মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৬

সর্বকালের সেরা ফুটবলার স্বর্ণজয়ী আমিনুল হক

চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম
সর্বকালের সেরা ফুটবলার স্বর্ণজয়ী আমিনুল হক

বাংলাদেশের ফুটবলে সর্বোচ্চ সাফল্য পাওয়া দলের নায়ক এবং সর্বকালের সেরা বাংলাদেশী গোলরক্ষক স্বর্ণজয়ী আমিনুল। ২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। ফাইনাল খেলায় টাইব্রেকারে দুটি শট ঠেকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা রেখেছিলেন আমিনুল।

২০০৩ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেই খেলার কথা ছিলো না আমিনুলের। দেড় যুগ আগে বাংলাদেশ সাফ ফুটবলের শিরোপা জিতেছিল টাইব্রেকারে মালদ্বীপকে হারিয়ে। টান টান উত্তেজনার সেই ফাইনালে পেনাল্টি শুট আউটে একটা শট আটকে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে আনন্দে ভাসার উপলক্ষ এনে দিয়েছিলেন গোলরক্ষক আমিনুল হক। অথচ কি জানেন, সে ম্যাচে আমিনুলের খেলারই কথা ছিলো না!

দেশের ক্রীড়াভিত্তিক অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়া থেকে জানা যায় যে, ফাইনালের সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনতেই আমিনুল হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘ম্যাচের দিন সকালে বাঁ পাঁজরে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছিলাম। সময় যত গড়াচ্ছিল, ব্যথা ততই বাড়ছিল। ম্যাচের ঘণ্টাখানেক আগে ব্যথা এমনই বেড়ে গেলো যে, দ্বিতীয় গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্যকে প্রস্তুতি নিতে বলে দিয়েছিলেন কোচ কোটান। কিন্তু আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। এমন একটা প্রতিযোগিতার ফাইনালে বাংলাদেশ, আর আমি খেলবো না! দলের চিকিৎসককে বলে ব্যথানাশক ইনজেকশন নিলাম। আল্লাহর রহমতে সেই ইনজেকশনে ম্যাচের সময় ব্যথা টের পাইনি। পেনাল্টিও ঠেকিয়ে দিলাম।’

২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ বাংলাদেশের ফুটবলের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। ঘরের মাঠে কী এক অপরূপ প্রতিজ্ঞা নিয়ে জ্বলে উঠেছিলো গোটা দেশ। গোলপোস্টের নিচে আমিনুল হক ছিলেন পুরো প্রতিযোগিতাতেই অনন্য! গ্রুপ পর্যায়ের তিনটি ম্যাচে নেপাল, মালদ্বীপ আর ভুটানের বিপক্ষে জালে বল ঢুকতে দেননি। সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষেও ৮১ মিনিট আগলে রেখেছিলেন গোলদুর্গ। টানা ৩৫১ মিনিট গোল না খেয়ে আমিনুল যেন বার্তা দিয়েছিলেন, আমি শেষ প্রাচীর হয়ে আছি। ভয় নেই।

আমিনুল তার খেলোয়াড়ি জীবনের অধিকাংশ সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে একজন গোলরক্ষক হিসেবে খেলেছেন। তিনি 'সর্বকালের সেরা বাংলাদেশী গোলরক্ষক' হিসেবেও অভিহিত হয়ে থাকেন। ১৯৯৪ সালে ঢাকা মোহামেডানের যুব পর্যায়ের হয়ে খেলার মাধ্যমে আমিনুল ফুটবল জগতে প্রবেশ করেছিলেন এবং এই ক্লাব দলের হয়ে খেলার মাধ্যমে তিনি ফুটবল খেলায় বিকশিত হয়েছিলেন। ফরাশগঞ্জের হয়ে খেলার মাধ্যমে তিনি তার জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেছিলেন। ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে যোগদান করেছিলেন, যেখানে তিনি ৫ মৌসুম অতিবাহিত করেছিলেন। অতঃপর ২০০৫-২০০৬ মৌসুমে তিনি ব্রাদার্স ইউনিয়নে যোগদান করেন। ব্রাদার্স ইউনিয়নে ২ মৌসুম অতিবাহিত করার পর ঢাকা মোহামেডানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। পরবর্তীকালে তিনি শেখ জামালের হয়ে খেলেছিলেন। সর্বশেষ ২০১১-২০১২ মৌসুমে শেখ জামাল হতে ঢাকা মোহামেডানে যোগদান করেন। ঢাকা মোহামেডানের হয়ে ২ মৌসুম খেলার পর তিনি অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক ম্যাচ খেলেছেন। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে তিনি সর্বমোট ৫০ ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

