সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৫, ০২:৫৭

ভূ-রাজনৈতিক নাট্যমঞ্চে হাইফা!

ইরানের হামলা, ইসরায়েলের লৌহ প্রতিরক্ষা ও আদানির স্থিতাবস্থা

বিশেষ প্রতিবেদক: মো.জাকির হোসেন
ভূ-রাজনৈতিক নাট্যমঞ্চে হাইফা!
ছবি : সংগৃহীত

২০২৫ সালের জুন মাসে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এক উত্তপ্ত অধ্যায় যুক্ত হয়, যখন ইরান ব্যাপক পরিসরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়। এই হামলার অন্যতম লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের হাইফা পোর্ট, যা বর্তমানে ভারতের আদানি গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন

তবে ব্যাপক গুজব সত্ত্বেও বাস্তবতা ভিন্ন। অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের Iron Dome প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা ধ্বংস হয় এবং হাইফা পোর্টে বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

হাইফা পোর্ট: লক্ষ্যবস্তু হলেও অক্ষত

হামলার সময় ইরান প্রায় ২০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন উৎক্ষেপণ করে। হাইফা উপকূলে অবস্থিত Tamra গ্রামে ৪ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। কিন্তু হাইফা পোর্টের কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল।

আদানি গ্রুপের মুখপাত্র স্পষ্টভাবে জানান: “Reports that Haifa Port was destroyed are false. Operations are normal.”

সুরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা

ইসরায়েল তাদের উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে এই হামলা প্রতিহত করে। Iron Dome, David’s Sling ও Arrow-3 এর সম্মিলিত ব্যবহারে ইরানী ক্ষেপণাস্ত্র গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস হয়।

বিশেষ করে হাইফা অঞ্চলে তিন স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ছিল: অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম, ব্যালিস্টিক শিল্ড এবং বাঙ্কার ব্যবস্থা।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বাণিজ্য

ভারত সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করলেও আদানি গ্রুপ জানায়, হাইফা পোর্টে ৮টি জাহাজ নির্ধারিত সময় অনুযায়ী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে এবং ইরানের এ ধরনের হামলার সমালোচনা করে।

হাইফা পোর্টের বাণিজ্যিক গুরুত্ব

হাইফা পোর্ট ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এর বার্ষিক কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা প্রায় ১.২ মিলিয়ন TEU। মূল রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে কৃষিজ পণ্য, উচ্চ প্রযুক্তি সামগ্রী ও রাসায়নিক পদার্থ।

২০২২ সালে আদানি গ্রুপ ও ইসরায়েলি গ্যাডট গ্রুপ যৌথভাবে বন্দরের মালিকানা গ্রহণ করে।

সংঘাতের মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট

এই সংঘাতের মধ্যে দিয়ে পরিষ্কার হয় যে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর এবং বাণিজ্যিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখার সক্ষমতা রয়েছে।

যদিও হাইফা পোর্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, তবে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সংঘাতে এটি আরও উন্নত নিরাপত্তার দাবি রাখে। আদানি গ্রুপ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হতে পারে।

উপসংহার

ইরানের এই নজিরবিহীন হামলা আপাতত সামলাতে সক্ষম হয়েছে ইসরায়েল। হাইফা পোর্টের অক্ষত থাকা শুধু ইসরায়েলের নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্যও স্বস্তির বার্তা।

এটি ইঙ্গিত দেয়, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা এবং কৌশলগত পরিকাঠামোই যেকোনো দেশকে সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে।

তথ্যসূত্র

- Economic Times
- Washington Post
- The Times UK

- The Australian

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়