বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

দলীয় কোন্দলে ফরিদগঞ্জ আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ
প্রবীর চক্রবর্তী ॥

দলীয় কোন্দলে ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ ক্রমশ বাড়ছে। যতই দিন যাচ্ছে, একটির পর একটি নির্বাচন মাঠে গড়াচ্ছে তো তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। এমপির সাথে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব, এমপির সাথে উপজেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব, সাবেক এমপির গ্রুপের সাথে বর্তমান এমপি গ্রুপের দ্বন্দ্ব, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে অপ্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ক্রমেই বাড়ছে এবং প্রকাশ্যে রূপ নিচ্ছে। এই অবস্থান থেকে উত্তরণের কোনো উপায় খুঁজছে না কেউ। এই সুযোগে দ্বিধাবিভক্ত বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনগুলো নিজেদের অবস্থান ক্রমশ মজবুত করছে। যার বড় উদাহরণ সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা স্বতন্ত্রের আড়ালে জয়লাভ করে। যদিও তিনটি ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। ওই তিনটি ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করলে তাদের বিজয়ের সংখ্যা বাড়লেও বাড়তে পারতো।

দলীয় কোন্দলের কারণে নৌকার ভরাডুবি বিষয়ে গত ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভায় বক্তাদের বক্তব্যে এবং ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পর পর অনুষ্ঠিত দুটি সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের বিজয়ী ও বিজিত প্রার্থীদের বক্তব্যে অভিযোগ উঠে এসেছে।

এমনিতেই ফরিদগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই দুটি ধারায় বিভক্ত ছিল। একটি সাবেক এমপি ড. মোহম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়ার অনুসারী এবং অপরটি বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমানের অনুসারী।

সাবেক এমপি ক্ষমতায় থাকাকালে বর্তমান এমপি পুলিশ প্রকেটশন নিয়ে সভা-সমাবেশ করেছেন। তার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। শোক দিবসের অনুষ্ঠানে দলীয় নেতৃবৃন্দ আসার সময় বিভিন্ন ইউনিয়নে হামলার শিকার হয়েছেন। এই বিষয় নিয়ে ওই সময়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান নির্বাচিত হওয়ার পর পরিস্থিতি উল্টে যায়। বর্তমান এমপির অনুসারীরা দীর্ঘদিন পর রাজনীতির মাঠে পুরোপুরিভাবে প্রকাশ্যে আসে। শুরু হয় দুই গ্রুপের মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব।

সংসদ নির্বাচনের পরপরই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নতুন মোড় নেয়। সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমানসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপর প্রকাশ্যে হামলার ঘটনায় আলোচনায় চলে আসেন জাহিদুল ইসলাম রোমান। সকলকে চমকে দিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন তিনি। ফলে সাবেক ও বর্তমান এমপি বলয়ের বাইরে নতুন বলয় রাজনীতিতে খুঁটির জোর পায়। যদিও জাহিদুল ইসলাম রোমান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে বর্তমান এমপির দূরত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে।

এক বছর পর ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে উপজেলা আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়ার উপস্থিতিতে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আওয়ামী লীগের দলীয় অফিস, সাইনবোর্ড, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও ভাংচুর হয়। আহত হন আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী। এসব হামলার ঘটনায় মামলা ও পাল্টা মামলায় এখনো উভয় পক্ষের শীর্ষস্থানীয় নেতারা নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।

ফলে গত তিন বছরে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে শক্তিশালী হওয়ার পরিবর্তে দুর্বল হয়েছে। সর্বশেষ উদাহরণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত তিনজন প্রার্থী নৌকা নিয়ে বিজয়ী হতে পেরেছেন। বাকি ১০টির মধ্যে ৪টি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও ৬টি স্বতন্ত্রের আড়ালে বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হন। আবার আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা যেসব ইউনিয়নে বিজয়ী হয়েছেন তার মধ্যে ৩টি ইউনিয়নে বিএনপির কোনো প্রার্থী ছিলো না।

ইউপি নির্বাচনের পর শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের প্রকট বহিঃপ্রকাশ। কার বা কাদের কারণে আওয়ামী লীগের এই পরাজয়, এই নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে বিজয়ী ও বিজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অভিযোগ করার পর পাল্টা বিবৃতি দিয়ে সেসব খ-ন করছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। তবে অদ্যাবধি উপজেলা আওয়ামী লীগ এসব বিষয়ে কোনো বিবৃতি বা সংবাদ সম্মেলন করেন নি।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর নৌকার ভরাডুবিতে দলীয় গ্রুপিংই যে দায়ী তা অনেকেই প্রকাশ্যে বলছেন। ফলে এসব কারণে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। দ্রুত কোন্দল সমাধান না হলে রক্তশূন্য আওয়ামী লীগের ভার সামলানো কঠিন হবে বলে মনে করেন আওয়ামী প্রেমীরা।

বেশ ক’জন আওয়ামী লীগ কর্মী বলেন, কয়েক মাস পূর্বে অনুষ্ঠিত চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে বিষেদোগার করে দলের ভাবমূর্তি নয়, উপজেলার বদনাম করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিজিত একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, দলীয় কোন্দলে আমরা বলির পাঠা হলাম। কিন্তু তারপরও এখনই সময় আছে, কেন্দ্র যদি এসব সমস্যা সমাধানে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তবে আগামী সংসদ নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বেই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়