প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৫, ০৯:০০
উদ্যোগ নিলেই হয়, কেউ না কেউ সহায়তা করেই-

দুর্দশাগ্রস্ত খাজুরিয়া বাজারের সড়ক সংস্কার করলো স্বেচ্ছাসেবীরা। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে এমন একটি সংবাদ পরিবেশন করেছেন ফরিদগঞ্জ ব্যুরো ইনচার্জ প্রবীর চক্রবর্তী। তিনি লিখেছেন, সংস্কারের অভাবে ক্ষতবিক্ষত ফরিদগঞ্জ-ব্রহ্মপাড়া সড়কের গুরুত্বপূর্ণ খাজুরিয়া বাজারের ওপরের সড়কটি স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করলেন আইডিয়াল সমাজসেবা ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা। শুক্রবার (১৩ জুন ২০২৫) তারা সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড়ো বড়ো গর্ত ইট-বালু দিয়ে ভরাট করে যানচলাচল উপযোগী করে তোলেন।
আইডিয়াল সমাজসেবা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক পারভেজ মোশারফ জানান, ফরিদগঞ্জ-ব্রহ্মপাড়া সড়কের খাজুরিয়া বাজারের এই অশংটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না করায় এটি যানচলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। আমরা মানুষের স্বার্থে রাস্তা সংস্কার কাজ করার জন্যে ঈদের সময় থেকে ক্যাম্পেইন শুরু করি। এতে স্থানীয় গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের হোগলী গ্রামের গর্বিত সন্তান খোরশেদ গাজী এগিয়ে আসেন। তাঁর অর্থায়নে আমরা তিন ট্রাক ইট ও বালু সংগ্রহ করি। পরে আমাদের সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেরা দুদিন পরিশ্রম করে খাজুরিয়া বাজারের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেন।
স্থানীয়রা জানান, সড়কের খাজুরিয়া বাজার এলাকার রাস্তার বড়ো বড়ো গর্ত ও খানাখন্দের কারণে পথচারী ও যানবাহন চলাচলে চরম দুর্ভোগ ও ঝুঁকি ছিলো। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে প্রায় হাঁটু পানি জমে এই রাস্তা আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠতো। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের নিরলস প্রচেষ্টায় রাস্তার গর্তগুলো ভরাট করে চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। এতে করে পথচারী, স্কুলগামী শিক্ষার্থী, রিকশা, অটো, পণ্যবাহী গাড়িসহ সকলের স্বস্তির নিঃশ্বাস মিলেছে। কয়েকজন অটোরিক্সা চালক জানান, আগে গর্তে পড়লে গাড়ির ক্ষতি হতো। আজ রাস্তা মেরামত হওয়ায় অনেক উপকার হলো। কয়েকজন পথচারী বলেন, প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে বাজারে যাই। বর্ষায় পানি জমে থাকতো, এখন কিছুটা হলেও হাঁটাচলার সুবিধা হলো।
মনুষ্য সমাজে উদ্যোক্তা বড়ো দরকার। যে কোনো ভালো কাজে নিরলস উদ্যমী উদ্যোক্তা পাওয়া গেলেই হলো, সেটি না হয়ে পারে না। যদি মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, প্যাগোডা তথা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা বলি, তাহলে বলতে হবে, সেগুলোর অন্তত ৯৫ ভাগই কারো না কারো একক/যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছে, আর শেষ হয়েছে সম্মিলিতভাবে অনেকের অংশগ্রহণে। মুক্তিযুদ্ধোত্তর ১৯৭২ সাল থেকে পরবর্তী ক’বছর আমাদের দেশে রাস্তা বানানো ও খাল খননের কাজ হয়েছে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নদী, খাল ও পুকুরসহ বিভিন্ন জলাশয়ের কচুরিপানা পরিষ্কারের কাজও হচ্ছে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে। কোথাও প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কোথাও জনপ্রতিনিধি উদ্যোগ নিচ্ছে তো কচুরিপানা পরিষ্কার হয়ে গেছে। প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রিতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আমাদের দেশে রাস্তা নির্মাণ, মেরামত, খাল খনন ও কচুরিপানা পরিষ্কারে বরাদ্দ পাওয়া গেলেও তার সুষ্ঠু ব্যবহারের গ্যারান্টি থাকে না বললেই চলে। বিভিন্ন অফিসে পার্সেন্টেজ প্রদান, ম্যানেজ করাসহ নানা গ্যাঁড়াকলে পড়ে ঠিকাদারের ব্যবসা হয়, প্রকৌশলীসহ অন্যদের পকেট ভারী হয়, আর অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংবাদের উপজীব্য হয়, যাতে নেতিবাচকতার প্রাধান্যই থাকে বেশি। এমতাবস্থায় স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে কিছু করার উদ্যোগেই থাকে তড়িৎ গতি, আন্তরিকতা ও দৃষ্টান্ত সৃষ্টির ব্যাপক প্রয়াস। যেমনটি ফরিদগঞ্জের আইডিয়াল সমাজসেবা ফাউন্ডেশনের মধ্যে দেখা গেছে। তারা খাজুরিয়া বাজার সড়ক মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে তো, খোরশেদ গাজী নামে এক ব্যক্তি প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ নিয়ে এগিয়ে এসেছে। আর ফাউন্ডেশনটির সদস্যরা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সড়ক মেরামতের কাজ শেষ করে ফেললো। এতে আবারো প্রমাণিত হলো, কেউ জনস্বার্থে কোনো উদ্যোগ নিলেই হলো, চিত্তবান/বিত্তবান কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেই।