প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে সাক্ষাৎকারে শাহজালাল মিশন
আমাদের দলে চাঁদপুরে কোনো গ্রুপিং নেই, রয়েছে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা
চাঁদপুর জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি খুব শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে বলে আমার বিশ্বাস। কেন্দ্রীয় কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে তা অনুমোদন করে দেবেন-এটা আমার প্রত্যাশা
চাঁদপুর সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও চাঁদপুর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ শাহজালাল মিশন বলেছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এদেশের জনগণের দল, একটি বিশাল রাজনৈতিক সংগঠন। দেশের প্রধান বিরোধী দল। দীর্ঘদিন রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। তাই এ বিশাল রাজনৈতিক দলে পদণ্ডপদবীর জন্য নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে বা থাকতে পারে। কিন্তু দলের বৃহৎ স্বার্থে আমাদের দলে চাঁদপুরে কোনো গ্রুপিং নেই, রয়েছে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা। আমরা সবাই খালেদা জিয়া এবং আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক জিয়ার নেতৃত্বে এক ও ঐক্যবদ্ধ।
|আরো খবর
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠকে দেয়া তার সাক্ষাৎকারে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। তার পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকার নি¤েœ তুলে ধরা হলো :
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : জেলা বিএনপির সম্মেলন হয়েছে কবে?
মোঃ শাহজালাল মিশন : চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : এ সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে কবে নাগাদ?
মোঃ শাহজালাল মিশন : এ বিষয়টি সম্পূর্ণ চাঁদপুর জেলা ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির বিষয়। এটি নিয়ে আমার কিছু জানা নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, জেলা বিএনপির সম্মেলনে পুরো জেলার নেতৃবৃন্দ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে গোপন ভোটে চাঁদপুর জেলা বিএনপির দুঃসময়ের কাণ্ডারী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক ভাইকে সভাপতি ও অ্যাডঃ সলিম উল্লাহ সেলিম ভাইকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার পর এই দুই নেতা জেলার অধীনস্থ সকল ইউনিটকে নিয়ে বসে কিভাবে একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা যায় এমন মতামত আমাদের কাছ থেকে নিয়ে আমার জানামতে কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তরে একটি প্রস্তাবিত কমিটি জমা দিয়েছেন। এর বাইরে আমার কিছু জানা নেই।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : বিএনপির কোনো শাখার সম্মেলন সম্পন্ন হবার কতদিন পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠাতে হয়? আর প্রেরিত কমিটি কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদন দিতে হয় কতদিনে? এ বিষয়ে বিএনপির গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্ট কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা আছে কি?
মোঃ শাহজালাল মিশন : আমার জানামতে বিএনপির গঠনতন্ত্রে এ ধরনের কোনো নিয়মণ্ডনীতি নেই বা গঠনতন্ত্রে কোনো নির্দেশনা দেয়া নেই। আমি যতটুকু জানি এবং আমার রাজনৈতিক জীবনে দেখেছি, যত দ্রুত সম্ভব সম্মেলন হওয়ার পর পরই নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ফলে নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতৃবৃন্দ উজ্জীবিত হয়ে সংগঠনের স্বার্থে কাজ করেন। চাঁদপুর জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি খুব শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে বলে আমার বিশ্বাস। কেন্দ্রীয় কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে তা অনুমোদন করে দেবে-এটা আমার প্রত্যাশা।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনারা নানা ইস্যুতে ধারাবাহিক আন্দোলন করছেন। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন না ঘোষণা দিয়ে কার্যত সরকার পতনের আন্দোলনই করছেন। আন্দোলনের সাফল্যের ব্যাপারে কতোটুকু আশাবাদী?
