প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও ড. সেলিম মাহমুদের সমর্থকদের মহড়া
চাঁদপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা
পুলিশ বেষ্টনিতে টান টান উত্তেজনায় চাঁদপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখা ছাত্রলীগের মৌখিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রোববার ওই ইন্সটিটিউটের হলরুমে চাঁপই শাখা ছাত্রলীগের উদ্যোগে বর্ধিত সভায় উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সালাউদ্দীন সরকার মৌখিকভাবে শেখ সজিবকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও নূর মোহাম্মদকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন। উক্ত সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।
|আরো খবর
উদ্বোধক হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌর যুবলীগের সভাপতি মাহবুব আলম। বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শাকিল মুন্সি তাবির।
কমিটি ঘোষণার পরপর নবঘোষিত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ সজিব ও সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদের নেতৃত্বে চাঁপই ক্যাম্পাস থেকে আনন্দ মিছিল বের হয়ে পৌরবাজারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তারা ড. সেলিম মাহমুদকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেন।
এদিকে বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপির সমর্থক এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদের সমর্থকদের মধ্যে মহড়া দিতে দেখা গেছে। পরে কচুয়া থানা পুলিশের তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সালাউদ্দীন সরকার জানান, চাঁদপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রবাসে চলে যাওয়ার কারণে সভাপতির পদ শূন্য হয়। ফলে জরুরি ভিত্তিতে বর্ধিত সভা ডেকে কলেজ ছাত্রদের সম্মতিক্রমে শেখ সজিবকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও নূর মোহাম্মদকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মৌখিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সোহাগ উদ্দীন জানান, এই কমিটির ব্যাপারে আমি অবগত নই। চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের আওতাধীন চাঁদপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট। শনিবার রাতে আমি চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চাঁদপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনাটি অবগত করি। তারা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন অসাংগঠনিক কোনো কার্যক্রমে যেনো আমি লিপ্ত না হই। এই কমিটি যেহেতু জেলার অধীনে তাই এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ সিদ্ধান্ত নিবে।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জহির উদ্দিন মিয়াজীর সাথে মুঠোফোনে (০১৭১৭৯১০০৪৯) বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তাকে না পেয়ে সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তার কাছে কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, চাঁদপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখা ছাত্রলীগ যেহেতু জেলা ছাত্রলীগের ইউনিট সেহেতু এই কমিটির বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ সিদ্ধান্ত দিবে। চাঁদপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে কমিটি দেয়া হয়েছে কেউ যদি এর প্রমাণ দিতে পারে তাহলে সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী কমিটি ঘোষণাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
চাঁদপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহত মোঃ শাকিল হোসেন জানান, হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় থেকে এক সহযোদ্ধার মাধ্যমে জানতে পারি আজ আমার ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মৌখিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে আমি এই কলেজের সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল আছি। আমাকে অবগত না করে বর্ধিত সভার নামে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সালাউদ্দীন সরকার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দুইজনের নাম ঘোষণা করে। এটি ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। তিনি আরো জানান, চাঁপই শাখা ছাত্রলীগের কমিটি জেলা ছাত্রলীগের আওতাধীন, এই কমিটি ঘোষণা দেয়ার এখতিয়ার উপজেলা ছাত্রলীগের নেই। তিনি এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মহিউদ্দিন জানান, ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত শাকিলের চাচাতো ভাই মুকবুল শাকিলের পক্ষে গত শনিবার রাতে ৫ জনকে অভিযুক্ত করে কচুয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের আলোকে তদন্ত চলছে। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার বিকেলে স্থানীয় সাংসদ ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ গ্রুপের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মাঝে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাগ্বিত-া হয়। এক পর্যায়ে উভয় গ্রুপের নেতা-কর্মী চরম উত্তেজিত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত ৪ জন আহত হয়েছে। আহতরা হচ্ছেন : চাঁদপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাকিল হোসেন (২১), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি (২২), সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম (২০) ও শেখ সজিব (২২)। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় মোঃ শাকিলকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি চলে যান।