প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪২
বিভাগীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের অধিনায়ক সালমানের সাথে আলাপচারিতা
ব্যাটিং করতে নেমেই লক্ষ্য ছিলো দলকে জয়ী করে মাঠ ছাড়বো
চট্টগ্রাম বিভাগীয় অনূর্ধ্ব-১৮ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন চাঁদপুর দলের অধিনায়ক হিসেবে ব্যাট হাতে অপরাজিত ছিলেন এবং টুর্নামেন্টে বোলিং করে দলকে জিতিয়েছেন। বিভাগীয় পর্যায়ের ফাইনালে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হিসেবে নির্বাচিতও হয়েছেন। এর আগেও চাঁদপুর জেলার বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দলের দায়িত্ব নিয়ে দলকে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। স্কুল ক্রিকেটে খেলা অবস্থায় জাতীয় পর্যায়ে সারাদেশে ২য় ব্যাটসম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হলেন সালমান জাহান মিয়াজী। বাবার নাম জাকির হোসেন স্বপন ও মায়ের নাম মিনারা বেগম। ২ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। বসবাস করছেন চাঁদপুর শহরের তরপুরচণ্ডী মিজি বাড়িতে। ছোটকাল থেকেই খেলাধুলার সাথে জড়িয়ে পড়েন। খেলার মাঠে ডানহাতি ব্যাটসম্যান ও ডানহাতি লেগস্পিনার হিসেবে রয়েছে পরিচিতি। খেলাধুলার সাথে জড়িয়ে পড়েন পঞ্চম শ্রেণি পড়া অবস্থায়ই। বর্তমানে পড়াশোনা করছেন বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষে। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ওঠার পরই বাবার হাত ধরে ভর্তি হন ক্লেমন চাঁদপুর ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। ভর্তি হওয়ার পরই জেলার বয়সভিত্তিক অনূর্ধ্ব-১২, ১৪, ১৬ দলের হয়ে খেলেন। চলতি বছর বিভাগীয় পর্যায়ে ভালো পারফরমেন্স করার কারণে ডাক পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রিকেট দলের ক্যাম্পে।
বিভাগীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলা শেষে চাঁদপুরে ফিরে আসলে শনিবার সকালে এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি টুর্নামেন্ট ও চাঁদপুরের ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে তার নানা কথা তুলে ধরেন, যা নিচে পত্রস্থ করা হলোÑ
ক্রীড়াকণ্ঠ : আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?
সালমান জাহান মিয়াজী : জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ, আপনাদের দোয়া এবং ভালোবাসায় ভালোই আছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : বিসিবির ব্যবস্থাপনায় চলতি বছর বিভাগীয় টুর্নামেন্টে কতো ম্যাচ খেলেছেন এবং কতো রান করেছেন?
সালমান জাহান মিয়াজী : আমি এই টুর্নামেন্টে ফাইনালসহ ৪টি ম্যাচ খেলি এবং সাথে সাথে দলের অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করি। আমি ফাইনালসহ ৪টি ম্যাচে দুটি ফিফটিসহ ১২৩ রান করি। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি দলের সাথে ৫৩ ও ফাইনালে ফেনীর সাথে অপরাজিত ৬৩ রান করি। ফাইনাল ম্যাচে ১টি ছক্কা ও ৮টি চারের বিনিময়ে এই রান করি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : ফাইনাল ম্যাচে ব্যাটিং করার আগে আপনার লক্ষ্য ছিলো কী?
সালমান জাহান মিয়াজী : ফাইনাল খেলার টসের আগেই লক্ষ্য ছিলো ভালো খেলার। ফেনী দল প্রথমে ব্যাট করে আমাদেরকে টার্গেট দেয় ১৫১ রানের। আমি যখন ব্যাটিং করতে মাঠে নামি, তখন দলের ২টি উইকেট পড়ে যাওয়ার পরই ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে নামি। ব্যাটিংয়ে নামার সময় লক্ষ্য ছিলো ম্যাচটি ভালো খেলে দলকে জয়ী করে মাঠ ছাড়বো। আল্লাহতায়ালার অশেষ রহমতে ব্যাট হাতে অপরাজিতভাবে দলকে জয়ী করে মাঠ ছেড়েছি। ফাইনাল ম্যাচে বল হাতেও দুটি উইকেট লাভ করি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : বিভাগীয় দলের হয়ে কীভাবে খেলার সুযোগ পেলে?