মোঃ শাহজালাল মিশন : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এদেশের জনগণের দল। তাই বিএনপির এই আন্দোলন আমাদের দলের স্বার্থে নয়, দেশ ও জনগণের স্বার্থের জন্য আন্দোলন। অবৈধ ফ্যাসিবাদ, রাতের আঁধারে ভোট ছিনতাইকারী ও ভোটারবিহীন সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের এ আন্দোলন। যেটি এখন এক দফার দাবি সম্বলিত আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
আমাদের এ আন্দোলনে এই সরকার রাষ্ট্রীয় যন্ত্র পুলিশ বাহিনী দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তারা আমাদের আন্দোলনকে ভয় পেয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে। কিন্তু আমাদের সাথে দেশের জনগণ রয়েছে, ফলে সরকারের সকল পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে। এই কারণে সরকার এখন আমাদের সভা-সমাবেশ বা কর্মসূচিতে নানা অজুহাত দেখিয়ে ব্যাহত করার চেষ্টা করেও সফল হচ্ছে না। আমরা বরাবরই বলছি, আমাদের মূল চালিকা শক্তি দেশের জনগণ। আমরা এই সরকারের অধীনে ও সরকারের আজ্ঞাবহ গঠিত এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিবো না। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি এদেশের জনগণকে নিয়ে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে আন্দোলনের সফলতা নিয়ে অবশ্যই ঘরে ফিরবে। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত ইনশাআল্লাহ।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : জেলা বিএনপির মধ্যে কোনো গ্রুপিং আছে বলে মনে করেন? উপজেলা পর্যায়ের কী অবস্থা? সারাদেশের সর্বত্র গ্রুপিং না মিটিয়ে আপনাদের আন্দোলনের সাফল্য কি পুরোপুরি আদায় করতে পারবেন ?
মোঃ শাহজালাল মিশন : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এদেশের জনগণের দল। একটি বিশাল রাজনৈতিক সংগঠন। দেশের প্রধান বিরোধী দল। দীর্ঘদিন দেশের রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। তাই এ বিশাল রাজনৈতিক দলে পদণ্ডপদবীর জন্য নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে বা থাকতে পারে। কিন্তু দলের বৃহৎ স্বার্থে আমাদের দলে চাঁদপুরে কোনো গ্রুপিং নেই, রয়েছে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা। আমরা সবাই খালেদা জিয়া এবং আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক জিয়ার নেতৃত্বে এক ও ঐক্যবদ্ধ।
চাঁদপুর জেলা বিএনপি একটি ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠন। অতএব গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছবো। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে আগের মতো রূঢ় নয় কেন?
মোঃ শাহজালাল মিশন : আপনার প্রশ্নটি সঠিক নয়, এটি অমূলক এবং একটি অবান্তর কথা। কারণ এই সরকারের রাষ্ট্রযন্ত্র পুলিশ বাহিনীকে যেখানে সেখানে ব্যবহার করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন এবং এখনো টিকে আছে। সরকারের পুলিশ বাহিনী (যাদেরকে এদেশের জনগণ বলে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন) বিভাগীয় শহরগুলোতে বিএনপির জনসভায় যাওয়া নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে এবং দুদিন পূর্বে পরিবহন বন্ধ করে, সেই বাহিনীর পক্ষে কখনো বিএনপির প্রতি ভালো আচরণ সম্ভব নয়।
বিএনপি একটি সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল এবং শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী। তাই আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাস করি। আমাদের ওপর পুলিশ বাহিনী হামলা করলেও আমরা প্রতিহত না করায় চুপচাপ দেখা যায়।
সমাবেশে যাওয়া নেতা-কর্মীদের পুলিশের শেল্টারে আওয়ামী লীগও হামলা চালিয়ে বাধা দিচ্ছে, আহত করছে। মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে। এরপরও কি বলবেন, পুলিশ রূঢ় আচরণ করছে না?
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : উপরোক্ত প্রশ্নমালার বাইরে আপনার কোনো বক্তব্য থাকলে উপস্থাপন করুন।
মোঃ শাহজালাল মিশন : বিএনপির আন্দোলন দেশ রক্ষার আন্দোলন। জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা, দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য এই অবৈধ সরকারের পতন আন্দোলন। এটি আন্দোলন নয় একটি চলমান যুদ্ধ। এখন আমরা নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যে যুদ্ধে অবতীর্ণ আছি। এ সরকারের পতন ঘটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় এই যুদ্ধের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অতএব এ যুদ্ধে বিজয় আমাদের অতি সন্নিকটে। আমরা বিজয়ী হবোই ইনশাআল্লাহ।
উল্লেখ্য, মোঃ শাহজালাল মিশন ১৯৮৭ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ক্লাস কমিটির সভাপতি হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি, ১৯৮৯ সালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চাঁদপুর সদর উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯০ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সাল থেকে ৯৭ সাল পর্যন্ত জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক, ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত জেলা যুবদলের সভাপতি, ২০১৯ সালে চাঁদপুর সদর উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে সভাপতি ও ২০২১ সালের সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদে পুনঃ নির্বাচিত হন।