প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৭
বইপড়ার গুরুত্ব
একজন মানুষকে সত্যিকারে মানুষ হতে হলে সবচেয়ে বেশি যেটার প্রয়োজন তা হলো সুশিক্ষা, আর শিক্ষার অন্যতম উপকরণ হলো বই, কেননা লিখিত ভাষার প্রচলন শুরুর পর থেকে জ্ঞানী গুণীরা হাজারো রহস্যকে উন্মোচন করে বইয়ের মাঝে লিপিবদ্ধ করে রেখে গেছেন।
পৃথিবীতে একটা সময় ভাষা ছিলো না, কালের পরিক্রমায় মানুষ তার জ্ঞানের উপযুক্ত ব্যবহার করে ভাষার আবির্ভাব ঘটায়, ধীরে ধীরে ভাষার লিখিত প্রচলন ও শুরু হয় দুনিয়া জুড়ে, এর পর থেকেই মানুষ তাদের হাসি কান্না বিরহ বিচ্ছেদকে বইয়ের মাঝে লিপিবদ্ধ করতে শুরু করেন।
গুণীরা কোটি কোটি মূল্যবান তথ্য বইয়ের পাতায় শব্দের শিকলে সংরক্ষণ করে তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জীবনকে সহজ ও আধুনিক করে গেছেন। বই এমনি এক উপকরণ যা দিয়ে অতীত ও ভবিষ্যতের মাঝে সেতুবন্ধন জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাইতো মহা কবি ওমর খৈয়াম লেখেছেন, বেহেস্তের রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হবে, তবুও চির যৌবনা রয়ে যাবে একখানা বই! আসলেই বই গুলো জীবন্ত ও চিরযৌবনা।
একটি ভালো বই একজন মানুষের জীবন বদলে দিতে তুমুল ভূমিকা রাখতে সক্ষম। একজন তরুণ তরুণীর পড়ার টেবিলে দশটি ভালো বই আছে মানে তার দশ'জন ভালো বন্ধু আছে এবং তার অন্তত দশটি ভালো গুন আছে, কেননা যার সঙ্গ গড়ে উঠে বইয়ের সাথে তার জীবন তো বইয়ের আলোয়ে আলোকিত হবেই।
বই এমনি এক আলোকবর্তিকা যা হাজারো আঁধার হৃদয়ের মাঝে আলোর সঞ্চার করে, ঘুমন্ত হৃদয়কে করে জাগ্রত নির্ভীক। বই মানুষের জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়ে হৃদয়কে করে তুলে বিস্তৃত বিশাল। যদি বইয়ের সৃষ্টি না হতো তবে মানুষ তার বিচ্ছেদকে উপন্যাসে রূপ দিতে পারতো না, কিংবা ভাবনার রূপালি জগতকে বাঁধতে পারতো না কবিতার রঙিন দেয়ালে। বইয়ের সৃষ্টি না হলে হাজারো গবেষকের অফুরন্ত রহস্যের আবিস্কার জানা হতো না পৃথিবীর, ফলে মানব সভ্যতা আজ উন্নয়নের যে পর্যায়ে পৌঁছাছে তার কিছুই সম্ভব হতো না বই ছাড়া।
বই এমনি এক জাদুকরী বিস্ময়, যা হাজারো গুণীজনের জ্ঞানকে এক অদৃশ্য শিকলে একত্র করে রেখেছে। মানব সভ্যতার এ চূড়ান্ত আধুনিকায়নে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখে চলছে বই। বই ঘুমন্ত জনপদকে জাগিয়ে তুলতে পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে চলছে নিরবে। সবার উচিত বেশি বেশি বই পড়া। বই পড়লে শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জন হয় বিষয়টি সেখানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বই সুস্থ বিনোদনের সুন্দর মাধ্যম ও হতে পারে, কিংবা হতে পারে একাকিত্ব সময়ের পরম বন্ধু।
বই মানুষের ভীতরের সংকীর্ণতাকে মুছে হৃদয়কে করে তুলে অভিসারী আকাশের মত সুমহান। এই বৈচিত্র্যময় পৃথিবী কিংবা রহস্যে ঘেরা মহাবিশ্ব সম্পর্কে জানতে বই হতে পারে এক আশ্চর্য সমাধান, এটি আপনাকে সফল ও সাবলীল মানুষ হতে সাহায্য করে, কেননা গবেষণায় দেখা গেছে পৃথিবীর সফল মানুষেরা প্রচুর বই পড়তে ভালোবাসে।
খুবই দুঃখজনক হলেও সত্যি যে বর্তমান পরিবর্তনশীল বিশ্বে মানুষ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক টিকটক সহ নানান সোস্যাল জগতে নিজেদের অধিকাংশ সময় ব্যায় করে দিচ্ছে, যার ফলে বই পড়ার প্রবনতা বর্তমান প্রজন্মের ভীতর আশংকাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে।
আমাদের দেশের সচেতন নাগরিকদের বেশি বেশি বই পড়া উচিত এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের বই পড়তে উৎসাহিত করা উচিত। একটি সুন্দর প্রাণবন্ত সমাজ ব্যবস্থা চালু রাখতে বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। বই পড়ার স্পৃহা জাতির মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলেই একটি কাঙ্ক্ষিত মানবিক সমাজ ও সুন্দর পৃথিবী গড়া সম্ভব হবে।