প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২১, ০০:০০
ক্রীড়াকণ্ঠের সাথে আলাপচারিতায় সাবেক ক্রিকেটার শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল
জেলায় স্কুলভিত্তিক ক্রিকেট খেলার আয়োজন বেশি করা প্রয়োজন
ছোটকাল থেকেই ফুটবল ও ক্রিকেটের প্রতি ছিলো প্রবল আগ্রহ। আর এই আগ্রহের কারণে এবং বাবা ও মায়ের অনুপ্রেরণায় ক্রিকেট খেলেছেন। খেলেছেন নিজ জন্মভূমির শহরে। শহর থেকে জেলা পর্যায় পার হয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে। বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার পর খেলেছেন ঢাকার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত বড় বড় ক্রিকেট ম্যাচগুলোতে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পড়াশোনা করাবস্থায়ও ইংল্যান্ড (লন্ডনে) নিজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্থানীয় একটি ক্রিকেট ক্লাবেও খেলেছেন। একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও চেষ্টা করেছেন নিজের থেকে এবং পারিবারিক অবস্থান থেকে খেলোয়াড়দের ও সংগঠনকে সহযোগিতা করার জন্যে। তিনি এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে এক সময় জড়িত ছিলেন, যেই প্রতিষ্ঠান আজ সারা বাংলাদেশে পরিচিত একটি নাম। আর সেই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়ার পরই তিনি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যান। তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ক্রিকেট কোচ ও খেলোয়াড়দের সাথে একত্রিত হয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। সামাজিক অবস্থানে থেকে সাধারণ মানুষকে সেবা দেয়ার জন্যে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রোটারীর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। পারিবারিকভাবে ঐতিহ্যবাহী ইটের ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। বতর্মানে চাঁদপুর ক্লাবের হয়ে ইনডোর গেমস্ খেলে যাচ্ছেন। পারিবারিক ইটের ব্যবসার পাশাপাশি বর্তমানে অনলাইন ব্যবসা ইনটাইম ম্যানেজমেন্টের পরিচালক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
উপরে যাকে নিয়ে এতো কথা বিবৃত করলাম, তিনি হলেন ক্রীড়াঙ্গনের বিশেষ পরিচিত মুখ রোটারিয়ান শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল, পিএইচএফ।
হাসি মুখে থাকা এই মানুষটিকে সোহেল নামে সকলে দ্রুত চিনে ফেলে। তার বাবা হলেন চাঁদপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত আলহাজ্ব শেখ আঃ রশিদ। তার মায়ের নাম খোদেজা বেগম। তারা ১ ভাই ২ বোন। তার বোন সাবরিনা সুলতানা বন্যা গৃহিণী এবং আরেক বোন আমিনা রশিদ ইভা কার্ডিয়াক সার্জন হিসেবে ঢাকার সুপ্রতিষ্ঠিত ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হাসপাতালে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সোহেল ২০০৪ সালে বিজয়ের মাসে অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর চাঁদপুরের পার্শবর্তী জেলা কুমিল্লার উজির দিঘিরপাড় এলাকার বিশিষ্ট ঠিকাদার ব্যবসায়ী সৈয়দ আহমেদের একমাত্র মেয়ে সানজিদা সারমিনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার ১ মেয়ে ও ১ ছেলে। মেয়ে ওয়ানিহা সাহেল ঢাকায় মাস্টার মাইন্ড স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে। আর একমাত্র ছেলে শেখ মোঃ ওয়ালির বয়স মাত্র ৫ বছর। তিনি চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সাবেক সভাপতি, চাঁদপুর ক্লাবের সদস্য, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্যসহ বিভিন্ন সেবামূলক ও ক্রীড়া সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন। তিনি চাঁদপুরের সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়ে ওঠা ফরমার ক্রিকেট এসোসিয়েশন অব চাঁদপুর (এফসিসি)-এর বর্তমান সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
