বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৯

ক্রীড়া সংগঠক ভাবনা-৪

খেলাধুলা হোক রাজনীতিমুক্ত : জিয়াউর রহমান জিয়া

শামীম হাসান
খেলাধুলা হোক রাজনীতিমুক্ত : জিয়াউর রহমান জিয়া

প্রতিটা অদম্য সৃষ্টি ও অনন্য কিছু দৃষ্টান্তের অন্তরালে একজন প্রাণপুরুষ থাকেন। ক্রীড়াঙ্গনও নেহাত তার ব্যতিক্রম নয়। সুসংগঠিত একটি ক্রীড়া সংগঠন গড়ে তোলার মতো দুঃসাধ্য কাজ কতোটা চ্যালেঞ্জিং তা শুধু ক্রীড়াঙ্গনের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা ভালো অনুভব করতে পারবেন। গত দু দশকের বেশি সময় জুড়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরস্থ ক্রীড়াঙ্গনে গতিশীলতার ধারক ও উদীয়মান খেলোয়াড়দের আশ্রয়স্থল, কোনো সমতুল্য নেই যার, তিনি জনাব জিয়াউর রহমান জিয়া। ১৯৯৬ সালের পর উপজেলা সদরস্থ ক্রীড়াঙ্গনের সাথে স্বল্প সময়ের জন্যেও কাজ করেছেন, অথচ জিয়াউর রহমান জিয়াকে চিনেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ব্যক্তিগত জীবনে অর্থ উপার্জন করে বিলাসী জীবনযাপন করা কিংবা বিপুল অর্থের মোহ কোনোটিই হারাতে পারেনি জিয়াউর রহমানের ক্রীড়াপ্রেমী মনকে। তাই সময়ের পরিবর্তনে তিনি হয়ে উঠেছেন এ অঞ্চলের খেলাধুলার মহাপ্রাণ পুরুষ। নিয়মিত ক্রীড়াঙ্গনের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় পুরো উপজেলাব্যাপী ক্রীড়ামোদীদের কাছে তাঁর আছে ভিন্নরকম পরিচিতি। তিনি এতোটাই ক্রীড়া মনস্ক মানুষ যে, এমন বহু সময় গিয়েছে, তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘ইত্যাদি স্পের্টস্’-এ সময় না দিলেও ঠিকই মাঠে যাওয়া তার ভুল হয়নি। তার ক্রীড়া মনস্ক কর্মকাণ্ডের কারণে ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক, খেলোয়াড়দের অভিভাবক, মাঠের অভিভাবক তথা পুরো উপজেলার ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবকত্বের একটা বড়ো জায়গা জুড়ে আছেন এই ক্রীড়া সংগঠক জিয়াউর রহমান। শুধুমাত্র খেলাধুলা আয়োজন ও খেলার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়াতেই তাঁর কাজ শেষ নয়, নিজ অঞ্চলের সকল প্রকার খেলাধুলার প্রচার করতে কাজ করছেন একটি ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ নিয়েও। এই গ্রুপের মাধ্যমে ফরিদগঞ্জের সকল খেলাধুলার খবর জানাতে তিনি কাজ করছেন। ‘আই স্পোর্টস’ নামে ফেসবুকের এই পাবলিক গ্রুপ থেকে পাওয়া যায় উপজেলার যে কোনো প্রান্তে অনুষ্ঠিত খেলাধুলার সকল ধরনের খবরাখবর। ক্রীড়াঙ্গনের খ্যাতির পাশাপাশি তার অনন্য পরিচয় হচ্ছে তিনি খুবই মিষ্টভাষী, ঠাণ্ডা মেজাজের হাসিমাখা মুখের একজন মানুষ। নিজের সাথের বন্ধুদের অনেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে কর্মজীবনের নানা ক্ষেত্রে সফল হয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। তার বিপরীতে তাঁর খেলার প্রতি অগাধ ভালোবাসার টানে তিনি নিজ এলাকার খেলাধুলার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন বিরতিহীনভাবে। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ‘ক্রীড়াকণ্ঠ’ পাতার ধারাবাহিক ক্রীড়া সংগঠক ভাবনায় এবার থাকছে ফরিদগঞ্জ স্পোর্টস্ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি এবং ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমির পরিচালক জিয়াউর রহমান জিয়া’র সাক্ষাৎকার।

ক্রীড়াকণ্ঠ : কেমন আছেন?

