সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

শ্রমিকরা বুঝলো অবশেষে, তবে অনেক দেরিতে-

শ্রমিকরা বুঝলো অবশেষে, তবে অনেক দেরিতে-
অনলাইন ডেস্ক

গত ১৮ মাসের করোনাকালে পেশাজীবীদের মধ্যে বাস-চালক ও শ্রমিকরা যতোটা অর্থকষ্টে ভুগেছে, সেটা বাস মালিকরা তো বুঝেনইনি, শ্রমিক নেতারাও বুঝেননি। বাস চালক-শ্রমিকরা দিনমজুরের কাজ, রিকশা, অটোবাইক, সিএনজি অটোরিকশা চালানোর কাজসহ জীবন বাঁচানোর তাগিদে যে কাজ পেয়েছেন, সে কাজই করেছেন। অথচ মালিক সমিতির তহবিলে এবং শ্রমিক ইউনিয়নের বিভিন্ন তহবিলে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা জমা থাকার জনশ্রুতি এবং প্রমাণ দুটোই আছে। কিন্তু করোনার দুর্দিনে চালকসহ অন্য শ্রমিকদের পাশে কেউই দাঁড়াননি। অর্ধাহারে অনাহারে ধুঁকতে থাকা অনেক শ্রমিকের ফোনকল মালিকরা তো ধরেনইনি, আর শ্রমিক নেতারাও ধরেননি।

বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকায় সরকার কঠোর বিধি-নিষেধ তথা লকডাউন উঠিয়ে দিয়েছে। এতে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডে পূর্বের ন্যায় প্রতি বাসের ট্রিপ থেকে শ্রমিকদের কল্যাণে ২০ টাকা, মৃত শ্রমিকদের প্রয়োজনে ১০ টাকা, দুঃস্থ শ্রমিক কল্যাণে ৩০ টাকা অর্থাৎ মোট ৬০ টাকা হারে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে আদায় চলছে। এর বাইরে বাস মালিক সমিতির নামে চাঁদা আদায় তো আছেই। এই চাঁদার হিসাব কতোটুকু রাখা হয় সেটার চাইতে স্বচ্ছতার সাথে নির্দিষ্ট সময়ান্তে নির্দিষ্ট সভায় সেই হিসাব উত্থাপন করা হয় না। শ্রমিকরা তাদের নেতা বানাতে যতোটা না আগ্রহী, নেতাদের সততা ও স্বচ্ছতা জানতে ততোটা আগ্রহী নয়। এর ফলে তাদের নেতারা চলেন বেপরোয়া। ভোগ-বিলাসিতা, মালিকদের সাথে আঁতাত করে ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ে এসব নেতা থাকেন ব্যস্ত। এর মধ্য দিয়ে শ্রমিকরা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে শোষিত হন, বঞ্চিত হন।

গত ৫ সেপ্টেম্বর ভোরে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের চাঁদখাঁর বাজারের পূর্বদিকে ঢাকাগামী পদ্মা এক্সপ্রেসের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে প্রচ- গতিতে ধাক্কা খায়। এতে ৯ মাসের শিশু ঘটনাস্থলেই মারা যায় এবং চালকসহ পাঁচজন মারাত্মক জখম হয়। এর মধ্যে চালক মিজান মোল্লাকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকাস্থ পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করা হয়, যেখানে রোববার রাত ১০টা ২৫ মিনিটে তিনি মারা যান। সোমবার সকালে জানাজা শেষে তাকে চাঁদপুর শহরের টেকনিক্যাল এলাকার নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। দুর্ঘটনার পর তাকে দেখতে যাননি শ্রমিক নেতারা এবং জানাজা ও দাফনেও অংশ নেননি। আর কোনো আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি তো সুদূর পরাহত। এমনটি জানতে পেরে বাস মালিক-শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন, শ্রমিক নেতাদের অফিস ভাংচুর করেন এবং ধর্মঘট পালন করেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের নামে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। অথচ এ টাকা শ্রমিকদের কল্যাণে কখনো ব্যয় করা হয় না। এ টাকা যায় তথাকথিত শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা বাবুল মিজি ও আনোয়ার মুন্সি গংয়ের পকেটে। এমনকি বাস মালিক সমিতির প্রভাবশালী কিছু নেতার পকেটেও যায়। এসব অভিযোগ নিয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সোমবার এক বৈঠকে বসেন। যে বৈঠকে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ শ্রমিক ইউনিয়নের আগামী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আদায়কৃত চাঁদ শ্রমিক, মালিক ও পৌর মেয়রের পক্ষে তিন প্রতিনিধির নামে ব্যাংকের যৌথ একাউন্টে জমা থাকার সিদ্ধান্ত দেন। এ সিদ্ধান্ত মেনে ওইদিন বিকেল থেকে চালক-শ্রমিকরা বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন।

আমরা চাঁদপুরে বাস শ্রমিকদের ৬ সেপ্টেম্বরের আন্দোলনকে যথার্থ বা ন্যায়সঙ্গত বলে মনে করি। এই আন্দোলনের প্রেক্ষপট বহু পূর্বেই রচিত হয়েছিলো। কিন্তু সেটি তারা বুঝতে অনেক দেরি করে ফেলেছেন। এর মধ্যে অনেক শ্রমিক নিগ্রহ, বঞ্চনা ও অসহযোগিতার পাহাড় বুকে চেপে হয় দমে গেছেন, নয়তো কেউ কেউ চিরতরে দম বন্ধ করে ফেলেছেন। বিপরীতে শ্রমিক নেতাদের অনেকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন এবং চেহারা, পোশাক, জীবনযাত্রায় চাকচিক্য ছাড়িয়েছেন। চাঁদপুর শ্রমিক নেতাদের লাগাম সাময়িকভাবে টেনে ধরেছেন জেলা প্রশাসক। প্রশ্ন হলো, সব সময় কি এই লাগাম টেনে ধরে রাখা সম্ভব? বস্তুত শ্রমিক নেতাদের লাগাম শ্রমিকরাতো তাদের সচেতনতা দিয়েই ধরে রাখতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়