প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫০
হাজীগঞ্জে মাধ্যমিক পর্যায়ে খেলাধুলার চর্চা নেই !

হাজীগঞ্জে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে খেলাধুলা চর্চা নেই। বিদ্যালয়কেন্দ্রিক বাৎসরিক একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আর উপজেলাকেন্দ্রিক গ্রীষ্ককালীন ও শীতকালীন বাৎসরিক দুটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছাড়া বছরের বাকি সময়ে কোনো খেলা নেই। বিদ্যালয়ে ক্রীড়া শিক্ষকদেরকে ক্লাস প্রতি শারীরিক শিক্ষার এক বিষয়ের ক্লাসের পাশাপাশি নিয়মিত ক্লাস নেয়ার কারণে খেলাধুলা হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। ভর্তির সময় শিক্ষার্থীরা ক্রীড়ার ওপর বাৎসরিক চাঁদা পরিশোধ করলে তার কোনো হিসেব নেই।
সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে জানা যায়, স্কুল আর উপজেলা মিলিয়ে বাৎসরিক তিনটি খেলা ছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে খেলাধুলার একেবারে কোনো চর্চা নেই। এমপিওভুক্ত একজন করে শারীরিক শিক্ষক থাকার পরেও তারা শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার চর্চাতে রাখছেন না। শারীরিক শিক্ষকরা মূলত বিদ্যালয়গুলোতে শারীরিক শিক্ষার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের বাৎসরিক ক্রীড়াসহ উপজেলাকেন্দ্রিক খেলাতে অংশগ্রহণকে দায়িত্ব পালন বলে মনে করছেন। আবার উপজেলার খেলাতে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করতেও দেখা যায় না। কিছু ক্ষেত্রে স্কাউটিংয়ের দায়িত্ব পালন করেন শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকগণ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়গুলোতে বছরের শুরুতে ভর্তির সময়ে অন্যান্য ফি'র সাথে খেলাধুলা বাবদ একটি টাকা নেয়া হয় শিক্ষার্থীদের থেকে। ফের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের সময় একটা ফি নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়টি শিক্ষার্থীদের একটা অংশ স্বীকার করলেও দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায়সারা উত্তর দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, উপজেলাকেন্দ্রিক গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন দুটি খেলা ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়। তবে সকল প্রতিষ্ঠান এসব খেলাতে অংশ নিতে দেখা যায় না। বিদ্যালয়গুলোতে বাৎসরিক খেলাধুলাতেও সকল ইভেন্ট হতে দেখা যায় না। কিছু প্রতিষ্ঠান আবার নামমাত্র ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে।
একাধিক অভিভাবক বলেন, ক্রীড়া শিক্ষকরা ক্রীড়ার কাজ করবেন, তারা কেন সাধারণ ক্লাস নেবেন? তারা স্কুল সময়ের আগে পরে সারা বছর ধরে বাচ্চাদের খেলাধুলার চর্চাতে রাখলে আমাদের বাচ্চারা ভালো থাকতো, আর খেলাতে আগ্রহী হয়ে উঠতো। আমরা অভিভাবক হিসেবে আশা করবো, দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্রীড়া শিক্ষকদেরকে দিয়ে ক্রীড়ার কাজ করালে স্কুল ও কলেজ থেকে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলোয়াড় তৈরি হতো।
কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম ও সপ্তম শ্রেণীর একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বছরের শুরুতে ভর্তির সময় ছাড়াও খেলার সময় আমাদের থেকে ফি নেয়া হয়।
পৌর এলাকার রান্ধুনীমুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. শাহজামাল জানান, আমরা উপজেলা পর্যায়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি ও বিদ্যালযে বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। এছাড়া জাতীয় দিবসগুলোতে আমাদের স্কাউট সরকারি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হয়। 'খেলাধুলার জন্যে শিক্ষার্থীদের থেকে বছরের শুরুতে যে ফি নেয়া হয় তার বাইরে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সময় ফের কেন ফি নেন' এমন প্রশ্ন অস্বীকার করেন এই শিক্ষক।
এ বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক আয়েশা আক্তার জানান, আমরা বিদ্যালয়ে ও উপজেলার সকল অনুষ্ঠানে যেতে হয়। তাই আমাদের বাচ্চাদেরক গুছিয়ে রাখতে হয়।
রামপুর উচ্চ বিদ্যালেয়ের প্রধান শিক্ষক কবির হোসেন সরকার শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষার্থীরা খেলার সময় তো কোনো ফি দেয় না। তবে বছরের শুরুতে ভর্তির সময় যৎসামান্য একটা ফি নেয়া হয়।
এ বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক রিতা রায় জানান, প্রতিটি ক্লাসে আমার একটি করে বিষয়ওয়ারী ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি খেলাগুলো দেখতে হয়। 'অন্য ক্লাস নেন' এমন বিষয় স্বীকার করে বলেন, আমরা তো মাঠে বাচ্চাদের নামিয়ে খেলাধুলা করাই। তবে এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ মিলেনি।
পৌরসভার বলাখাল জে এন উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) খোদেজা বেগম জানান, আমাদের এখানে সবসময় খেলা হয়। খেলার ফি দু বার নেবার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বছরের শুরুতে ভর্তির সময় রিসিটের মাধ্যমে ফি নেয়া হয়। এ জন্যে আমাদের ভিন্ন একাউন্ট রয়েছে, সেখান থেকে খেলাধুলার খরচ মেটানো হয়।
এ বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, আমরা বিভিন্ন সময় মাঠে খেলার আয়োজন করি, তবে এবার বৃষ্টির জন্যে সম্ভব হয় নি।
এসব বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত ৮ তারিখে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যারের উপস্থিতিতে সকল প্রধান শিক্ষক ও ক্রীড়া শিক্ষকদের নিয়ে বসেছি। সেখানে বলা হয়েছে, যে সকল প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া সামগ্রী নেই, তাদেরকে তা দেয়া হবে, আর শিক্ষার্থীদেরকে মৌসুমী খেলার পাশাপাশি বিদ্যালয়ে নিয়মিত খেলাধুলার চর্চা করাতে হবে। বাৎসরিক খেলা ছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে অন্য সময় খেলা হয় না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।