শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪  |   ৩১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

পহেলা অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস

বিশ্বব্যাপী প্রবীণ পরিচর্যা ও সহায়তা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ

হাসান আলী
বিশ্বব্যাপী প্রবীণ পরিচর্যা ও সহায়তা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ

প্রত্যেক মানুষের মর্যাদার সাথে সমাজে বেঁচে থাকার অধিকারই মানবাধিকার। বার্ধক্যে এসে মর্যাদাপূর্ণ জীবন খুবই প্রয়োজনীয় বিষয়। সমাজে মর্যাদাহীনভাবে বেঁচে থাকা কোনো মানুষেরই কাম্য নয়। শুধুমাত্র বয়সের কারণে মানুষকে মর্যাদা দিতে হবে এমন কথা নিয়ে নানান রকমের বিতর্ক সমাজে বিদ্যমান রয়েছে। মর্যাদা সাধারণত দুই ধরনের। একটি অর্জিত আরেকটি আরোপিত। অর্জিত মর্যাদা হলো সমাজের কল্যাণে, মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে, রোগ-বালাই, দুঃখ-দুর্দশা থেকে পরিত্রাণ পেতে ব্যক্তির সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে প্রাপ্ত। আর আরোপিত মর্যাদা হলো ব্যক্তিকে পরিবার, সমাজ, সম্প্রদায়, রাষ্ট্র বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণে অর্পিত দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে প্রাপ্ত। যিনি যৌবনে পরিবারের, সমাজের কল্যাণে যথাযথ ভূমিকা পালন করেন নি কিংবা অর্পিত দায়িত্ব পালনে ন্যায়নিষ্ঠ ছিলেন না তার বার্ধক্যে এসে মর্যাদা পাওয়া কঠিন। অর্থ-বিত্ত, পদ-পদবি, ক্ষমতা, দাপট, দখল বাণিজ্য, ভয়ভীতির মাধ্যমে অর্জিত মর্যাদা ক্ষণস্থায়ী।

জাতিসংঘের আহ্বানে পহেলা অক্টোবর সারা পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালিত হয়। এবারের আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো, মর্যাদাপূর্ণ বার্ধক্য : বিশ্বব্যাপী প্রবীণ পরিচর্যা ও সহায়তা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ।বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি প্রবীণের বসবাস। দিন দিন বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। একটা সময়ে শিশুর চাইতে প্রবীণের সংখ্যা বেশি হয়ে যাবে। তখন বিপুল সংখ্যক প্রবীণের সেবা-যত্ন, চিকিৎসা বড়ো ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। প্রবীণের বয়স বাড়তে থাকলে দীর্ঘস্থায়ী অনিরাময়যোগ্য রোগের সেবা-যত্নের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রশিক্ষিত নিবেদিত জনবলের ঘাটতি এবং পেশার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব প্রবীণ পরিচর্যাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। প্রবীণের পরিচর্যা ও সহায়তা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। প্রবীণ পরিচর্যা ও সহায়তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির ভূমিকা প্রধান বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। কারণ বার্ধক্যের চ্যালেঞ্জ মূলত ব্যক্তিকে গ্রহণ করতে হয়। একটি সক্রিয় স্বস্তিদায়ক, শান্তিপূর্ণ বার্ধক্য যাপনের জন্যে ব্যক্তিকে স্বাস্থ্য বীমা, সর্বজনীন পেনশন, ব্যক্তিগত সঞ্চয়, শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন, পরিমিত সুষম খাদ্যাভ্যাস, বিনোদন, সেবাকর্মীর সেবা গ্রহণের মানসিকতা, সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখা, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে হবে।

বার্ধক্য হলো ব্যক্তির জীবনে সর্বোচ্চ অর্জন। জীবনের শেষ ধাপে পৌঁছাতে অনেকেই পারেন না। প্রবীণ ব্যক্তিকে নিজের চিকিৎসা, রোগ নির্ণয়, প্রতিষেধক টিকা, নার্সিং গ্রহণের জন্যে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা সমর্থন পাবার মতো পরিবেশ তৈরি করতে ব্যক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবারের সদস্যদের সমর্থন এবং সহযোগিতা নিয়ে চিকিৎসা সেবা পেয়ে সুস্থ, স্বাভাবিক, স্বাধীন জীবন যাপনের চেষ্টা করতে হবে।

ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রবীণ হাসপাতাল, নার্সিং হোম, ডে কেয়ার সেন্টার, হোম কেয়ার সার্ভিস, প্যালিয়েটিভ কেয়ার, সেবা কর্মী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র , প্রবীণ ক্লাব ইত্যাদি গড়ে তোলা যায়। ব্যক্তির বিশ্বাস, ইচ্ছা, মর্জি, আকাঙ্ক্ষা থেকে অতীতে বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এবং ভবিষ্যতে গড়ে ওঠার সম্ভবনা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান সাশ্রয়ী মূল্যে কিংবা ন্যায্য মূল্যে সেবা দিয়ে প্রবীণকে ভালো করে তুলতে পারে। এমনকি হাসপাতালের বাইরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। স্বাস্থ্য সেবা এবং সামাজিক যত্ন দুটো আলাদা বিষয়। স্বাস্থ্য সেবার মধ্যে চিকিৎসা, রোগ নির্ণয়, রোগ নিরাময়, নার্সিং গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক যত্ন স্বাস্থ্য সেবার পরিপূরক না হলেও ব্যক্তির জীবন কে স্বস্তিদায়ক, শান্তিপূর্ণ করতে বড়ো ধরনের ভূমিকা পালন করে। পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক যোগাযোগ সম্পর্ক সুসংহত করতে হবে। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটানো যাবে না। পারস্পরিক বন্ধনকে মজবুত করতে পরিবারের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে পারিবারিক সম্পর্ক যত্নের সাথে পালন করতে পারলে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে। পরিবার সুসংহত হলে প্রবীণদের পরিচর্যা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। যাদের দৈনন্দিন কাজগুলো করতে অসুবিধা হয় কিংবা স্বাধীনভাবে নিজের প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারে না তাদের জন্যে সামাজিক যত্ন জরুরি হয়ে পড়ে। যেসব প্রবীণ নানা কারণে একাকী হয়ে পড়েছেন কিংবা একাকী থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, তারা নিজেদের অক্ষমতার দরুণ কাঙ্ক্ষিত পরিচর্যা পেতে বিলম্ব হচ্ছে অথবা পাচ্ছে না তাদেরকে সামাজিক পরিচর্যার আওতায় আনা জরুরি। সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে কিংবা পেশাদার সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা ক্রয় করে চাহিদা পূরণ করতে হবে। স্থানীয় সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান প্রবীণ সেবাকে সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা গ্রহীতার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যে সকল সেবাগ্রহীতা সেবা মূল্য পরিশোধ করতে পারবে না তাদের জন্যে তহবিল গঠন করতে হবে।স্থানীয় সরকার বিভাগ নির্দিষ্ট একটা এলাকায় কত প্রবীণ রয়েছে এবং তাদের আর্থ সামাজিক তথ্য সংরক্ষণ করবে। ঝুঁকিপূর্ণ প্রবীণদের বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে সেবা অব্যাহত রাখতে হবে। দুঃস্থ প্রবীণদের জন্যে তহবিল গঠন করে সেবা অব্যাহত রাখার সুযোগ রাখা উচিত। রাষ্ট্র প্রত্যেক প্রবীণের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করবে। দুঃস্থ, অসহায় প্রবীণদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচর্যার ব্যবস্থা থাকবে। প্রবীণদের ভরণপোষণ, চিকিৎসা, বাসস্থান, বিনোদনের দায়িত্ব পালন করবে। অসহায়, দরিদ্র প্রবীণ পরিচর্যার জন্যে যদি কারো দয়া, করুণা, কৃপা প্রার্থী হন, তবে তার মর্যাদাহানি হবে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব ন্যায়ভিত্তিক সমাজ নির্মাণ করে প্রবীণ পরিচর্যা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা। পরিচর্যার জন্যে বড়ো বড়ো শহরগুলোতে পাঁচশ' শয্যার প্রবীণ হাসপাতাল, নার্সিং হোম, সেবা কর্মী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ডিমেনশিয়া ভিলেজ, প্যালিয়েটিভ কেয়ার নির্মাণ করা যেতে পারে। এসব জায়গায় সামর্থ্যবান প্রবীণরা সেবা মূল্য পরিশোধ করে মানসম্মত সেবা গ্রহণের সুযোগ পাবে।

হাসান আলী : প্রবীণ বিষয়ে লেখক, গবেষক ও সংগঠক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়