প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:৫৭
১৯ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন হাফেজ আব্দুল খালেকের
কথা ছিল কোরআনের পাখি হয়ে ইসলামের শান্তির বাণী ছাড়াবেন সর্বত্র। বাবা-মায়ের শেষ যাত্রায় জানাজায় ইমামতি করবেন। মেধাবী আব্দুল খালেক বাবা-মায়ের আশার প্রদীপ হয়ে কোরআনে হাফেজ হয়েছিন ঠিকই, কিন্তু এর চেয়ে বেশিদূর এগুতে পারেননি। মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গত ১৯ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। নিজেদের সবটুকু দিয়ে পরিবারের সদস্যরা প্রথম প্রথম চিকিৎসা করালেও অর্থাভাবে আর পারছেন না। ফলে নিয়তির নির্মম পরিণতি হিসেবেই হাফেজ আব্দুল খালেকের শিকলবন্দি জীবনকে মেনে নিয়েছেন। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার ভোটাল গ্রামের। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের ভোটাল গ্রামের মৃত আবদুল কুদ্দুসের ছেলে হাফেজ আব্দুল খালেক। তারা ৫ ভাই ৩ বোন। ভাইয়ের মধ্যে ৩য় আব্দুল খালেক ছিলেন সকলের আদরের। মেধাবী হওয়ায় ছেলেকে হাফেজ বানানোর ইচ্ছা থেকে পার্শ্ববর্তী জয়শ্রী রাহমানিয়া আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় দেন আবদুল কুদ্দুস। নিদিষ্ট সময়ে আব্দুল খালেক কোরআনে হাফেজ হন। কিন্তু বিধিবাম, হাফেজ হওয়ার কয়েক মাস পর থেকে আস্তে আস্তে খালেক মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকে। পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী তার চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু একটা সময়ে পরিবারের সদস্যরা আর্থিক অনটনের মুখে চিকিৎসা বন্ধ করে দেন। ফলে সুস্থ না হওয়ায় বসতঘরের একটি কক্ষে হাফেজ আব্দুল খালেককে গত ১৯ বছর শিকলবন্দি মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। আব্দুল খালেকের বৃদ্ধা মা শামসুন্নাহার বলেন, ছেলে হাফেজ হয়ে ইসলাম প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে নিজের বাবা-মায়ের শেষ যাত্রায় জানাজার নামাজে ইমামতি করবেন। কিন্তু ওই সন্তান হাফেজ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মানসিক ভারসাম্য হারানোয় তার জীবন ঘরে শিকলবন্দি অবস্থায় কাটছে। আমি নিজেই এখন চলতে ফিরতে পারি না। গত ১৪ বছর পূর্বে তার বাবা পুত্রের শোকে মারা গেছেন। হাফেজ আব্দুল খালেকের ভাই আবু বকর সিদ্দিক ও বেলায়েত হোসেন বলেন, সে বিভিন্ন সময় ঘরের আসবাবপত্র ভেঙ্গে ফেলতো। অনেক সময় এদিক-সেদিক চলে যেতো । এমনকি আমাদেরও মারধর করতো। যদিও ইদানিং শারীরিক দুর্বলতার কারণে কিছুটা শান্ত সে। পরিবারের পক্ষে সারাক্ষণ দেখে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। এজন্যে তাকে ঘরে এভাবে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। পারিবারিক অার্থিক অনটনের কারণে উন্নত চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না। ভাইয়ের চিকিৎসায় সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন তারা। আ. খালেকের প্রতিবেশী এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ ওবায়দুল হক, আলী আহমদ, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন বলেন, একজন কোরআনে হাফেজের এমন মানবেতর জীবন খুবই দুঃখজনক। সরকার বা সমাজের বিত্তবানরা যদি পাশে দাঁড়ায়, তবে বিশ্বাস করি হাফেজ আব্দুল খালেক সুস্থ হয়ে উঠবে। আব্দুল খালেকের সহপাঠী হাফেজ আহমেদ বলেন, আমি ও খালেক একসাথে পড়ালেখা করেছি। সে খুব মেধাবী ছিলো। হাফেজও হয়েছে। কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে এখন শিকলবন্দি। তাকে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, হাফেজ আব্দুল খালেকের বিষয়ে জানতে পেরে আমরা নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়েছি এবং একটি প্রতিবন্ধী ভাতার বই করে দিয়েছি। জয়শ্রী রাহমানিয়া আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ হাফেজ মহসিন মিয়া বলেন, আবদুল খালেক খুব মেধাবী ছাত্র ছিলো। হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বর্তমানে সে শিকল বাঁধা অবস্থায় আছে, বিষয়টি দুঃখজনক।