প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২১, ০০:০০
১৫ মাসে চাঁদপুর জেলায় যতো সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, এর অর্ধেক চাঁদপুর সদর উপজেলায়। এ যেনো সারাদেশের সাথে পাল্লা দিয়ে চাঁদপুর যেমনি শনাক্তের হারে দ্বিগুণ, তেমনি জেলায় মোট আক্রান্তের মধ্যে সদর উপজেলা দ্বিগুণ। আবার সদরে যতো সংখ্যক আক্রান্ত হয়েছে, এর ৮০ ভাগ চাঁদপুর শহরের। এই শহরের এমন কোনো পাড়া-মহল্লা নেই যেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন মানুষ নেই। কোনো কোনো পাড়া-মহল্লার অধিকাংশ বাসা-বাড়িতেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন মানুষ রয়েছে। শুধু তাই নয়, এই শহরে এমন অনেক পরিবার পাওয়া যাবে, যেসব পরিবারের একাধিক সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকি পরিবারের সকল সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। মাত্র নয় ঘণ্টার ব্যবধানে বাবা-মাকে হারিয়েছেন এমন পরিবারও চাঁদপুর শহরে রয়েছে। গত বছরের এপ্রিল মাসে চাঁদপুরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। গতকাল ৭ জুলাই চাঁদপুরে করোনা শনাক্তের ১৫ মাস পূর্ণ হলো। টানা এই পনর মাসে অনেক পরিবার তার স্বজনকে হারিয়েছে। কোনো কোনো পরিবারের সদস্যের এমন মৃত্যুও হয়েছে, যার চিকিৎসার সুযোগও হয়নি। চাঁদপুর জেলা শুরু থেকেই করোনায় ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত। সারাদেশে শনাক্তের হারের চেয়ে চাঁদপুরে শনাক্তের হার শুরু থেকেই বেশি। এই ঊর্ধ্বগতি এখনো চলমান। এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে চাঁদপুর। শনাক্ত সর্বোচ্চ ৪৭.৭২ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। যা সারাদেশের সর্বোচ্চ হারের চেয়ে দ্বিগুণ।
চাঁদপুর জেলার এই পনর মাসের করোনার পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, জেলায় করোনায় মোট আক্রান্তের মধ্যে প্রায় অর্ধেক সদর উপজেলায়। বাকি অর্ধেক অন্য সাত উপজেলায়। চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, গত বছরের ৭ এপ্রিল থেকে গতকাল ৭ জুলাই পর্যন্ত এই পনর মাসে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছে মোট ৫৮০৭ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৭৪৬ জন। যা মোট আক্রান্তের ৪৭.৮১ ভাগ। এই পনর মাসে জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১২৮ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪৯ জন। সদর উপজেলার পরে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ফরিদগঞ্জ। এ উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছে ৬৪২ জন, মারা গেছে ২২ জন।
সদর উপজেলায় আক্রান্ত এতো বেশি কেনো জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, জেলার মধ্যে সদর উপজেলায় প্রায় অর্ধেক, আবার সদরের মোট আক্রান্তের মধ্যে চাঁদপুর শহরে হবে ৮০ ভাগ। সদরে এবং শহরে বেশি আক্রান্ত হওয়ার কারণ হচ্ছে, সদরে মানুষের মুভমেন্ট বেশি। জেলা শহরসহ আট উপজেলা এবং আশপাশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলার মানুষ ঢাকা, চট্টগ্রাম আসা-যাওয়া করতে চাঁদপুর শহরকে ব্যবহার করে থাকে। বিশেষ করে নদীপথ এবং রেলপথে পুরো জেলারসহ আশপাশের কয়েকটি জেলা, উপজেলা ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ যাতায়াত করে থাকে। মোটকথা চাঁদপুর শহর হচ্ছে একটা ট্রানজিট পয়েন্ট। সে কারণে এই শহরে মানুষের বিচরণ বেশি থাকে। এ কারণেই মূলত চাঁদপুর শহর এবং সদর উপজেলায় করোনার সংক্রমণ বেশি থাকে সবসময়। আর স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। সিভিল সার্জন বলেন, সদরে করোনার প্রকোপ কমাতে হলে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া বিকল্প নেই।