প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
আমাদের দেশের পুঁজি বাজারে প্রায়শই স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগকারীগণের হতাশার কথা শুনতে পাই। পুঁজি বাজারের বড় বড় বিনিয়োগকারীগণের কৌশলের কাছে প্রায়শই হার মানতে হয় স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগকারীগণের। আমরা জানি, মার্কেট প্লেয়ারগণ তাদের পুঁজি নিরাপদ রাখার জন্যে বিভিন্ন ব্যবসায়িক কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। বিশেষ করে তাদের কয়েক স্তরের বিনিয়োগ ফান্ড থাকে। অন্যদিকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীগণ পুঁজিস্বল্পতায় তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পেরে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগকারীগণ যদি নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখেন এবং নিজের বিনিয়োগ কৌশলে পরিবর্তন আনেন তাহলে বাজার থেকে ভালো মুনাফা ঘরে তুলতে পারবেন।
* বিনিয়োগকারী হয়ে পুঁজি বাজারে অবস্থান করতে হবে, ব্যবসায়ী হয়ে নয়। অর্থাৎ পণ্যের মতো ব্যবসায়িক চিন্তা-ভাবনা পরিহার করতে হবে।
* দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারী হতে হবে। স্বল্পমেয়াদী চিন্তা না করে কোম্পানি ভেদে ৪৫ থেকে ১২০ দিনের জন্যে বিনিয়োগ করতে হবে।
* এন্ট্রি পয়েন্ট নির্ধারণপূর্বক বিনিয়োগ করতে হবে। যে সকল শেয়ার আপট্রেন্ডে ঝুলে গেছে তাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
যে সকল শেয়ারের মূল্য বটম লাইনে আছে, কোম্পানির স্পর্শকাতর তথ্য পর্যালোচনাপূর্বক তাতেই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
* স্টপ লসের ব্যাপারে স্পষ্ট ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে, অন্যথায় ক্ষতির মাত্রা বড় হবে।
* বড় পুঁজির কোম্পানিতে বিনিয়োগ না করে স্বল্প ও মাঝারি পুঁজির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে।
* প্রফিট টেক করা : দ্রুত মার্কেট থেকে প্রফিট সংগ্রহ করুন। তবে টার্গেট মূল্যে না আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন এবং আসার সাথে সাথেই প্রফিট গ্রহণ করুন। এতে করে আপনার পোর্টফোলিও-এর গ্রোথ বাড়বে।
* বর্তমান বাজারের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। কোন্ কোন্ সেক্টরের দিকে পাবলিক সেন্টিমেন্ট ধাবিত হচ্ছে তা জানা ও বুঝার চেষ্টা করতে হবে। অর্থাৎ মার্কেটের স্পর্শকাতর তথ্য সম্পর্কে সবসময় আপডেট থাকতে হবে।
* কোনো শেয়ারে পজিশন নেয়ার আগে কোম্পানির ফিন্যান্সিয়াল তথ্য সম্পর্কে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিতে হবে। তাছাড়াও কোথায় এবং কেনো এন্ট্রি দিচ্ছেন তা নিশ্চিত হয়ে নিন।
* পজিশন নেয়ার পর অথবা টেনশন না করে আপনার বিশ্লেষণকৃত তথ্য উপাত্তের ওপর আস্থা রেখে অপেক্ষা করুন। সফলতা আসবেই, এতে করে আপনার নিজের প্রতি আস্থা বাড়বে।
* ধৈর্য ধারণ করার অভ্যাস করুন। শেয়ার বাজারে ধৈর্যের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায় অধৈর্যরাই ভুল পথে পা বাড়ায় ও ক্ষতির সম্মুখীন বেশি হয়।
* সুশৃঙ্খলভাবে বাজারে অংশ নিন। বিশৃঙ্খলভাবে বিনিয়োগ করে ক্ষতির সম্মুখীন না হয়ে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে নির্দিষ্ট সংখ্যক শেয়ারে তথ্য পর্যালোচনা সাপেক্ষে নিশ্চিত হয়ে কম সংখ্যক ট্রেডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করলে সফলতা আসবেই।
* দুশ্চিন্তা আপনাকে অনিয়ন্ত্রিত ট্রেড করতে সহায়তা করে, তাই দুশ্চিন্তা পরিহার করে নিয়ন্ত্রিত ও কম সংখ্যক ট্রেডের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করতে হবে। সিউর শট নিতে হবে।
* তথ্য প্রবাহ : বাতাসে ভাসা খবর বিশ্বাস করবেন না। আপনি চোখ ও কান খোলা রাখলে চারিদিকে শুধু ভুয়া খবর পাবেন। এতে আপনার ক্ষতি হবার সম্ভাবনাই বেশি। তাই নির্ভরযোগ্য ও তথ্যভিত্তিক খবরে বিশ্বাস রাখবেন ও কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন।
* শিক্ষা : সঠিক শিক্ষাগ্রহণ, শিক্ষার বিকল্প নেই। একজন সফল বিনিয়োগকারী হতে হলে কোম্পানির সকল তথ্য সম্পর্কে জানতে হবে ও বিনিয়োগের জন্যে ভালো কোম্পানির এনালাইসিস জানতে হবে।
আলেচিত বিষয়গুলোর ওপর যদি আমরা গুরুত্বারোপ করি ও বিনিয়োগের পূর্বে কোম্পানির সকল আর্থিক বিষয় বিশ্লেষণ করি, বর্তমান বাজারের গতিপ্রকৃতি অনুধাবন করি, তাহলেই ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য গ্রোথ সম্পর্কে অনুমান করতে পারবো। সংগৃহীত তথ্যাদি যদি সঠিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ পরিকল্পনা করতে পারি, তাহলে একজন স্বল্প বিনিয়োগকারী বাজার থেকে সীমিত সংখ্যক ট্রেডের মাধ্যমে তার কাক্সিক্ষত মুনাফা সংগ্রহ করতে পারবে।
লেখক : মোঃ শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার, লেখক ও কলামিস্ট।
হেড অব অপারেশন, ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি, চট্টগ্রাম।
ই-মেইল : [email protected]