সালমান জাহান মিয়াজী : চাঁদপুর জেলা অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে খেলা অবস্থায় নজরে পড়ি বাছাই কমিটির কাছে। ২৩ ডিসেম্বর সোমবার রওয়ানা দিবো। যদি চট্টগ্রাম বিভাগীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাই তাহলে নিজের সেরা খেলাটা উপহার দেয়ার চেষ্টা করবো। যাতে করে খেলার মাধ্যমে জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ পাই। সবারই তো লক্ষ্য থাকে জাতীয় পর্যায়ের ভালো ক্রিকেটার হওয়ার। আমি দোয়া চাই বিভাগীয় পর্যায়ে যেনো ভালো কিছু করতে পারি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনি তো এর আগে প্রাইম ব্যাংক জাতীয় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের জাতীয় পর্যায়ে খেলেছেন?
সালমান জাহান মিয়াজী : জ্বি, আমি চাঁদপুর গণি মডেল হাইস্কুলের ক্রিকেট দলের হয়ে ২০২৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে ক্রিকেট খেলায় অংশ নেই। আমি সেই দলেরও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করি। ওই বছর আমাদের দলটি সারাদেশের মধ্যে রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। আমি ওই বছর ৮টি ম্যাচ খেলে ৩৬০ রান করি এবং বল হাতে ৭ উইকেট নেই। দিনাজপুরের সাথে অপরাজিত ৬৭ রান করি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : জেলার বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দল ও কোন্ ক্লাবের হয়ে খেলেছেন?
সালমান জাহান মিয়াজী : আমি চাঁদপুর জেলা দলের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৪ তে কুমিল্লাতে অংশ নেই। অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে ২০২১ ও ২০২২ সালে নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে অংশ নেই। আমি সকল খেলাতেই দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করি। এছাড়া আমি চাঁদপুর প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে নিতাইগঞ্জ ক্রীড়া চক্রের হয়ে খেলি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : খেলাধুলায় কার সহযোগিতা পান?
সালমান জাহান মিয়াজী : আমাকে শুরু থেকেই আমার বাবা ও মাসহ আমার খালাতো বোনেরা সহযোগিতাসহ উৎসাহ দেন। এছাড়া আমার শ্রদ্ধেয় কোচ শামিম ফারুকী ও পলাশ কুমার সোমের অনেক সহযোগিতা পাই। কোচদের আন্তরিকতা ও সতীর্থদের সহযোগিতার কারণেই আজ এখানে এসে পৌঁছতে পেরেছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : খেলারত অবস্থায় জাতীয় ক্রিকেটার কার পরামর্শ পেয়েছেন?
সালমান জাহান মিয়াজী : আমি স্কুল ক্রিকেট খেলাশেষে মাঠে অনুশীলন চলাকালে আমাদের ক্লেমন ক্রিকেট অ্যাকাডেমির সাবেক ছাত্র ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ক্রিকেটার মাহমুদুল হাসান জয় মাঠে আসেন। আমার খেলা দেখার পর জয় ভাই বলেন, সালমান তুমি তোমার ন্যাচারাল খেলাটা নিয়মিত খেলে যাও। আর ক্রিকেটের সাথে জড়িয়ে থাকো।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর জেলার ক্রিকেট নিয়ে?
সালমান জাহান মিয়াজী : চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হিসেবে রয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহসীন উদ্দিন স্যার। আর তাঁর সাথে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বে থাকেন জেলা ক্রীড়া সংগঠকরা। আমার জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে দাবি থাকবে, চাঁদপুর স্টেডিয়াম মাঠে যেনো নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। এতে করে আমাদের মতো বয়সভিত্তিক যে সমস্ত ক্রিকেটার রয়েছেন তারা নিয়মিত খেলা চালিয়ে যেতে পারবেন। নিয়মিত মাঠে খেলাধুলার আয়োজন হলে জেলার ক্রিকেটারদের সংখ্যাও বেড়ে যাবে। এছাড়া আমরা যারা বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দলে খেলি, তারা তো বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলাশেষে টুর্নামেন্ট বা লীগে খেলতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুল ক্রিকেট খেলাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাহলে চাঁদপুর জেলা থেকে অনেক ক্রিকেটার সৃষ্টি হবে। মাঠে খেলা থাকলে খেলাধুলার প্রতি অভিভাবকদেরও আগ্রহ বাড়বে।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আমাকে সময় দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ।
সালমান জাহান মিয়াজী : জ্বি, আপনাকেও ধন্যবাদ। আপনার মাধ্যমে জেলার ক্রিকেটারসহ সকল ক্রীড়া সংগঠক, জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও ক্লেমন চাঁদপুর ক্রিকেট অ্যাকাডেমির সকলের প্রতি রইলো নতুন বছরের অগ্রিম শুভেচ্ছা। সাথে আমি যেনো ভালো ক্রিকেটার হতে পারি সেজন্যে সকলের দোয়া চাই।