জিয়াউর রহমান : আলহামদুলিল্লাহ, সকলের দোয়া ও ভালোবাসায় ভালোই আছি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : কত সালে কার হাত ধরে আপনার ক্রীড়াঙ্গনে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিলো?

জিয়াউর রহমান : ছোট বেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি আসক্তির জন্যে ছোট বোন ক্রিকেট ব্যাট, ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন সরঞ্জাম কিনে দিতো। তবে ১৯৯৪-১৯৯৫ সালের দিকে আমার বড়ো ভাই জাকির হোসেন গাজীর খেলাধুলার প্রতি অগাধ ভালোবাসা দেখেই খেলাধুলায় নিজেকে যুক্ত করি৷ সাথে ছিলো অন্য বড়ো দুভাই দোলন গাজী এবং সেলিম গাজীর সব সময়ের উৎসাহ প্রদান। এরপর তো খেলাধুলা একান্ত ভাবে নিজের সাথেই মিশে গেছে। এখন পর্যন্ত জীবনের বড়ো একটা অংশ জুড়ে বিস্তৃত খেলাধুলার অধ্যায়।

ক্রীড়াকণ্ঠ : স্থানীয় ক্রীড়াঙ্গনে আসার শুরুর দিকে অভিভাবক হিসেবে কাকে পেয়েছিলেন?

জিয়াউর রহমান : আমরা যখন মাঠে খেলতাম তখনকার সময়ে মরহুম আবুল খায়ের ভাই (বর্তমানে প্রয়াত), সাবেক ফুটবলার ও দলিল লেখক নুরু কাকা প্রয়োজনীয় খেলার উপকরণ দিয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতেন। এরপর ধারাবাহিকভাবে ভিপি মঞ্জিল হোসেন মঞ্জিল, বিল্লাল গাজী, জহির গাজী, নুরুন্নবী নোমান, জাকির হোসেন গাজী সহ অনেকেরই সহযোগিতা ও পরামর্শ পেয়েছি এবং এখনও পাচ্ছি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : কোন্ খেলায় আপনি অধিক পারদর্শী এবং কোন্ খেলাকে বেশি উপভোগ করেন?

জিয়াউর রহমান : বিশেষ ভাবে আমি কোনো খেলাকেই এগিয়ে রাখছি না। আমি ফুটবল ও ক্রিকেট উভয় খেলাতেই সমানে সমান পারদর্শী। কারণ যখন নিজ মাঠ কিংবা অন্য মাঠে খেলায় নিয়মিত ছিলাম, তখন ক্রিকেটের সময় ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত ও আর ফুটবলের সময় ফুটবলে ব্যস্ত থাকতাম। তবে খেলাধুলা থেকে কখনোই দূরে থাকা হতো না।

ক্রীড়াকণ্ঠ : একজন খেলোয়াড় থেকে ক্রীড়া সংগঠক হয়ে উঠলেন কীভাবে?

জিয়াউর রহমান : সেই ছোট বেলা থেকেই ফরিদগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব ছিলো, তারপর সানফ্লাওয়ার ক্লাব, দাসপাড়া ক্রীড়া সংঘ, দক্ষিণ কাছিয়াড়া যুব সংঘ নামে কয়েকটি ক্লাব খেলাধুলায় চাঙ্গা থাকতো খেলার মাঠে। এর দু-তিন বছর পর সানফ্লাওয়ার ক্লাব, দাসপাড়া ক্রীড়া সংঘ, দক্ষিণ কাছিয়াড়া যুব সংঘের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং ২০০৭ সালের পর ফরিদগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ফরিদগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। এর পরের বছরগুলোতে সদরস্থ কোনো ক্লাব না থাকলেও মাঠে খেলা হতো নিয়মিত। প্রতি বছর ঘরোয়াভাবে ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চালু রেখেছি। এরপর ক্রীড়া সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে খেলাপ্রেমী কয়েকজনকে নিয়ে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করি ইত্যাদি স্পোর্টস্ ক্লাব (বর্তমান নাম ফরিদগঞ্জ স্পোর্টস্ ক্লাব)।

