প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার সরস্বতী পূজামণ্ডপ
দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় অঞ্জলি প্রদান
দেশ ও জাতির মঙ্গল, নিজেদের সুখ শান্তি ও বৈশ্বিক মহামারি করোনা থেকে মুক্তি কামনা করে গতকাল ৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে দেশের বিভিন্নস্থানের ন্যায় চাঁদপুরেও অনুষ্ঠিত হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজা। প্রতিবছরই মাঘ মাসের শুক্ল পঞ্চমী তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মতে তারা জ্ঞানের দেবী, বিদ্যার দেবী শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজার আয়োজন করে থাকেন। এ বছরও ব্যাপক আয়োজনে এ পূজার আয়োজন করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বৈশ্বিক মহামারি করোনার ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে, কেন্দ্রীয় ও জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনেকটা অনাড়ম্বর পরিবেশে উদ্যাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন পূজার আয়োজকগণ।
|আরো খবর
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চাঁদপুরে ধারাবাহিকভাবে হয়ে আসা ঐতিহ্যবাহী সরস্বতী পূজার শোভাযাত্রা না করার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে ব্যাপক আয়োজনে এ বছর আয়োজন করা হয় সরস্বতী পূজার। নির্মাণ করেন সুউচ্চ তোরণ, পূজার প্যান্ডেল আর মনের মাধুরী মিশিয়ে পূজা ম-পের চারদিক সাজিয়ে তোলেন বিভিন্ন রংয়ের বাতি দিয়ে। দর্শনার্থীদের উৎসাহে বাড়তি আনন্দ ছড়িয়ে দিতে জেলা শহরের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয় বাদ্য-বাজনাসহ গগন বিদারী ইকো সাউন্ড সিস্টেম। কিন্তু গত শুক্রবার দিনে ও রাতের প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক পূজা ম-পেই দেখা দেয় বিষাদের ছায়া। প্রচ- ঝড়ে জেলা শহরের অনেক স্থানে ল-ভন্ড হয়ে যায় পূজারীদের নির্মাণকৃত সুউচ্চ তোরণসহ পূজা মণ্ডপের প্যান্ডেল ও আলোক সজ্জা। অবশ্য এদিনের ঝড়ে পূজাম-প ব্যতীত অনেকের বাড়ি-ঘর, নৌকা, জলযানসহ গাছপালারও ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়। রাতে বৃষ্টিকালীন পূজারীদের অনেককেই দেখা যায় কোনরকমে প্রতিমাকে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচিয়ে পূজাম-পে স্থাপন করতে। তবে বাদ্য-বাজনা সহকারে উৎসবমুখর পরিবেশে কেউই তেমন করে পূজাম-পে সরস্বতী প্রতিমা স্থাপন করতে পারেন নি। অনেকে আবার পূজার দিন সকালে ম-পে প্রতিমা স্থাপনপূর্বক পূজার আয়োজন করেন। প্রাকৃতিক বিপর্যয় আর অনবরত মুষলধারে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন মন্দিরে আয়োজিত পূজাম-প ব্যতীত বিভিন্ন ক্লাব, সংঘ ও বাড়ির উঠোনে আয়োজিত পূজাম-গুলোর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। ঝড়ে অনেক প্যান্ডেলসহ তোরণ ল-ভ- হয়ে যায়, প্যান্ডেলে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। সকালে পূজারীদের অনেককেই দেখা যায় জমে থাকা জল সরিয়ে শুকনো বালু দিয়ে পূজাম-পকে দর্শনার্থীসহ পূজার পরিবেশ উপযোগীভাবে গড়ে তুলতে। এজন্য তাদেরকে ব্যয় করতে হয় বাড়তি খরচ। সকালে অনেকটা নীরবে-নিঃশব্দে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হয় দেবী চরণে অঞ্জলি প্রদান পর্ব। তবে গত বছরের চেয়ে এ বছর অঞ্জলি প্রদান পর্বে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। ভক্তদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে গতকাল সকালে শহরের কালীবাড়ি মন্দিরে ৩বার অঞ্জলি প্রদান করতে হয়েছে বলে জানা যায়। এমন অবস্থা অনেক পূজা ম-পেই দেখা গেছে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি-ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই সন্ধ্যায় ম-পে ম-পে পূজা দর্শনের ব্যবস্থা থাকলেও আশানুরূপ বহিরাগত দর্শনার্থীর দেখা মিলেনি। এ বছর শহরের শ্রীশ্রী কালী বাড়ি মন্দির, রামকৃষ্ণ আশ্রম, কু-ের বাড়ি, মিনার্ভা পূজা মণ্ডপ, কদমতলা, সাহা বাড়ি, মজুমদার বাড়ি, ঘোষপাড়া সবুজসাথী পূজারী সংঘ, পালপাড়া পূজা মণ্ডপ, স্বর্ণখোলা, বড়স্টেশন ডকইয়ার্ড, নতুনবাজার গোপালের আখড়া, নতুনবাজার পালপাড়া, পুরাণবাজার মা সংঘ, পুস্তক সংঘ, মিলন সংঘ, বিদ্যাদায়িনী সংঘ, অমর সংঘ, হরিজন পল্লী, বাতাসাপট্টি বারোয়ারী পূজা মণ্ডপ, দোলন সংঘ, নবতারা সংঘ, বিদ্যার্থী, বিদ্যাময়ী সংঘ, অমিত সংঘ, ত্রিনয়নী, স্নেহময়ী, বনশ্রী, জাফরাবাদ পালপড়া, নিতাইগঞ্জ, দাসপাড়াসহ বিভিন্নস্থানে উল্লেখযোগ্য পূজা অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। এছাড়াও চাঁদপুর সরকারি কলেজ, হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পুরাণবাজার মধুসূদন হরিসভা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হলেও তা ছিলো নিয়মের পূজা। করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পূজায় দল বেঁধে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়নি। এ বছর সকল পূজামণ্ডপের আয়োজনও অত্যন্ত সৌন্দর্যম-িতভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে পরিলক্ষিত হয়। জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজও দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে প্রতিমা দর্শনের ব্যাবস্থা থাকবে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর জানান, সরস্বতী পূজা ও পূজার পরদিন সরস্বতী প্রতিমা নিয়ে শহরে অনুষ্ঠিত শোভাযাত্রা ছিল চাঁদপুরের ঐতিহ্য। করোনার কারণে এ বছর তা বের হবে না। এছাড়া কেন্দ্রীয় ও জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে পূজারীগণ তাদের আয়োজন সম্পন্ন করতে চেষ্টা করেছেন। আমরা আশা করি শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই সরস্বতী পূজা সম্পন্ন হবে। এজন্য তিনি জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।