প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
চাঁদপুরে শুরু হতে যাচ্ছে শেখ কামাল স্পোর্টস একাডেমীর কার্যক্রম
চাঁদপুরে শুরু হতে যাচ্ছে শেখ কামাল স্পোর্টস একাডেমীর কার্যক্রম। একেবারে নতুন আঙ্গিকে এবং নতুন চিন্তায় চাঁদপুরের খেলাধুলার উন্নয়নের স্বার্থে জেলার ৮ উপজেলার খেলোয়াড়দেরকে নিয়ে এই একাডেমীর কার্যক্রমগুলো হবে। বাংলাদেশের স্বপ্নদষ্ট্রা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবের বড় ছেলে এবং বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার বড় ভাই মরহুম শেখ কামালের নামে চাঁদপুরে এ একাডেমীটি গড়ে উঠেছে। তিনি ভালো ফুটবলার ও ক্রীড়াপ্রেমী ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামাল ১৯৪৯ সালের ৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই তিনি ক্রীড়াবিদ সুলতানা খুকিকে বিয়ে করেন। তিনি ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা। শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি ও বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রচণ্ড উৎসাহ ছিলো তাঁর। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়াসংগঠন, বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক হিসেবে আবাহনীর সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন শুরু থেকেই। একজন অসম্ভব সৎ মানুষ ক্রীড়া আর সংস্কৃতিকে ভালোবেসে গেছেন আজীবন।
শেখ কামালের ভাবনা ছিলো দেশের তরুণদের ক্রীড়ার মাধ্যমে সংগঠিত করা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যাওয়া। তিনি সংস্কৃতির ভাবনা ভেবেছেন, খেলার কথা চিন্তা করেছেন, সব হারানো মানুষজনের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর তাগিদ অনুভব করেছেন, সহপাঠীদের অনুপ্রাণিত করে দলবল নিয়ে দৌড়ে গেছেন মানুষের মাঝে। আর এই বরেণ্য ক্রীড়াবিদকে স্মরণ করেই চাঁদপুরে নতুনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে এই একাডেমীটি। এই একাডেমীতে প্রথমত ক্রিকেট ও ফুটবলের কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তীতে দেশে প্রচলিত সকল ধরনের ক্রীড়াভিত্তিক প্রশিক্ষণ শুরু হবে।
চাঁদপুরে শুরু হতে যাওয়া এ একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর, চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলাবাসীর পরিচিত প্রিয়মুখ চাঁদপুর আবাহনী ক্রীড়া চক্রের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান। সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী কমিটির সদস্য ও ক্রিকেট উপ-কমিটির সম্পাদক ও চাঁদপুর আবাহনী ক্রীড়া চক্রের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সভাপতি শেখ মোঃ মোতালেব।
চাঁদপুরে এ একাডেমী গঠনে জেলার কয়েকজন বর্তমান ক্রিকেটার উদ্যোগ নেন। তারা চিন্তা করেন, এ জেলাতে যদি ভালো মানের একটি একাডেমী করা যায়, তাহলে এ জেলা থেকে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ফুটবল ও ক্রিকেটসহ অন্যান্য ক্রীড়াভিত্তিক ইভেন্টে খেলোয়াড়রা প্রতিনিধিত্ব করবে। তাদের চিন্তাভাবনা জেলার বয়স ভিত্তিক খুদে ক্রিকেটারদের নিয়ে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটারদেকে এ একাডেমীতে অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। ইতিমধ্যে এই একাডেমীর ফুটবল ও ক্রিকেটে ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত ১ অক্টোবর থেকে।
চাঁদপুর সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার বর্তমান ক্রিকেটারগণ তাদের উত্তরসূরি খুঁজতে নতুনভাবে এই একাডেমীটি চালুর জন্যে গত কয়েকমাস ধরে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তারা হলেন : মোঃ রাফসান জানি, মোঃ হীরা ঢালী, মোঃ মোশারফ বাবু, মোঃ মেহেদী হাসান, মোঃ মোশারফ সবুজ, মোঃ ফজলে রাব্বি, মোঃ মাসুদুর রহমান, মোঃ জিসান ও মোঃ ফজলুল হক। তারাও বতর্মানে বিভিন্ন দলের হয়ে ক্রিকেট খেলছেন।