ক্রীড়াকণ্ঠ : কী চিন্তা থেকে, কী উদ্দেশ্যে এবং কাদেরকে সাথে নিয়ে ফরিদগঞ্জ স্পোর্টস্ ক্লাব (তৎকালীন ইত্যাদি স্পোর্টস্ ক্লাব) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

জিয়াউর রহমান : তখন মাঠে যারা খেলতো, তারা বিচ্ছিন্ন না থেকে একটা জায়গায় এসে সুসংগঠিত ভাবে খেলাধুলা আরো ভালোভাবে করতে পারুক সে চিন্তা থেকেই ইত্যাদি স্পোর্টস্ ক্লাব প্রতিষ্ঠা করি। ক্লাব প্রতিষ্ঠার সময় জাহিদুল ইসলাম রাসেল, শাকিল মুশফিক, রাসেল হাসান, মোরশেদ আলম, আল-আমিন বাপ্পি, জহির মিজি, সোহাগ গাজী, জসিম উদ্দিন, এস আই রাকিব সহ অনেকেই এগিয়ে এসেছেন এবং নানা ভাবে সাহায্য করেছেন।

ক্রীড়াকণ্ঠ : খেলোয়াড় হিসেবে আপনার বড়ো কোনো সাফল্যের কথা বলুন।

জিয়াউর রহমান : প্রথমে বলবো ১৯৯৪ সালে ক্লাস সেভেনে থাকতেই চাঁদপুর জেলার বাইরে ঢাকা, জামালপুর, খুলনা, রামগঞ্জ, রায়পুর, নোয়াখালীসহ ক'টি স্থানে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার সুযোগ হয়েছে। ফরিদগঞ্জের বাইরে ২০০৩ সালে চাঁদপুর সেকেন্ড ডিভিশন ক্রিকেট লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগ খেলেছি। এ পর্যন্ত ফরিদগঞ্জের জন্যে প্রথম এবং শেষ চ্যাম্পিয়ন ট্রফি এটি। পাইকপাড়া গোল্ডকাপের প্রথম আসরে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন, ২০১০ সালে ফরিদগঞ্জ গোল্ডকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন, ২০০২ সালে শেখ রাসেল গোল্ডকাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন সহ আরো অনেক অনেক খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, যা তুলে ধরলে শেষ হবে না। বিশেষ করে বিভিন্ন জায়গায় ফুটবল, ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন হওয়া অন্যরকম আনন্দ দিয়েছে আমাকে। আর সব চাইতে বড় বিষয় হলো, খেলার মাধ্যমে অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, এখনও পাচ্ছি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : একজন খেলোয়াড়, নাকি একজন ক্রীড়া সংগঠক--কোন্ বিষয়টি অধিক উপভোগ করেন?

জিয়াউর রহমান : মাঠের খেলায় একজন খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিটি ব্যক্তিগত অর্জনেই নিজের অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করতো। আবার এখনকার সময়ে নিজের কোচিং করানো কিংবা কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করার পর দল যদি বড়ো মঞ্চে কোনো শিরোপা জিতে কিংবা বড় কোনো অর্জন করায়ত্ত করে, তখন খেলোয়াড়ের চেয়ে আমাদের আনন্দ কিংবা প্রাপ্তির জায়গা কোনো অংশেই কম থাকে না।

ক্রীড়াকণ্ঠ : বর্তমানে একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে ক্রীড়া আয়োজন করতে কাদের সহযোগিতা পান সবচেয়ে বেশি?

