বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

জ্ঞান সাধনায় ভূমিকা রাখছে রাউফেন মজিদ স্মৃতি পাঠাগার
ফরিদগঞ্জ ব্যুরো ॥

আধুনিক সভ্যতার এই যুগে যখন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারে ঝুঁকছেন ঠিক তখনই মানুষকে বই পড়ার দিকে আকৃষ্ট করে তুলতে ফরিদগঞ্জের নিভৃত এক পল্লীতে গড়ে তোলা হয়েছে নান্দনিক ‘রাউফেন মজিদ স্মৃতি পাঠাগার’।

প্রতিদিন পাঠাগারে জ্ঞান অর্জন করতে আসছে নানা বয়সী মানুষ ও শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে পাঠাগারটি এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে।

উপজেলার গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের খাজুরিয়া বাজারের পূর্ব মাথায় পাঠাগারটি অবস্থিত। ওই এলাকার আগামী প্রজন্মকে মাদক থেকে বাঁচাতে এবং জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে নিজ উদ্যোগে পাঠাগারটি তৈরি করেছেন রোটারিয়ান গিয়াস উদ্দিন খান। বই পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে এবং মানবিক মানুষ গড়ার লক্ষ্যে তিনি এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

ওই ইউনিয়নের কৃতী সন্তান ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন খান নিজ এলাকার যুব সমাজকে মাদক, ইভটিজিংসহ অপরাধমূলক কর্মকা- থেকে দূরে রাখতে সম্পূর্ণ নিজ খরচে নান্দনিকভাবে এই পাঠাগারটি তৈরি করেন। ২০১৭ সালে ১৮ শতক জমির উপর পাঠাগারটি স্থাপন করেন। প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে পাঠাগারটিতে টেবিল, সেলফ ও আলমিরাতে থরে থরে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন বই। পাঠাগারটিতে শোভা পাচ্ছে ইতিহাস, প্রবন্ধ, সাহিত্য, সংস্কৃতি, গল্প, মুক্তিযুদ্ধ, ছোট গল্প, ইসলাম, জীবনী, খেলাধুলা, শিশুতোষ, ঐতিহ্যসহ প্রায় ৬ হাজারেরও বেশি বই।

পাঠাগারটিতে প্রবেশ করলে এক নজরে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে। প্রতিদিন জ্ঞান অর্জনের জন্য সব বয়সীরা ছুটে আসছেন পাঠাগারে। যেখানে একসঙ্গে ৪০-৫০ জন বসে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। যেখানে বইপত্র ও ডেকোরেশনসহ আনুষঙ্গিক প্রায় কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। পাঠাগারটি দেখাশুনার জন্যে একজন লাইব্রেরিয়ান ও একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী রয়েছেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা রোটাঃ গিয়াস উদ্দিন খান বলেন, বর্তমান সময়ে আধুনিক সভ্যতার এই কালে সবাই কেমন যেন বই পড়া থেকে অনেক পিছিয়ে যাচ্ছি। আমি মনে করি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় একজন মানুষকে মানবিক হিসেবে তৈরি করার ক্ষেত্রে পাঠাগারের বিকল্প নাই। আমাদের সমাজে ছেলেমেয়েরা পাঠ্য বইয়ের বাইরে খুব কমই জ্ঞান রাখে। তাই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করতে হলে ভালো মানুষ বা মানবিক মানুষ তৈরির বিকল্প নেই। সেজন্যে তাদেরকে শিল্প সাহিত্য বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে। তাই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। মানুষ যদি বই পড়ে তাহলে তার মধ্যে ভালো বোধ এবং চেতনা জন্ম গ্রহণ করবে। তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হবে।

তিনি আরো বলেন, জ্ঞান চর্চার অভাবে আমাদের সমাজে প্রগতিশীল চিন্তাধারার মানুষের বড়ই অভাব। আগামী সমাজ ব্যবস্থা হবে জ্ঞান নির্ভর। আর এ চিন্তাধারা থেকে আমার প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে এমন উদ্যোগ নিয়েছি।

পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইডিয়াল সমাজসেবা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক পারভেজ মোশারফ বলেন, একটা ইউনিয়ন পর্যায়ে এতো সুন্দর পাঠাগার পাবো তা কল্পনার বাইরে। অবসর সময়ে আমরা পাঠাগারে এসে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করছি। আমাদের এ গ্রামাঞ্চলে এত সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করায় গিয়াস উদ্দিন খান সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

হাবিবা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি সত্যিই মুগ্ধ এমন একটি পাঠাগার স্থাপন করায়। আমরা প্রতিদিনই কয়েকজন শিক্ষার্থী এখানে আসি বই পড়তে। ইতিহাস, সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধ, খেলা-ধুলাসহ সব ধরনের বই এখানে আছে।

খাজুরিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লিটন চন্দ্র সাহা বলেন, এটি অনেক মহৎ একটি উদ্যোগ। একটি পাঠাগারের যে ধরনের পরিবেশ থাকা দরকার তার সব ক’টিই এখানে বিদ্যমান। পাঠাগারটি উপযোগী সময়ে তৈরি করা হয়েছে। আমি নিজেও অবসর সময়ে পাঠগারে এসে বই পড়ি। আমার শিক্ষার্থীদের পাঠাগারে যাওয়ার জন্যে উদ্বুদ্ধ করেছি। এখন পাঠক সংখ্যা কম দেখছি। তবে আগামীতে প্রচার-প্রচারণা বাড়লে পাঠকদের সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়