সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:৩৬

ফরিদগঞ্জে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে পিতা লাঞ্ছিত!

স্টাফ রিপোর্টার।।
ফরিদগঞ্জে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে পিতা লাঞ্ছিত!
ছেলেদের অন্যায় কাজের বিরোধিতা করার কারণে সন্তানের হাতে এই বাবা নির্যাতনের শিকার হন এবং বাড়িছাড়া হন।

যে সন্তান পিতাকে হত্যা করতে আসে, সে মানুষ হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে। যে সমাজে পিতা সন্তান দ্বারা লাঞ্ছিত হন, সে ভূমি সমাজ হতে পারে নি। সন্তানের হাতে লাঞ্ছিত হয়ে পিতার কান্না দেখেও যে প্রশাসন নীরব থাকে, সেটা কখনোই মানবিক প্রশাসন হতে পারে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসে কুসন্তানের গল্প শোনালেন হতভাগা এক পিতা।

মনিরুল ইসলাম (৬৬) অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমস অফিসার। ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৬নং রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের উত্তর সাহেবগঞ্জ গ্রামের ছাড়া বাড়ির মরহুম ইয়াকুব আলী গাজীর ছেলে। চাকরির সুবাদে মনিরুল ইসলামের জীবনের অধিকাংশ সময় কাটাতে হয়েছে জন্মস্থানের বাইরে। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে চলে আসেন নিজের বাড়িতে। বাড়িতে এসে তিনি হতবাক হন। স্বপ্ন ছিলো ছেলে এবং নাতিদের নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিবেন। কিন্তু তার সে স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। জীবনের অর্জিত সমস্ত টাকা যে সন্তানদের পেছনে খরচ করেছেন, সে সন্তানরাই তাকে অপমান অপদস্থ করছে। সন্তানদের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মনিরুল ইসলাম এখন নিজ ঘরে পরবাসী। ৫ পুত্র সন্তানের তিনজনই চুরি, ডাকাতি, মাদক এমনকি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত । তাদের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে বৃদ্ধ মনিরুল ইসলাম অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সন্তানদের অমানবিক নির্যাতন আর হত্যার হুমকির ভয়ে তিনি আজ নিজ বাড়িতেই থাকতে পারছেন না।

বৃদ্ধ মনিরুল ইসলাম (৬৬) বলেন, আমার যে তিন ছেলে মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ে, তারা হলো : ইলিয়াস হোসেন রুবেল (৩৫), সোহেল (৩২) ও মোস্তাফিজ। ইলিয়াস হোসেন রুবেল প্রবাসে থাকতো। তাকে ৬ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ পাঠিয়েছি। কিন্তু সে বিদেশ গিয়ে পুরো নষ্ট হয়ে যায়। সেখানে গিয়ে সে খুনের আসামি হয়। সে আত্মস্বীকৃত খুনি। যেভাবেই হোক সে বিদেশ থেকে ফিরে আসে। বাড়িতে এসে সে মাদকের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। আমার কোনো খোঁজ খবর নেয় না। উল্টো আমাকে মানসিক নির্যাতন করে। একাধিকবার আমাকে মারতে এসেছে। মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমি তাকে মাদক থেকে দূরে থাকার জন্যে বলি এবং তার এসব কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করার কারণে আমাকে জবাই করে হত্যার হুমকি দেয়। বিষয়টি আমি আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীকে জানিয়েছি। বড়ো ছেলে বাড়িতে একটি ঘর করেছে, কিন্তু সে ঘরটি ভেঙ্গে দিয়েছে। বড়ো ছেলের ঘরের সমস্ত মালামাল সে বিক্রি করে দেয়। সে সালিস মানে না, কাউকে মানে না। সোহেল আর মোস্তাফিজ মিলে বাড়িতে গাঁজা, মদ আর ইয়াবা খায় এবং বিক্রি করে। আমার বাড়িতে সারারাত মাদকসেবীদের যাতায়াত। সন্ত্রাসী, চোর-ডাকাতের আড্ডাখানায় পরিণত হয়ে গেছে আমার বাড়িটি। আমার ছেলেদের এসব কর্মকাণ্ডে আমি অতিষ্ঠ হয়ে এবং তাদের হুমকির ভয়ে আমি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি। এলাকাটিকে তারা নষ্ট করে দিচ্ছে। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করে আবেদন নিবেদন করার পরও প্রশাসন কোনো কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক লোক অভিযোগ করে বলেন, ওরা তিন ভাই এলাকাকে মাদকের নরক রাজ্যে পরিণত করেছে। তারা এখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না। তারা তাদের নিজ বাড়িতে বসে ইয়াবা, গাঁজা বিক্রি করছে। দৈনিক লাখ টাকার মাদক বিক্রি করছে। যে-ই প্রতিবাদ করে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এভাবে তারা তাদের নিজ বাবাকেও ছাড় দেয়নি। নিজের পিতাকে মেরে তারা বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে। তারা এলাকায় এতোই রামরাজত্ব কায়েম করেছে যে, জনপ্রতিনিধিরা পর্যন্ত ভয়ে কিছু বলছে না। অনেকে অভিযোগ করে বলছেন, প্রশাসনকে বিষয়টি জানানোর পরও তারা রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

১৬নং রূপসা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) হুমায়ুন জানান, বিষয়টি মৌখিকভাবে আমি জেনেছি। তাদেরই আত্মীয় এসে আমাকে অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু ওরা এলাকায় এতোই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে, ভয়েই কেউ মুখ খুলছে না। আমিও এ বিষয়ে কাজ করতে পারছি না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, আমি ইউএনও অথবা ওসি সাহেবকে বিষয়টি জানাইনি।

ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহ আলম বলেন, বিষয়টি মাত্র জানলাম; আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়