জিয়াউর রহমান : বিভিন্ন সময়ে খেলাধুলার আয়োজনে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন, তবে বিশেষভাবে জাকির হোসেন গাজী, আহসান হাবীব, আনোয়ার হোসেন সজিব , সোহেল রানা, সোহাগ গাজী, পাশাপাশি গিয়াস উদ্দিন, আহমদ উল্যাহ শুকু, ইঞ্জিনিয়ার আল আমিন, আল আমিন বাপ্পি সহ জুনিয়র সিনিয়র অনেকেই ক্রীড়া আয়োজনের সারথী হয়েছেন।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে বড়ো সাফল্যের কোনো সুখের স্মৃতি আছে কি?

জিয়াউর রহমান : বৃহৎ পরিসরে ২০১০ সালে ক্রিকেট গোল্ডকাপ, ২০১৬ সালে এফপিএল ফুটবল প্রিমিয়ার লীগ, ২০১৭ সালে ক্রিকেট গোল্ডকাপ, ২০২২ সালে আই স্পোর্টসের উন্মুক্ত ফুটবল, ২০২৪ সালে আই স্পোর্টস উন্মুক্ত ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আসরগুলো সফল ভাবে আয়োজন করতে পেরেছি। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনামুক্ত সফল ভাবে একটি টুর্ণামেন্ট শেষ করা ক্রীড়া সংগঠকদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পাওয়া।

এ ছাড়াও ঘরোয়া ভাবে অনেক ক্রিকেট ও ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন সফলভাবে করেছি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : পূর্বের ন্যায় বর্তমান সময়ে শিশু কিশোরদের মাঠ বিমুখ হবার কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

জিয়াউর রহমান : এর জন্যে অন্যতম ভাবে মোবাইল আসক্তি দায়ী। তবে শিশু কিশোরদের খেলার উপকরণ ও উৎসাহ দিয়ে নিয়মিত খেলার মাঠে আনবে এমন মানুষও এখন খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। খেলাধুলায় উৎসাহ যোগানোর মতো কেউ না থাকায় শিশু-কিশোরদের মাঠবিমুখ হবার উল্লেখযোগ্য কারণ।

ক্রীড়াকণ্ঠ : পূর্বের ন্যায় শিশু কিশোরদের মাঠের খেলায় ফেরাতে অভিভাবক ও ক্রীড়া সংগঠকদের যুগোপযোগী করণীয় কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

জিয়াউর রহমান : ক্রীড়াপ্রেমী সিনিয়ররা মাঠে গিয়ে খেলার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বড়োদের দেখাদেখিতে ছোটরা মাঠে খেলতে আসবে। মাঠ নিয়মিত খেলায় সরব রাখতে ছোট পরিসরে হলেও টুর্নামেন্ট আয়োজনের বিকল্প নেই।

ক্রীড়াকণ্ঠ : আঞ্চলিক ক্রীড়া আয়োজনে

ভিন্ন সময়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মারামারি, হামলার মতো ঘটনাগুলো হওয়ার কারণ কী ও এসব বন্ধে করণীয় কী এবং এসব তুচ্ছ ঘটনা বন্ধে কাদের এগিয়ে আসা দরকার?

জিয়াউর রহমান : জিততেই হবে এমন মানসিকতা পোষণ করার কারণে বিভিন্ন সময় খেলাধুলায় অপ্রত্যাশিত নানা ঘটনা ঘটে। কখনো কখনো খেলাকে একটা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে কারো কারো ইন্ধনেও এসব নিন্দনীয় ঘটনার সৃষ্টি হয়।

ক্রীড়াকণ্ঠ : বর্তমান সময়ে স্থানীয়ভাবে কিশোরদের মধ্যে আপনার দেখা কয়েকজন খুদে ফুটবলার ও ক্রিকেটারের নাম বলুন।

জিয়াউর রহমান : নাম বললে তো অনেক ফুটবলারই আছে, তবে হামিম, পুষ্প আহমেদ, নূর-আলম, মোশাররফ, হিমেল, শাহাদাৎ, আঃ রাহিম, সৈকতসহ আরো অনেকেই ভালো খেলছে। ক্রিকেট বলে ছোটদের মধ্যে আইমন, তারেক সহ কয়েকজন আছে ভালো খেলে।

