্তু তারপরও তার দুর্নীতি ও বিভিন্ন অপরাধের প্রবণতা বন্ধ হয়নি।
এসব বিষয় নিয়ে সিরাজুল ইসলাম ভূইঁয়া বাবুর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি অকপটে সকল বিষয় অস্বীকার করেন। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দল করা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি কখনোই আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল করেন নি বলে জানান। তিনি বর্তমানে তাঁতীলীগের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। বিভিন্ন সময় মানুষকে হয়রানি প্রসঙ্গে বলেন, কাউকে কখনো তিনি হয়রানি করেছেন এমন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না। যদি কেউ তা প্রমাণ করতে পারে তাহলে তিনি দেশের প্রচলিত আইনে যে কোনো শাস্তি স্বেচ্ছায় মেনে নেবেন।