মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   প্রাইভেটকারের ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত: ডোপ টেস্টে ধরা পড়ল মাদকাসক্তি
  •   সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ীর ২৩ লাখ টাকা ছিনতাই: স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ
  •   চাকা পাংচার হওয়ায় এনজিও কর্মকর্তার মৃত্যু
  •   বরগুনায় টিকটক নিয়ে পারিবারিক কলহ: স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী আত্মহত্যার চেষ্টা
  •   মানব পাচারের চক্রের বিরুদ্ধে বিজিবির সফল অভিযান: কিশোরী উদ্ধার, তিন আটক

প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২১, ০০:০০

চাঁদপুরে ২২৫টি কোরবানির পশুর হাট বসবে
মিজানুর রহমান ॥

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে এবার কোরবানির পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে চাঁদপুর পৌরসভা, সদর উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলা ও পৌরসভার পক্ষ থেকে ১৪২৮ বাংলা সনের অস্থায়ী গরু ছাগলের হাট-বাজার ইজারা চূড়ান্ত করতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২১ জুলাই মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে এবার কোরবানির পশুর হাট বসবে কি না সে নিয়ে দ্বিধা ছিলো। এবার পশুর হাট বসছে এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে।

প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, সকল প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কোরবানির পশুর হাট বসবে। এখন দেখার বিষয় মুখে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে নাকি আরও বাড়তি সতর্কতা থাকবে।

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, কোরবানির পশুর হাট বসবে, তবে লকডাউনের মধ্যে কোনো গরুর হাট বসবে না। ১৪ জুলাইয়ের পরে বসবে। এ ব্যাপারে সরকার থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আসবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ বখতিয়ার উদ্দিন জানান, এবার কোরবানির জন্যে কৃষক পরিবার, গৃহস্থ ও খামারিদের প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার গরু ও ২৯ হাজার ছাগল প্রস্তুত রয়েছে। পশুর হাটে আমাদের মেডিকেল টিম যাবে এবং মনিটরিং টিম থাকবে।

জানা যায়, জেলায় এবার মোট পশুর হাট বসবে ২২৫টি। এর মধ্যে স্থায়ী গরুর হাট ১৯৯টি ও অস্থায়ী ২৬টি (কমতে ও বাড়তে পারে)।

চাঁদপুর পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর শহর এলাকায় তিনটি গরুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। অপরদিকে চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রশাসন তাদের ১৪টি ইউনিয়নে ২৪টি অস্থায়ী গরু-ছাগলের হাট-বাজার ইজারা আহ্বান করেছে।

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং সারাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় কোরবানির পশু নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে খামারিদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে হৃষ্টপুষ্টকরণ ও লালন-পালনের মাধ্যমে প্রতিবছরের মতো এবারও খামারিরা কোরবানির পশু প্রস্তুত করেছেন। এখন বিক্রি করার জন্যে অপেক্ষা করছেন। তবে গত বছরের মতো এবারও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনাভাইরাস। বিশেষ করে এবার করোনার শক্তিশালী ধরণটি সারাদেশে ছাড়িয়ে পড়ায় শেষ পর্যন্ত কোরবানির পশু বিক্রির অবস্থা কী দাঁড়ায় তা নিয়ে খামারিদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার ঈদগাহ ফেরিঘাট এলাকার গোয়ালা আবুল বাশার জানান, তাদের চর এলাকার প্রায় দুই তিনশ’ গরু-ছাগল রয়েছে। এসব পশু কোরবানির ঈদের দুই-তিনদিন আগে পুরাণবাজার ওসমানিয়া মাদ্রাসার হাটে উঠবে।

ঐতিহ্যবাহী এ মাদ্রাসা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন চুন্নু জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ওসমানিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা মাঠে কোরবানির পশুর হাট বসবে। ইতিমধ্যে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। চরাঞ্চলের অনেক গরু-ছাগল এই হাটে বিক্রির জন্যে আনা হয়।

তরুণ উদ্যোক্তা ও খামারি, চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হাসান মুন্না জানান, তিনি পুরাণবাজার এলাকায় পূর্ব শ্রীরামদীর বাড়ির পাশে স্বপ্ন ডেইরি ফার্ম নামে খামার গড়ে তুলেছেন। এই খামারে কোরবানি ঈদের জন্যে ১৩টি গরু প্রস্তুত করেছেন। এক লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা দামের গরু তার ফার্মে রয়েছে। দেশীয় প্রযুক্তিতে এগুলো লালন-পালন করা হয়। যারা কোরবানি দিবেন তাদের পছন্দ হবে।

১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের রঘুনাথপুর তিনগাছ তলার জৈনপুরী ডেইরী খামারের মালিক, ধান-চাল ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন জানান, তার ফার্মে ২৪টি গরু রয়েছে। এগুলোর সম্ভাব্য মূল্য এক লাখ টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকা।

এছাড়া আরও ক’জন খামারি জানান, কোরবানি ঈদের আগে কঠোর লকডাউন তথা বিধি নিষেধের মুখে কোরবানিযোগ্য পশু নিয়ে তারা বিপাকে আছেন। খামারিদের প্রত্যাশা ছিলো আসন্ন কোরবানি ঈদে ভালো দামে পশু বিক্রি করে গতবারের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া। তবে এবারও আশায় গুড়েবালি হয়েছে। করোনারোধে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধে চিন্তিত চাঁদপুরের খামারি ও পশু ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুরে ৩২শ’ খামারি রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ঈদের একমাস আগেই ব্যস্ত সময় পার করেন পশু ব্যবসায়ী ও খামারিরা। এখন বিপুলসংখ্যক পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।

ছোটখাট খামারিদের মধ্যে তেমন কোনো চিন্তা কাজ না করলেও চরম দুশ্চিন্তায় আছেন বড় খামারিরা। খামারে পালিত পশুগুলোর ক্রেতা ধরার জন্যে অনেকেই করছেন আগাম প্রচার। খামারিরা বলেন, ঈদের আগ পর্যন্ত এভাবে বিধিনিষেধ চলতে থাকলে অনেক বিপদে পড়বেন তারা। ঈদের আগে তিন/চার দিনের জন্যে হলেও চাঁদপুরের হাটে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

তাদের ভাষ্য, আমরা লাভ চাই না, অন্তত আমাদের বিনিয়োগ ও খরচের টাকা উঠে আসুক। আবার খামারিদের একাংশের মনে সন্দেহ, হাট খুলে দিলেও কি হাটে ক্রেতা আসতে পারবে? ক্রেতা হাটে আসতে না পারলে হাট খুলে দিয়েও কোনো লাভ হবে না, উল্টো ভোগান্তিতে পড়তে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়