প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২১, ০০:০০
কচুয়ার টোল বাজার এবং পিয়নের দাপট
এক জজের এক পিয়ন ছিলো, যে পয়সা কামানোর ধান্ধায় কূট কৌশলের আশ্রয় নিতো। রায়ের জন্যে অপেক্ষমান যে কোনো মামলার বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতো। বাদী পক্ষকে বলতো, রায় আপনার পক্ষে আনতে হলে জজ সাহেবকে কিছু টাকা দিতে হবে, যদি শেষ পর্যন্ত রায় আপনার পক্ষে না আসে তাহলে নিশ্চিতভাবে টাকা ফেরত পাবেন। অনুরূপ কথা বিবাদী পক্ষকেও বলতো। রায়ের পর সন্তুষ্ট পক্ষের টাকা সে আত্মসাৎ করতো, আর অসন্তুষ্ট পক্ষের টাকা ফেরত দিতো। জজ সাহেব তাঁর বিশ্বস্ত এই পিয়নের এমন কাণ্ডের কথা মোটেও জানতেন না। প্রবাদে আছে, দশদিন চোরের, একদিন গৃহস্থের। ঠিকই একটি মামলার একটি পক্ষের সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে একদিন এই পিয়নের কূট কৌশল ধরা পড়লো। জজ সাহেবকে সেটা জানানো হলো এবং ওই পিয়ন চাকুরি হারালো।
|আরো খবর
আমাদের সমাজে প্রবীণদের মুখে একটি কথা আজও শোনা যায় এবং সেটি হচ্ছে, ডিসির চেয়ে তাঁর পিয়নের দাপট বেশি। এর সত্যতাও ছিলো। যেমন, কেউ একজন ডিসি (ডেপুটি কমিশনার তথা জেলা প্রশাসক)-এর সাথে দেখা করতে আসলেন। পোশাকে আশাকে লোকটিকে যদি অতি সাধারণ এবং ডিসি অফিসে নিতান্তই আগন্তুক মনে হতো, তাহলে তাকে দূর থেকে থামিয়ে দিয়ে বলা হতো, দাঁড়ান, ডিসি স্যার ব্যস্ত, অপেক্ষা করুন। এদিকে সাক্ষাৎপ্রার্থী অপেক্ষা করছেন তো করছেনই, সাক্ষাতের জন্যে অনেকে বিশেষ করে কেতা দুরস্তরা ডাক পাচ্ছেন, তিনি কিন্তু ডাক পাচ্ছেন না। অপেক্ষার যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়ে অগত্যা তিনি ফিরে যেতেন, পরদিন আসতেন। এমতাবস্থায় পিয়নদের মধ্যে কেউ একজন ভালো মানুষি দেখাতে দালাল সেজে বলতো, আপনি কিচ্ছু বুঝেন না, ওই পিয়ন বেটাকে ক’টা টাকা দিলেই তো হয়, সে দ্রুত ডিসি সাহেবের সাথে আপনার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেবে। বর্তমানে পিয়নরা এসব আগের মতো করতে পারে না। কারণ, ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় অধিকাংশ ডিসি সাহেব সাক্ষাৎ প্রার্থী অপেক্ষমানদের দেখে তাঁর সিএ (গোপনীয় সহকারী)-এর মাধ্যমে ডেকে নেন। এছাড়া আগে আসলে আগে সাক্ষাৎ পাবেন ভিত্তিতেও সাক্ষাৎ প্রার্থীরা এখন জেলা প্রশাসকের সাক্ষাৎ পাওয়া তুলনামূলকভাবে পূর্বের চেয়ে সহজ হয়ে গেছে।
পিয়নদের এখন এমএলএসএস বা অফিস সহায়ক বলা হয়। এরা শুধু জজ, ডিসি নয়, অন্য যে কোনো কর্মকর্তার খুব কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পায় এবং সে সুবাদে প্রিয়ভাজন কিংবা বিশ্বস্ত হয়ে উঠে। এমতাবস্থায় তারা বৈধ/অবৈধ সুবিধা আদায়ের ধান্ধায় লিপ্ত হয়। যেমনটি কচুয়ার ভূমি অফিসের পিয়ন কাউছারের বিরুদ্ধে লক্ষ্যণীয়। তিনি তার পিতা ছিদ্দিকুর রহমানসহ আরো কয়েক ব্যক্তির নামে কচুয়া বাজারের যে উন্মুক্ত স্থানটি টোলের মাধ্যমে এতোদিন পাট ও ছাগল বেচাকেনার জন্যে ব্যবহৃত হতো, সেটি লীজ নেয়ার পাঁয়তারায় লিপ্ত হয়েছেন। পরোক্ষভাবে তাঁর পিয়নের পক্ষ নিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) একি মিত্র বলেছেন, কেউ যাতে অবৈধভাবে উক্ত স্থানটি দখল করে না নিতে পারে সেজন্যে লীজ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে কচুয়া পৌরসভার মেয়র জেলা প্রশাসকের নিকট পত্র প্রেরণ করেছেন, যার অনুলিপি স্থানীয় সাংসদ এবং ইউএনওকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া উক্ত লীজ প্রস্তাবে জনমনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
আমরা চাঁদপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসককে একজন স্থিতধী হিসেবেই জানি। তিনি তাঁর অফিসে প্রতি সপ্তাহে গণশুনানি করেন, প্রকৃত বিষয় জানার চেষ্টা করেন। তিনি কচুয়ার উক্ত টোল বাজার লীজ দেয়ার বিষয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতি জানার জন্যে যা যা করণীয় সেটাই করবেন এবং জনঅসন্তোষ নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে বিশ্বাস রাখি।