ক্রীড়াকণ্ঠ : জাতীয় ফুটবলে রেজা- রাফিদের মতো সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে উঠতি বয়সী প্রতিভাবান ফুটবলারদের করণীয় কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

জিয়াউর রহমান : একাডেমির বিকল্প নেই এবং আবাসিক ভাবে একাডেমিতে তাদেরকে দক্ষ কোচিংয়ের মাধ্যমে একটা গণ্ডির মধ্যে রেখে নিয়মমাফিক গড়ে তুলতে পারলে জাতীয় মানের ফুটবলার বের করে আনা সম্ভব। খেলোয়াড় হতে হলে নিয়মিত প্র্যাকটিস গুরুত্বপূর্ণ।

ক্রীড়াকণ্ঠ : জাতীয় ক্রিকেটে ফরিদগঞ্জের শামীম-জয়দের মতো সাফল্য পাওয়ার জন্যে একদম ছোট বেলা থেকেই খেলোয়াড়ি জীবনের অগ্রযাত্রা কোথা থেকে এবং কীভাবে করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

জিয়াউর রহমান : ক্রিকেটের জন্যে ছোট বেলায় জিরো লেভেল থেকে গড়ে তুলতে হবে। বয়সভিত্তিক খেলা ব্যতীত ভালো মানের খেলোয়াড় হয়ে ওঠা খুব একটা সহজ নয়। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্রিকেট একাডেমির আওতায় প্রশিক্ষণ নেয়া সর্বোত্তম প্রক্রিয়া একজন খেলোয়াড়ের জন্যে। চেষ্টা মানুষকে স্বপ্নের মতো গড়ে তোলে।

ক্রীড়াকণ্ঠ : স্থানীয় ক্রীড়াঙ্গন পরিচালনায় কোনো বাধার কি সমুখীন হতে হয়? যদি বাধার সম্মুখীন হতে হয় তবে তা কী?

জিয়াউর রহমান : খেলাধুলাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা ভালো। খেলাধুলা হোক রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত।

ক্রীড়াকণ্ঠ : প্রিয় ফুটবল দল ও প্রিয় ফুটবলার কে?

জিয়াউর রহমান : প্রিয় ফুটবল দল আর্জেন্টিনা এবং প্রিয় ফুটবলার লিওনেল মেসি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : কোন্ দলের ক্রিকেট খেলা উপভোগ করেন এং প্রিয় ক্রিকেটার কে?

জিয়াউর রহমান : সবার আগে বাংলাদেশ, পাশাপাশি পাকিস্তানের খেলা বেশ উপভোগ করতাম। বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক বা বিভিন্ন লীগের খেলাগুলোও ভালো লাগে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভিরাট কোহলি আর বাংলাদেশের কথা বললে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক চিন্তার বাইরে গিয়ে বলবো, খেলোয়াড় সাকিব আল হাসানের খেলা ভালো লাগে।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ফুটবল ও ক্রিকেটে ব্যাকরণিক খেলা হিসেবে কোন্ কোন্ দলের খেলা উপভোগ করেন?

জিয়াউর রহমান : ফুটবলে ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেন এবং ক্রিকেটে পাকিস্তান, ভারত এবং নিউজিল্যান্ডের খেলা উপভোগ করি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে স্থানীয় ক্রীড়াঙ্গনকে আরো সমৃদ্ধ করতে আপনার স্বপ্নের কথা বলুন।

জিয়াউর রহমান : আমি বরাবরের মতো স্বপ্ন দেখেছি এবং এখনও স্বপ্ন দেখছি, ফরিদগঞ্জে ভালো একটা ক্লাবের পাশাপাশি একটা স্পোর্টস্ একাডেমি হবে, যেখানে খেলার ফ্যাসিলিটি থাকবে, খেলোয়াড়রা কোনো প্রকার বাধা-বিঘ্নতা পোহাতে হবে না, খেলার পর্যাপ্ত পরিবেশ থাকবে, তারা ইচ্ছে করলেই খেলতে পারবে এবং মাঠের খেলায় ক্রিকেটে দুটি টুর্নামেন্ট আর ফুটবলে দুটি টুর্নামেন্ট হবে। পুরো বছরে কমপক্ষে ৪ টা টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হলে খেলোয়াড়দের মধ্যে পুরোদমে খেলার গতি তৈরি হবে।

ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনার উপজেলায় বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত কোন্ কোন্ টুর্নামেন্ট সারাবছর এই অঞ্চলের ক্রীড়াঙ্গনকে চাঙ্গা রাখছে বলে আপনি মনে করেন?

