প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
নতুনভাবে সংস্কার হচ্ছে চাঁদপুর সরকারি কলেজ বাস্কেটবল মাঠ
মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি বিজড়িত, গুণীজন অধ্যুষিত পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়ার প্লাবনভূমি ইলিশের নগরী হিসেবে পরিচিত চাঁদপুর জেলাটি। এ জেলাটিকে একসময় মানুষ চিনতো ক্রীড়াঙ্গনের কারণেই। ক্রীড়াঙ্গনের ওই সময়গুলোতে চাঁদপুরে ছিলো ফুটবল ও বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের ছড়াছড়ি। আর ওই সময়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চাঁদপুর জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ চাঁদপুর সরকারি কলেজের বাস্কেটবল মাঠটি ছিলো বেশ পরিচিত। এটি ছিলো তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মহকুমা লেভেলের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ বাস্কেটবল খেলার মাঠ।
|আরো খবর
চাঁদপুর কলেজের এই বাস্কেটবল মাঠের মতো এতো সুন্দর মাঠ বিভাগীয় কোনো জেলাতেই ছিলো না। সাবেক বর্তমান কেউই ঠিকমতো বলতে পারেনি যে, কলেজের ভিতরের এই বাস্কেটবল মাঠটি কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর কলেজের ভিতরে অবস্থিত সেই মাঠটিই নতুনভাবে সংস্কার করা হচ্ছে। এই সংস্কার হওয়ার পেছনে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ও মেঘনাপাড়ের কন্যা স্থানীয় সাংসদ ডাঃ দীপু মনির। তারপরে রয়েছেন কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাস। বাস্কেটবল মাঠটির সংস্কারের কাজটি হচ্ছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে।
চাঁদপুরের বিভিন্ন বয়সী খেলোয়াড় ও চাঁদপুর বাস্কেটবল একাডেমীর প্রকাশিত ম্যাগাজিন ‘হারমনি’ থেকে জানা যায় যে, চাঁদপুর কলেজ ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৬৩ সাল থেকে এই কলেজ মাঠে বাস্কেট বল খেলা শুরু হয়। আর চাঁদপুরের বাস্কেটবল মাঠটির জন্য নিরলস পরিশ্রম করেছিলেন এ কলেজেরই তৎকালীন ক্রীড়া শিক্ষক সাংবাদিক কামরুজ্জামান চৌধুরীসহ ক’জন বাস্কেটবল খেলোয়াড়। প্রতিদিন বিকেলে এ মাঠে বাস্কেটবল খেলা নিয়মিতভাবেই হতো। সুফলস্বরূপ এ বাস্কেটবল মাঠটি থেকে দেশের জাতীয় পর্যায়ের অনেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় সৃষ্টি হয়েছে।
চাঁদপুর কলেজের বাস্কেটবল মাঠটি নিয়ে একটি সূত্র বলেছে যে, এই মাঠটি নাকি বৃটিশরাই করেছিলেন। মরহুম কামরুজ্জামান চৌধুরীসহ অন্যরা যখন কলেজের বর্তমান এই স্থানটিতেই মাঠ করতে গিয়েছেন তখন মাটি খোঁড়ার সময় তারা দেখতে পেয়েছিলেন ১৯০৫ সালে বাস্কেটবল মাঠটি তৈরি করেছিলেন তৎকালীন সময়ে এদেশ শাসন করা বৃটিশরা। এ তথ্যগুলো জানা গেছে সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের কাছ থেকেই। তারা এ প্রতিবেদককে জানান, মরহুম কামরুজ্জামান চৌধুরীর কাছ থেকে তারা এমনটি শুনেছেন। ওই হিসেবে যদি কলেজের বাস্কেটবল মাঠটি সংস্কারের সময় ধরা হয়, তাহলে ১১৬ বছর পর কিংবা যদি ১৯৬৬ সালের দিকের হিসেবও ধরা হয় তাহলে ৬৫ বছর পর মাঠটি সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার পথে।
চাঁদপুর কলেজের বাস্কেটবল মাঠটির সংস্কার নিয়ে বর্তমান অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাশের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি জানান, বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি কলেজে নতুন নতুন যা কিছুই হচ্ছে এর মূল পরিকল্পনাবিদ হচ্ছেন আমাদের সকলের প্রিয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি মহোদয়। শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পরে একবার চাঁদপুর এসেছিলেন শিক্ষা প্রকোশীল অধিদপ্তরের চীফ ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়ে। তখনই অনেক সিদ্ধান্তের সাথে বাস্কেটবল মাঠ সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেন মন্ত্রী মহোদয়। আমরা কাজগুলোকে বের করে নিয়ে আসছি। কাজগুলো অনেক সময় শিক্ষা প্রকোশলের মাধ্যমে হলেও দেরি হয়, তাই আমরা কাজটাকে ত্বরান্বিত করার জন্য তাদেরকে সহযোগিতা করেছি। যেমন : বাস্কেটবল মাঠের ডিজাইনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা। ঢাকা থেকে বাস্কেটবল ফেডারেশনের কোচ এনেছি। এটা তো আর শিক্ষা প্রকোশলের প্রকৌশলীগণ করতে পারবেন না। তাই ফেডারেশন থেকে এবং চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও সাবেক জেলার বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের সহযোগিতা নিয়ে এ মাঠটি নতুনভাবে সংস্কার করছি। চাঁদপুর সরকারি কলেজে এখন যা হচ্ছে সকল কিছুই একটা পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে হচ্ছে। আর তার রূপকার হচ্ছেন আমাদের অভিভাবক শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি।
সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় লায়ন মাহমুদ হাসান খান বিপুর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ১৯৬৪ সাল থেকে চাঁদপুরে বাস্কেটবল খেলার যাত্রা। কলেজের এই বাস্কেটবল মাঠটির কারণে আগে এ জেলাটি সহজেই সকলে চিনতো। আমরা এই মাঠে অনেক বাস্কেট বল খেলেছি। নতুনভাবে এই মাঠটিকে সংস্কারের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আগামী প্রজন্মের অনেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় এই মাঠ থেকেই উঠে আসবে।
সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় ও চাঁদপুর বাস্কেটবল একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ নুরুল আমিন খান আকাশ এ প্রতিবেদকে জানান, এই মাঠে শুধু আামি নয় আমার পরিবারের এবং আমার বড় তিন ভাই এনএম খান মুরাদ, মুকুল আনোয়ার ও কবির বকুলও নিয়মিত বাস্কেটবল খেলেছেন। আমি স্বপ্ন দেখি যে, চাঁদপুরের এ কলেজ মাঠেই আগামীতে বিভাগীয় পর্যায়সহ জাতীয় পর্যায়ের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাস্কেটবল খেলোয়াড় হিসেবে আলোচনায় আসতো চাঁদপুরের বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের। এই মাঠটি পুরোপুরি হয়ে গেলে আশা করি উদীয়মান বাস্কেটবল খেলোয়াড়রা নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে বাস্কেটবলে চাঁদপুরের পুরানো ঐতিহ্য পুণরুদ্ধার করতে পারবে।
চাঁদপুর সরকারি কলেজের বাস্কেটবল মাঠের নতুন সংস্কার কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিপন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোঃ ফারুকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, এ মাঠটি চাঁদপুরের স্মৃতির সাথে জড়িত রয়েছে। আমি এ কাজটি পাওয়ার পর কলেজ কর্তৃপক্ষকে সকল কিছু বুঝিয়ে দিয়েছি। আশা করি মাঠটির নতুন করে যেভাবে কাজ হচ্ছে স্থায়িত্ব থাকবে অনেক দিন।