একাডেমীর উদ্যোক্তা রাফসান জানি, হীরা ঢালী, মোশারফ বাবু, মেহেদী হাসান ও মোশারফ সবুজ এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা কয়েক বছর ধরেই দেখতে ছিলাম চাঁদপুরে একটি একাডেমী থাকার কারণে বয়সভিত্তিক খেলার পর একাডেমীতে অনুশীলন করার সুযোগ মিলে না তেমনভাবে। এমনকি সিনিয়র ক্রিকেটারদের মূলায়নের ব্যাপারটি চোখে পড়েনি একাডেমীর। যদি শুরু থেকেই ওই একাডেমীর সাথে আমরা অনেক খেলোয়াড়ই জড়িত ছিলাম। একাডেমীর সকল উন্নয়নেই আমরা পাশে ছিলাম। আমাদের বর্তমান ইচ্ছে আগামীতে যাদেরকে ফুটবলার ও ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তোলা হবে তারা যেনো সিনিয়র খেলোয়াড়দেরকে মূল্যায়ন করে। শুধু খেলাধুলা নয়, আচার-আচরণ ও নৈতিকতাসহ শৃঙ্খলার ব্যাপারে সকল কিছু যেনো তারা শিখতে পারে সেই লক্ষ্যেই আমাদের কার্যক্রম। আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে যেই খেলোয়াড় যেই স্থানে সুযোগ পাওয়ার যোগ্য সেখানেই তাকে সহযোগিতা করা। আমরা যারাই জেলার খেলোয়াড়দের উন্নয়ন ও তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এ একাডেমীটি গড়ে তুলেছি তাদের চিন্তা ভাবনাটা এইরকম যে, যারা কিংবা যাদেরকে চিনি তাদেরকেই শুধু খেলার সুযোগ করে দিবো তা নয়, একাডেমীতে চাঁদপুর সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে যারাই ভর্তি হবে এবং যারা খেলাধুলায় ভালো করবে তাদেরকেই সুযোগ করে দেয়া। আমরা একাডেমীতে যাদেরকে নিয়োগ দিবো তাদের খেলাধুলা সম্বন্ধে সকল কিছু ভালোভাবে জেনে নেবো। আমরা চাই, এ একাডেমীর মাধ্যমে তরুণদেরকে খেলাধুলার অনুশীলন ও বিভিন্ন টুর্নামেন্টে এবং লীগগুলোতে খেলার সুযোগ দিয়ে মাদক থেকে দূরে রাখা। এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে সহযোগিতা করার জন্যে অনুরোধ করবো চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে। তারা যেনো বছরের সঠিক সময়ে ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবলসহ অন্য খেলাধুলাগুলোকে পঞ্জিকার মতো অন্তর্ভুক্ত করে সিডিউল তৈরি করে। আর সেই অনুযায়ী যেনো খেলোয়াড়রা খেলার সুযোগ পায়। তাহলে চাঁদপুর হবে রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পরে খেলাধুলায় রোল মডেল।
একই একাডেমীর উদ্যোক্তাদের মধ্যে ফজলে রাব্বি, মাসুদুর রহমান, জিসান ও ফজলুল হক বলেন, আমরা দীর্ঘদিনের ফসল হিসেবে একাডেমীটি এ দেশের একজন মহান ক্রীড়াবিদের নামে নামকরণ করেছি। আমরা চেষ্টা করবো তিনি জীবিত থাকাবস্থায় এ দেশের ক্রীড়াবিদদের জন্যে যেমন চিন্তা করেছেন, ঠিক তেমনিভাবে এ জেলার খেলোয়াড়দের উন্নয়নের জন্যে আমাদের তেমন চিন্তা-ভাবনা কাজে লাগানো। আমরা যারা জেলার সিনিয়র ক্রিকেটার ছিলাম, তারা অনেক সময় খেলাধুলার ক্ষেত্রে অবহেলিত হতে হয়েছে। সেটা যেনো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে পরবর্তীতে এসে না দাঁড়ায়। এ জেলায় অনেক ভালো মানের ক্রিকেটার ছিলো, তারা অনেক ভালো জায়গায় ক্রিকেট খেলতে পারতো। কিন্তু কারো সহযোগিতা তারা পায়নি। এছাড়া যারা বর্তমানে রাজধানী ঢাকাতে বিভিন্ন ক্লাবের তৃতীয়, দ্বিতীয়. প্রথম বিভাগ ও প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে খেলছেন, এরা একসময় চাঁদপুরে আসলে কোথাও অনুশীলন করার সুযোগ পেতো না। আমাদের নতুন এ একাডেমীতে সেই সমস্ত খেলোয়াড় কিংবা যে কোনো দলে চাঁদপুরের খেলোয়াড়রা খেলছেন তারা যদি চাঁদপুরে এসে অনুশীলন করতে চান, তাহলে আমাদের এই একাডেমীতে অনুশীলন করার সুযোগ পাবেন। আমরা আশা করি, আমাদের প্রতিষ্ঠাতার সার্বিক তত্ত্বাবধানে যারা রয়েছেন তাদের সহযোগিতায় এ একাডেমীর মাধ্যমে চাঁদপুরের খেলাধুলা আরো নতুনভাবে উজ্জীবিত হবে। আর এ জন্যে আমরা এ জেলার খেলাধুলার সাথে জড়িত সকল অভিভাবক ও ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।