প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪৭
প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে খেলছেন চাঁদপুরের সাদ্দাম হোসেন
ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করার সুবাদেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পেলেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ক্রিকেটার সাদ্দাম হোসেন। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ ডেভ হোয়াটমোরের মাধ্যমে এই ক্রিকেটার খেলেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৭ ক্রিকেট দলে। বর্তমানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে খেলছেন এই অলরাউন্ডার।
|আরো খবর
ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে ২০২৩-২৪ মৌসুমে লালমাটিয়া ক্লাবের হয়ে খেলেন এই ক্রিকেটার। দলের অধিনায়ক হিসেবে এই মৌসুমে তিনি রান সংগ্রহের দিক দিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী, ১৬ ম্যাচে করেন ৫৫১ রান। বোলিংয়ে ৯ উইকেট শিকার করেন। আর এই পারফরম্যান্সের কারণেই তিনি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ডাক পেয়েছেন।
জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল), ২০২৪-২৫-এর নাম হচ্ছে মধুমতি ব্যাংক ন্যাশনাল ক্রিকেট লীগ। বাংলাদেশের এটি একটি প্রথম শ্রেণীর প্রতিযোগিতা। ১৯ অক্টোবর থেকে মাঠে গড়ায় ২৬তম জাতীয় ক্রিকেট লিগ। ম্যাচগুলো ৪দিনে অনুষ্ঠিত হয়। এবারের লিগে ৮টি দল অংশ নেয়। দলগুলো হলো : চট্টগ্রাম বিভাগ, ঢাকা বিভাগ, ঢাকা মেট্রো, রাজশাহী বিভাগ, খুলনা বিভাগ, বরিশাল বিভাগ, সিলেট বিভাগ ও রংপুর বিভাগ।
চাঁদপুরের ক্রিকেটার সাদ্দাম হোসেনের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় ১৯ অক্টোবর বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে। প্রথম ম্যাচ খেলেন রংপুর বিভাগের সাথে। রংপুরের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে দলের পক্ষে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৩৪ রান ও ২য় ইনিংসে করেন ১৬ রান। শনিবার থেকে সিলেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট লিগে চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে খেলেছেন সিলেট বিভাগের সাথে।
সাদ্দাম হোসেন ২০২২-২৩ মৌসুমে আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে ১৬ ম্যাচে ৫৫৭ রান করেন। এক ম্যাচে অপরাজিত ছিলেন ১৫৫ রানে।
ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে সাদ্দাম হোসেনের পথচলা শুরু হয় ২০১১-১২ মৌসুমে সিটি ক্লাবের হয়ে। তিনি সিটি ক্লাবে ১বছর, অগ্রণী ব্যাংকে ৪ বছর, রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবে ২ বছর ও আজাদ স্পোর্টিংয়ে খেলেন ৩ বছর।
এছাড়াও ক্লেমন ইনডোর ক্রিকেটসহ ঢাকাতে নিয়মিত খেলছেন ফরিদগঞ্জের সাদ্দাম হোসেন। তার নেতৃত্বে ক্লেমন ইনডোর ইউনি ক্রিকেটে তার স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি রানার আপ হয়েছে। দলের অধিনায়ক হিসেবে প্রতিটি ম্যাচেই তিনি খেলেন।
তার দল বুটেক্স ইউনিভার্সিটি, ড্যাফেডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, আনোয়ার খান মডেল কলেজ, সাউথ এশিয়া ইউনিভার্সিটি, শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটি ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির সাথে জয়লাভ করে।
সাদ্দাম হোসেন এক সময় জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ ডেভ হোয়াটমোরের তত্ত্বাবধানে জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৭ ক্রিকেট দলের হয়ে খেলেন। তার বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে নিয়মিত ঢাকার বিভিন্ন ক্রিকেট লিগ ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টে খেলছেন।
জানা যায়, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান ও খালেদ মাসুদ পাইলটের তত্ত্বাবধানে ৩২টি ইউনিভার্সিটির অংশগ্রহণে এ টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছিলো। টুর্নামেন্টে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আটটি গ্রুপে বিভক্ত করে, প্রত্যেক গ্রুপে চারটি করে মোট ৩২ ইউনিভার্সিটি ৫৫টি ম্যাচ খেলে। ভেন্যু ছিলো মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়াম। প্রত্যেকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার হয়। এ টুর্নামেন্টের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলো টাইটেল স্পন্সর ক্লেমন, পাওয়ার্ড বাই ইয়ামাহা, কো-স্পন্সর ওয়ালটন, ফ্যান্টাস্টিক হেব্বি এনার্জি বিস্কুট, যাচাই, আকিজ বাইসাইকেল, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আইসক্রিম পার্টনার জেএনজি, ওয়ার্ডরোব পার্টনার আম্বার, হট বেভারেজ পার্টনার ইস্পাহানী ও ড্রিংকিং ওয়াটার পার্টনার স্পা।