জিয়াউর রহমান : ধারাবাহিকভাবে রূপসা গোল্ডকাপ সেরা ছিলো, যা বর্তমানে বন্ধ। তবে গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে পাইকপাড়া গোল্ডকাপ জমকালোভাবে আয়োজন হচ্ছে, যা পুরো বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনায়। পাশাপাশি নয়াহাট প্রিমিয়ার লীগ, গৃদকালিন্দিয়ার চেয়ারম্যান কাপ, গল্লাক ফুটবল টুর্নামেন্ট, গোয়ালভাওর, হাওয়াকন্দি, কালিরবাজার সহ সমগ্র উপজেলায় বেশ কয়েকটি ক্রীড়া আয়োজন বেশ আলোচনা তৈরি করেছে।

ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনার মতো পুরো উপজেলার তৃণমূল পর্যায় থেকে এলাকাভিত্তিক ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে কাজ করছেন, তাদের এমন কয়েকজনের নাম বলুন।

জিয়াউর রহমান : গৃদকালিন্দিয়ার শরীফ খান, পাইকপাড়ার আব্দুল্লাহ, কড়ৈতলীর রেজাউল করিম রেজা, রূপসার আজিম, আনোয়ার সজীব, ফরহাদ, খাজুরিয়ার আঃ রহিম, সফিকুল ইসলাম রাজু, নয়াহাটের কাঞ্চন সরকার, ধানুয়ায় জুটন, গল্লাকের মিঠু, গোয়ালভাওরের খলিলুর রহমান, আঃ রহমান, কালিরবাজারের পিন্নু ভাই প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় অনেকেই নিবেদিত ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

ক্রীড়াকণ্ঠ : সার্বিক ভাবে ফরিদগঞ্জের ক্রীড়াঙ্গনে খেলাধুলার মানোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

জিয়াউর রহমান : অবশ্যই ক্রীড়া সংস্থা দায়িত্ব নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ গুলোকে সংস্কার করে খেলার পরিবেশ তৈরি করে খেলার আয়োজন, খেলার সরঞ্জাম বিতরণ করলে মাঠে এমনিতেই খেলামুখর পরিবেশ তৈরি হবে। সেই সাথে প্রত্যেক মাঠে যারা খেলাপ্রেমী সিনিয়র আছে তারা ব্যাট, বল দিয়ে তরুণ খেলোয়াড়দের উৎসাহ যোগালে, প্রত্যেক মাঠে খেলার আয়োজন করলে নিয়মিত খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

ক্রীড়াকণ্ঠ : সমগ্র উপজেলার ক্রীড়াঙ্গনের জন্যে আপনার পক্ষ থেকে আহ্বান কী থাকবে?

জিয়াউর রহমান : খেলোয়াড়রা তো অবশ্যই জয়ের প্রত্যাশা নিয়েই মাঠে খেলতে নামবে, তবে জয়ের পাশাপাশি পরাজয়কেও বরণ করে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। খেলাতে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে অবশ্যই খেলোয়াড় এবং মাঠের দায়িত্বে যারা থাকে তারা সজাগ থাকতে হবে। ছোট ছোট পরিসরে হলেও টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে এবং এসব টুর্নামেন্টকে সফল করতে স্থানীয়রা এগিয়ে আসতে হবে। তবেই পুর্ণোদ্যমে ফিরবে খেলার পরিবেশ।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ধন্যবাদ আপনাকে।

জিয়াউর রহমান : দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ক্রীড়াকণ্ঠকেও অনেক ধন্যবাদ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়