প্রারম্ভিক জীবন

মোহাম্মদ আমিনুল হক ১৯৮০ সালের ৫ই অক্টোবর তারিখে বাংলাদেশের ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই তার শৈশব অতিবাহিত করেন।

ক্লাব ফুটবল

আমিনুল ১৯৯৪ সালে ঢাকা মোহামেডানের যুব পর্যায়ের হয়ে ফুটবলে অভিষেক করেছিলেন। ঢাকা মোহামেডানের মূল একাদশে স্থান না পাওয়ার কারণে তিনি ফরাশগঞ্জে যোগদান করেন এবং উক্ত ক্লাবের হয়েই তিনি জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেছিলেন। তিনি অনেক ক্লাবের হয়ে খেললেও মুক্তিযোদ্ধা সংসদে তার খেলোয়াড়ি জীবনের সোনালি সময় কাটিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের এশিয়ান ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় পর্বে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে তার অনেক অবদান ছিল। ২০০০ সাল হতে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তার অবদানের জন্যে তাকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কিংবদন্তি খেলোয়াড় বলা হয়। ২০০৪ সালে প্রিমিয়ার লীগের ক্লাব নিউক্যাসেল ইউনাইটেড তার সাথে যোগাযোগ করেছিল। এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, "হ্যাঁ, এমন একটা প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু যোগাযোগের সমস্যার কারণে চুক্তিটি আর আগায় নি।"

ইএসপিএন স্টারের শেবি সিং বলেন, "সে (আমিনুল) এর থেকে ভালো লীগে খেলার যোগ্য, হয়তো ভালো প্রশিক্ষণসহ ইংল্যান্ডে।" তারপর দুই মৌসুম ব্রাদার্স ইউনিয়নে কাটানোর পর তিনি ঢাকা মোহামেডানে যোগদান করেন। ২০০৭ সালের পুরো মৌসুম তিনি ইঞ্জুরির কারণে খেলতে পারেননি। ২০১০ সালে ১ মৌসুমের জন্যে শেখ জামালের হয়ে খেলার পর তার খেলোয়াড়ি জীবনের শেষ দুই বছর ঢাকা মোহামেডানে কাটিয়ে অবসরগ্রহণ করেছেন।

আন্তর্জাতিক ফুটবল

১৯৯৯ সালের ২২ এপ্রিল তারিখে মাত্র ১৮ বছর ৬ মাস ১৮ দিন বয়সে আমিনুল ভারতের বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক করেছেন। তিনি উক্ত ম্যাচের মূল একাদশে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ম্যাচটি ০-০ গোলে ড্র হয়েছিলো। বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকের বছরে আমিনুল সর্বমোট ২ ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছেন। জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকের ১১৬ মিনিট পর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে প্রথম গোলটি হজম করেন।

২০১০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখে আমিনুল ২৯ বছর বয়সে বাংলাদেশের হয়ে তার ৫০তম ম্যাচ ও সর্বশেষ ম্যাচটি খেলে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর গ্রহণ করেন। শ্রীলঙ্কার কলম্বোর সুগাথাদাসা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত খেলায় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে উক্ত ম্যাচে বাংলাদেশ ৩-০ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিলো, ম্যাচটিতে তিনি পূর্ণ ৯০ মিনিট খেলেছেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার প্রায় ১১ বছরের খেলোয়াড়ি জীবনে তিনি সর্বমোট ৫০ ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এছাড়াও তিনি ২টি সাফ গেমস (১৯৯৯ এবং ২০১০) শিরোপা জয়লাভ করেছিলেন। ২০১১ সালে ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের প্রাথমিক পর্যায়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলার জন্যে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন তাকে অবসর পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তেই বহাল থাকেন।

খেলাধুলা নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা তুলে ধরে আমিনুল বলেন, ‘১৭ বছর বাংলাদেশ ফুটবলের সঙ্গে ছিলাম। দেশের জন্যে অসংখ্য পুরস্কার বয়ে এনেছি। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। তাই আমি নতুন চিন্তাধারা নিয়ে কাজ করবো, বাংলাদেশের খেলা নিয়ে যা আগে কেউ ভাবেনি।’

মোহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত (চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম), ক্রীড়া সাংবাদিক, পেশায় আইনজীবী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়