সোহেল প্রাইমারী শিক্ষা জীবন শেষ করেন শহরের মিশন স্কুল থেকে। এরপর হাসান আলী সরকারি হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন চাঁদপুর সরকারি কলেজে। চাঁদপুর কলেজে পড়াশোনা শেষ করে ভর্তি হন ঢাকার আইইউবিএটিতে। সেখানে পড়াশোনা করাবস্থায় ক্রেডিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে কানাডার কেমসলুক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ সেমিস্টার শেষ করে লন্ডনে মেট্রোপলিটিন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। ওখান থেকেই বিবিএ ও এমবিএ শেষ করে দেশে চলে আসেন। দেশে আসার পর বাংলাদেশের বহুল পরিচিত প্রতিষ্ঠান আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে কাজে যোগদান করেন। সেখান থেকে পরবর্তীতে তিনি ক্লেমন স্পোর্টস ডেভলপমেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ শুরু করেন। অনেকদিন আকিজ গ্রুপের সাথে জড়িত থাকার পর পুনরায় নিজ জন্মভূমিতে ফিরে আসেন বাবার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে। ছোটবেলায় তিনি শুধুমাত্র ফুটবল ও ক্রিকেটের সাথে জড়িত থাকলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্রীড়াজগতে আরো নতুন ৪টি ইভেন্টের সাথে জড়িয়ে পড়েন। আর সেই নতুন ৪টি খেলা চাঁদপুর ক্লাবের ইনডোরে নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি ক্রিকেটে উইকেটরক্ষকের বড় দায়িত্বসহ ওপেনিং ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। অনেক ব্যস্তময় এই সাবেক ক্রিকেটারের সাথে চাঁদপুর কণ্ঠের পাক্ষিক আয়োজন ‘ক্রীড়াকণ্ঠে’র এ প্রতিবেদকের আলাপচারিতায় গত শনিবার দুপুরে চাঁদপুর রোটারী ক্লাব মিলনায়তনে তিনি তুলে ধরেন তার অতীত, বর্তমান এবং ক্রিকেট খেলোয়াড়দের উন্নয়নসহ ভবিষ্যতের চিন্তাগুলো। ক্রীড়াকণ্ঠের পাঠকদের জন্যে তার তুলে ধরা কথাগুলো নিচে হুবহু দেয়া হলো।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আস্সালামুআলাইকুম, কেমন আছেন?
শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল : জ্বি ওয়ালাইকুম আস্সালাম, করোনাকালীন এই সময়ে আপনাদের এবং পরিবারের সকলের দোয়ায় আল্লাহতায়ালা ভালো রেখেছেন।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনি কখন থেকে খেলাধুলার সাথে জড়িয়ে পড়েন? এখনও রয়েছেন?
শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল : হ্যাঁ ছোটকালে যেমন খেলাধুলার সাথে জড়িত ছিলাম, এখনও আছি। তবে ছোটকালে ছিলাম ফুটবল ও ক্রিকেট নিয়ে আউটডোরে। আর এখন বড় হয়ে চাঁদপুর ক্লাবে নিয়মিত টেবিল টেনিস, লনটেনিস, ব্যাডমিন্টন ও স্নুকারের সাথে জড়িত রয়েছি। এক সময় ফুটবল খেলতাম ডিফেন্সে। পরবর্তীতে ফুটবল ছেড়ে চলে আসি ক্রিকেটে। আমি হাসান আলী হাইস্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়াবস্থায়ই পুরোপুরি খেলাধুলার সাথে জড়িয়ে পড়ি। আমাদের সময়ে আমরা সুখন, শিমুল, প্রবাসী রাসেল, নিটুল, গাজী আলমগীর, রানা, হেলাল, ভুট্টো, আনোয়ার, শরীফসহ অনেকেই একসাথে খেলতাম।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুরের কোন্ ক্লাবের মাধ্যমে আপনার ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়?
শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল : আমরা তখন অনেক বন্ধু মিলে ক্রিকেট খেলতাম। আমার বন্ধু বর্তমানে প্রবাসী রাসেলের মাধ্যমে আমি অঙ্গনা ক্রীড়াচক্রে যোগ দেই। আমি টানা ৫ বছর ওই ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট খেলি। আমি এ ক্লাবের হয়ে কুমিল্লা, লাকসাম, নোয়াখালীসহ অনেক স্থানের খেলাগুলোতে অংশ নেই।
ক্রীড়াকণ্ঠ : ঢাকায় কোনো ক্রিকেট খেলা হয়েছিলো?
শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল : হ্যাঁ, অবশ্যই। আমি ঢাকায় যখন আইইউবিএটিতে পড়াশোনা করি তখন কলেজের হয়ে ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩২টি কলেজ দল অংশ নিয়েছিলো। আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে নিয়মিত এ টুর্নামেন্ট খেলি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : দেশের বাইরে অর্থাৎ বিদেশের মাটিতে খেলেছেন?
শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল : আমি বিদেশের মাটিতে খেলেছি এবং লন্ডনের স্থানীয় একটি ক্রিকেট দলের হয়ে ১ বছর আমি সেখানকার সানডে ক্রিকেট লীগ খেলি। লন্ডনে মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় আমি বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করি। আমি লোকাল দলের হয়ে যে ক্লাবটিতে খেলেছিলাম সেই ক্লাব সহ ওই বছর ১৮টি দল ওই ক্রিকেট লীগে অংশ নিয়েছিলো। আমাদের দল রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর জেলা ক্রিকেট দলে কি খেলেছেন?
শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল : আমি ১৯৯৪-৯৫ সালে চাঁদপুর জেলা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ক্রিকেট খেলেছি। আমি জেলা দলের সদস্য হিসেবে ফেনী, সুনামগঞ্জ, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে খেলি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : বর্তমানে ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্যে চাঁদপুরে কী প্রয়োজন?
শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল : প্রথমত হচ্ছে ক্রিকেট লীগটি ধারাবাহিকভাবে চালু রাখা প্রয়োজন। জেলা ক্রীড়া সংস্থার অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন ক্লাব, ক্রীড়ামনা এবং ক্রীড়াসংগঠকরা বছরে ৪ থেকে ৫টি ক্রিকেট লীগ কিংবা টুর্নামেন্টের ব্যবস্থা করা, রূট লেভেল থেকে খেলোয়াড় বাছাই করে তাদেরকে নিয়ে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজ করা, জেলা ও উপজেলায় নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন করা, জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন একাডেমী কিংবা পাড়া মহল্লার ক্লাবগুলো থেকে ভালো মানের ক্রিকেটার খুঁজে তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একটা পর্যায়ে নিয়ে আসা, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ক্রিকেট দলগুলোর মূল দল এমনকি বয়সভিত্তিক দলগুলোর সাথে প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করা, যেই মাঠে ক্রিকেট খেলা হবে সেই মাঠের ক্রিকেট পিচটিকে একটু ডেভলপ করা, ক্রিকেট পিচটি আধুনিক মানের করা দরকার। এছাড়া যেই মাঠে ক্রিকেটাররা খেলবে সেই মাঠটিকে যথাযথভাবে পরিচর্যা ও উন্নয়ন করতে হবে। যাতে করে ক্রিকেটাররা খেলতে গিয়ে মাঠের কারণে বড় ধরনের ইনজুরিতে না পড়ে যায়। ক্রিকেটের মাঠে এবং পিচের ক্ষেত্রে একটা স্ট্যান্ডার্ড ম্যান্টেন্ করতে হবে।
ক্রীড়াকণ্ঠ : বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে চাঁদপুরের আরো নতুন মুখ দেখতে হলে কী করতে হবে?
শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল : এটা একটা দীর্ঘ পরিকল্পনার বিষয়। ক্রিকেটার কিন্তু একদিন কিংবা একরাতেই তৈরি হয় না। বয়সভিত্তিক এবং স্কুলভিত্তিক টুর্নামেন্টের মাধ্যমে তাদেরকে খুঁজে বের করে সঠিক দিক-নিদের্শনার মাধ্যমে যথাযথভাবে সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের যেই জিনিস দরকার সেটি হলো শুধুমাত্র ক্রিকেটার হলেই চলবে না, তাকে পড়াশোনা অবশ্যই করতে হবে। ক্রিকেট হচ্ছে ভদ্রলোকের খেলা। ব্যক্তিগতভাবে আমি দেশ-বিদেশের অনেক ক্রিকেট কোচদের সাথে ক্রিকেট খেলা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। আমাকে শ্রীলংকান এক ক্রিকেট কোচ বলেছেন, একজন ক্রিকেটারকে আগে তার পড়াশোনার রেজাল্ট দেখতে হবে। ক্রিকেটার তৈরির ক্ষেত্রে রেজাল্টের প্রতি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আর ভালো ক্রিকেটারের জন্যে প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি তার বাবা ও মায়ের আগ্রহ। পারিবারিক সাপোর্ট একজন খেলোয়াড়কে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায়।
ক্রীড়াকণ্ঠ : ক্লেমন চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমীর সাথে জড়িত হলেন কিভাবে?
শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল : বাংলাদেশে যখন ক্লেমন স্পোর্টস ডেভলপমেন্টের কাজ শুরু হয়, ওইটার পরিকল্পনার প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে আমি যোগদান করি। তাদের প্রথম ইচ্ছে ছিলো কুমিল্লায় একটি ক্লেমনের একাডেমী করার। কিন্তু কোনো একটা কারণে সেখানে আমরা সেটি না করতে পারায়, আমি ব্যাক্তিগতভাবে সেটা পরিবর্তন করে চাঁদপুরে নিয়ে আসি। বাংলাদেশে ক্লেমনের যে ৮টি একাডেমী রয়েছে, তার মধ্যে চাঁদপুরেই হয় প্রথম একাডেমী, যার সাথে প্রথম ক্লেমন চুক্তিবদ্ধ হয়। সেই একাডেমীটি এখন মনে হয় ১২ বছরে পদার্পণ করেছে। এই একাডেমীর সূচনাকালে আমার শ্রদ্ধেয় বাবা শেখ আঃ রশিদ তাঁর ব্যক্তিগত অনুদান দিয়ে এ ভবনটি তৈরি করে দিয়েছেন। এরপর থেকে এ একাডেমীর প্রতি আমার আরো দুর্বলতা বেড়ে যায়। আমি মনে করি, চাঁদপুরে যে ক্রিকেট একাডেমীটি রয়েছে সেটির জন্যে জেলার বিত্তবান ক্রীড়ামনা ব্যক্তিরা একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে সেটিকে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
ক্রীড়াকণ্ঠ : ক্রিকেটের উন্নয়নে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কী উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন?
শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল : মূলত নিয়মিতভাবে দ্বিতীয় ও প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগটি নিয়মিতভাবে চালানো উচিত। আর সেই খেলাগুলো যেনো বছরের যে কোনো সময়েই না হয়। শুধুমাত্র ক্রিকেট মৌসুমেই সেই ক্রিকেট লীগ ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টগুলো পরিচালিত হয়। জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে জেলার স্কুলগুলোকে নিয়ে স্কুলভিত্তিক ক্রিকেট খেলায় প্রতিযোগিতা করা বেশি প্রয়োজন। জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমেই মাঠটিকে ক্রিকেটের জন্যে পুরো প্রস্তুত করতে হবে। বৃষ্টির সময় ঘনিয়ে আসলে কোনো ক্রিকেট টুর্নামেন্ট না চালিয়ে মৌসুমভিত্তিক ক্রিকেটের খেলাগুলো চালালে খেলোয়াড়রা তাদের সেরা খেলাটুকু দেয়ার চেষ্টা করবে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার অন্তর্ভুক্ত উপজেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলো থেকে তাদের প্রতিভাববান ক্রিকেটারদের খোঁজ করে তাদেরকে নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ চাঁদপুরের ক্রীড়ামোদী ও ক্রীড়া সংগঠকদের মনে রাখতে হবে যে, এ দেশের জাতীয় মানের অর্থাৎ জাতীয় ক্রিকেট দলের একটি মাইলফলকে আমরা পৌঁছেছি। বাংলাদেশ জাতীয় টি-২০ দলে নতুন মুখ হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন আমাদের এ চাঁদপুরেরই সন্তান। সেই শামিম পাটওয়ারীরও কিন্তু ক্রিকেটের হাতেখড়ি হয় ক্লেমন চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমীর মাধ্যমে। আমরা জাতীয় ক্রিকেট দলে একজন শামিম পাটওয়ারীকে দেখতে চাই না। শামিম পাটওয়ারীর মতো আরো ক্রিকেটার দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে সেই স্বপ্নই দেখতে হবে চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ আমাদেরকে।
ক্রীড়াকণ্ঠ : বর্তমানে জেলার ক্রিকেটের সাথে জড়িতদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল : আমি প্রথমেই বলবো, যারা ক্রিকেটের সাথে জড়িত রয়েছে, তাদেরকে অবশ্যই পড়াশোনার সাথে যুক্ত থাকতে হবে। আর যদি ক্রিকেট খেলতেই হয়, তাহলে মনেপ্রাণে ধ্যান নিয়ে নিয়মিত অনুশীলন করে যেতে হবে। মন স্থির রাখতে হবে যে, আমাকে একটি লক্ষ্যে পৌছতে হবেই। পড়াশোনা ও খেলাধুলার সাথে জড়িত থাকলে কোনো ছেলেই মাদকের সাথে কিংবা কোনো খারাপ কাজের সাথে জড়িত হতে পারবে না। আর যারা ক্রিকেট খেলছে কিংবা ক্রিকেট খেলায় অনুশীলনরত রয়েছে তাদেরকে বলবো, চাঁদপুরে কোনো ক্রিকেট লীগ কিংবা কোনো ক্রিকেট টুর্নামেন্টে টাকার প্রতি কেউ আসক্ত না হয়ে নিজের খেলাটুকু ধরে রাখা দরকার। এখান