সাদ্দাম হোসেন জাতীয় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশীপের অধিনায়ক ও ঢাকা দক্ষিণ মেয়র কাপে ৩৯নং ওয়ার্ডে অধিনায়ক ছিলেন। তার নেতৃত্বে দল চ্যাম্পিয়ন হয়। তিনি ১ম বিভাগ ক্রিকেট লিগে আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
সাদ্দাম হোসেনের ক্রিকেটের পথচলাটা ২০০৭ সালে চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে কোচ শামীম স্যারের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে। এরপর নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখে এক বছর পরেই ২০০৮ সালে জেলার অনূর্ধ্ব-১৪ দলের হয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রিকেটে খেলেন। এভাবে আঞ্চলিক ক্রিকেটে সাফল্য কুড়ানোর মধ্য দিয়ে ঠিক তার দুবছর পর ২০১১ সালটা ছিলো সাদ্দামের জন্যে সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তির বছর। সে বছরই বয়সভিত্তিক দলে প্রথম বারের মতো লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। একই বছর ইন্ডিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট ও তিন ম্যাচ ওডিআই সব মিলিয়ে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে খেলেন। নিজের প্রথম ম্যাচে ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেন ৭০ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। এরপর খুব একটা পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সাদ্দামকে। ২০১১ সালে বয়সভিত্তিক জাতীয় দল অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে সুযোগ পান নেপালের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে ক্রিকেটে। সে সিরিজটাতে ৩-০তে জিতে বাংলাদেশ এবং নেপালের বিপক্ষে ২৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। সময়ের পালাক্রমে সুযোগ হয় দেশের প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে। নেপালের বিপক্ষে ৩-০ তে সিরিজ জেতার বছরই ঢাকা লিগে সিটি ক্লাবের হয়ে নাম লেখান প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে।
নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন্সির মাধ্যমে নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। ২০১৭-১৮ এবং ২০১৯-২০ সালে সুযোগ হয় দেশের বাইরে রেড ব্লু টুর্নামেন্টে। সাত দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ইউনিভার্সিটি ওয়ার্ল্ড কাপে এই টুর্নামেন্টে ক্যাপ্টেন হিসেবে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। এই দুই আসরে দল প্রত্যাশিত সাফল্য না ফেলেও তিনি চার ম্যাচেই ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন। দুটা টুর্নামেন্টেই হন ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্ট।
এছাড়াও তিনি চাঁদপুর জেলা দলের হয়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগ, স্থানীয় ক্লাব চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমি, আবাহনী ক্লাবসহ জেলা এবং উপজেলার বিভিন্ন ক্রিকেট দলের হয়ে খেলেছেন। চাঁদপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলর কাপ (নক আউট পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত) ক্রিকেট টুর্নামেন্টে আয়োজকের দায়িত্ব পালন করেন। একমাত্র তাদের আয়োজনে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে কোনো খেলা নির্ধারিত সময়ে শুরু এবং নির্ধারিত সময়েই শেষ হয়। গত ১৫ বছরে চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বরত কার্যনির্বাহী কমিটি কোনো খেলা সঠিকভাবে শুরু করলেও সময় মত শেষ করতে পারেনি।
সাদ্দাম স্বপ্ন দেখেন, নিজের ক্রিকেট প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে ধারাবাহিক সাফল্য অব্যাহত রেখে একদিন লাল-সবুজের জার্সিটা গায়ে জড়িয়ে বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
এ প্রতিবেদককে সাদ্দাম জানান, আমি ক্রিকেটের সাথে জড়িত রয়েছি, আমি ক্রিকেটের সাথে জড়িত থাকতে চাই। ক্রিকেট খেলাটাকে সামনে রেখে আমি এগিয়ে যেতে চাই। আমি সকলের দোয়া প্রত্যাশা করছি।