থেকে ভালো কিছু করে ঢাকায় গিয়ে যে কোনো ক্লাবে ভালো খেলার পারফরমেন্স করতে পারলে দ্বিগুণ টাকা রুজি করতে পারবে। চাঁদপুরের ক্রিকেটারদের এই ধরনের মন-মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ক্রিকেটারদের মনে রাখতে হবে যে, শুধুমাত্র সিজনের সময়েই ক্রিকেট খেলবো, তা নয়। নিয়মিতই ক্রিকেটের অনুশীলনের সাথে জড়িত থাকতে হবে। সেটা নিজের উদ্যোগেই হোক আর একাডেমীর মাধ্যমেই হোক। লক্ষ্য ঠিক না রেখে ক্রিকেট খেললে কাক্সিক্ষত ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে না। যদি কখনও কোনো কারণে কোনো খেলায় কিংবা কোনো দলে কোনো ক্রিকেটার টিকতে না পারে তাহলে তার মন ভাঙ্গা যাবে না। যেখানে হোঁচট খাবে সেখান থেকেই নিজের সেরা খেলার মাধ্যমেই তাকে বের হয়ে আসতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আমি সবাইকে অনুরোধ করবো, কীভাবে একটা খারাপ দিক থেকে নিজেকে ভালো দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেটি একটি ফিল্ম দেখে আমি অনুধাবন করেছি, আর সেই ফিল্মটি হচ্ছে এমএস ধোনীর আনটেল স্টোরি, এ ফিল্মটি যাতে তারা দেখে। আমাদের চাঁদপুরের একটি ঐতিহ্য আছে সিনিয়রদের সম্মান করা। আমি চাঁদপুরের এফসিসি’র সভাপতি হিসেবে চাইবো যে, প্রত্যেক সিনিয়র ও জুনিয়র ক্রিকেটাররা যেনো সুসম্পর্কের মাধ্যমে আমরা একটি পরিবারের মতো চলতে পারি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুরের ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমীতে কি কোনো প্রশিক্ষক এনেছিলেন?
শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল : আমি যখন আকিজ গ্রুপ এন্ড বেভারেজের স্পোর্টস ডেভলপমেন্টের সাথে জড়িত ছিলাম, তখন এনেছি। আমি চাঁদপুরের ক্রিকেটের উন্নয়ন এবং ক্লেমন একাডেমীর ক্রিকেটারদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্যে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট, মোহাম্মদ আশরাফুল, সাবেক জাতীয় ক্রিকেট দলের ওপেনিং ব্যাটস্ম্যান হান্নান সরকার ও অলরাউন্ডার রাজিন সালেহকে এনেছি। এখনও রাজিন সালেহ মাঝে মাঝে চাঁদপুরে আসেন।
ক্রীড়াকণ্ঠ : ক্লেমন চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমীর মাধ্যমে আগামীতে কী স্বপ্ন দেখেন?
শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল : প্রথমত আমি ক্রিকেটকে আমার নিজ সন্তানের মতো ভাবি। সেই থেকে আমার জেলা থেকে যদি আরো জাতীয় পর্যায়ের আরো ক্রিকেটার সৃষ্টি হয় সেটা তো আমাদের গর্ব। চাঁদপুরের এ একাডেমীতে বর্তমানে বেশ ক’জন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটার রয়েছেন, এরা যদি তাদের ধারাবাহিকতা ধরে খেলা চালিয়ে যেতে পারে তাহলে এ একাডেমী থেকেই জাতীয় পর্যায়ের আরো ক্রিকেটার খুঁজে পাওয়া যাবে। বতর্মানে ক্রিকেটারদের যে সুযোগ সুবিধা রয়েছে আমাদের সময় সেই সুযোগ-সুবিধাগুলো ছিলো না। সেই ক্ষেত্রে এই সুযোগ-সুবিধাগুলো থাকা সত্ত্বেও যদি ভালো ক্রিকেটার তৈরি না হতে পারে তাহলে তার মতো আর দুর্ভাগা আর কেউ হতে পারে না। এ জেলার কোনো ক্রিকেটার যদি ঢাকায় কিংবা অন্য কোনো স্থানে ক্রিকেট খেলতে চায়, তাহলে সেখানে আমার সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর ক্লাবে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে আপনার পারফরমেন্স?
শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল : আমি চাঁদপুর ক্লাবে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে দ্বৈতে অংশ নিয়ে রানারআপ হই। আমার পার্টনার ছিলেন চাঁদপুরের সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল : আপনার ও জেলার শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে এ জেলার সকলকে আগাম ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা রইলো। তার সাথে সাথে সকলকেই অনুরোধ করছি, মাস্ক পরুন, অন্যকে পরার আহ্বান জানান। নিজে সচেতন হোন এবং সাথে সাথে অন্যকেও সচেতন করুন। মাস্ক ছাড়া কেউই ঘর থেকে বের হবেন না।